ডিসেম্বরে জারি করা সড়ক পরিবহন বিধিমালায় নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। ১৬৭টি বিধির মাত্র পাঁচটিতে নিরাপত্তার বিষয়ে বলা হয়েছে। বাকিগুলোতে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাসংক্রান্ত। ২০২২ সালে সড়কে ৪ হাজার ৬৩৮ জন নিহত হয়েছেন; পুলিশ এ হিসাব দিলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ২৩ হাজার ১৬৬। এতে জিডিপির ৩ শতাংশের সমপরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির সংলাপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংলাপের বিষয় ছিল- ‘হাই-লেভেল ডায়ালগ অন রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যাক্ট-২০১৮ অ্যান্ড রোড ট্রান্সপোর্ট রুলস-২০২২ : রোল অব মিডিয়া’।
হার্ট ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আওয়াল রিজভীর সভাপতিত্বে এবং টিভি টুডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আহসান বুলবুলের পরিচালনায় সংলাপে হার্ট ফাউন্ডেশনের রোড সেফটি ও প্রিভেনশন প্রোগ্রামের পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁঞা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এতে বলা হয়, শুধু ৫ শতাংশ গতি নিয়ন্ত্রণ ও পরিবীক্ষণের মাধ্যমে ৩০ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি কমানো সম্ভব। সিটবেল্ট বাঁধলে মৃত্যুঝুঁকি কমে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ। শিশুদের জন্য বিশেষায়িত সিটের ব্যবস্থা করলে ৫৪ থেকে ৮০ শতাংশ ঝুঁকি কমে। সঠিক মানের হেলমেট ব্যবহারে মৃত্যুঝুঁকি ৪০ শতাংশ এবং গুরুতর আঘাতের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে বছরে সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা ২৩ হাজারের বেশি বলা হলেও গত মাসেই সড়ক পরিবহন সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী এ অঙ্কের সত্যতা নাকচ করেন। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, সড়ক পরিবহন আইনের মাত্র দুটি ধারায় নিরাপত্তার বিষয়ে বলা হয়েছে।
বিধিমালার ১২৫-এ গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও কীভাবে তা প্রয়োগ করা হবে, তা বলা নেই। সিটবেল্টের বিষয়েও বিবিধমালায় স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। সিটবেল্ট কেমন হবে, কেমন সিটবেল্টের গাড়ি আমদানি করা যাবে, তাও বলা নেই। ১৩৬ (২) বিধিতে হেলমেটের বিষয়ে বলা হলেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মানদণ্ডের কথা বলা নেই। রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা উল্লেখ করা হলেও কীভাবে তা নির্ধারণ করা হবে, বিধিমালায় তা নেই। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও আইনি সুরক্ষার কথা উল্লেখ নেই।
ডা. খন্দকার আব্দুল আওয়াল রিজভী বলেন, বিধিমালায় সড়ক নিরাপত্তা উপেক্ষিত রয়েছে। সংলাপে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থোপেডিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোনায়েম হোসেন ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম। প্যানেল আলোচক ছিলেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, বাংলাভিশন টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ বার্তা সম্পাদক আবু রুশ মো. রুহুল আমীন, নাগরিক টিভির প্রধান প্রতিবেদক শাহনাজ শারমিন ও ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি মাইনুল হোসেন।