বাবা নিখোঁজ হওয়ার পর অসুস্থ মাকে নিয়ে শুরু হয় সাবার জীবনসংগ্রাম। সাবার সেই সংগ্রামের গল্প পর্দায় তুলে এনেছেন নির্মাতা মাকসুদ হোসাইন। তাঁর সেই সিনেমা ‘সাবা’র নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মেহজাবীন চৌধুরী। বিদেশের বিভিন্ন উৎসবে প্রদর্শনের পর সিনেমাটি এবার মুক্তি পাচ্ছে বাংলাদেশে। এটি মেহজাবীন অভিনীত প্রথম সিনেমা। তবে দ্বিতীয় সিনেমা ‘প্রিয় মালতী’ মুক্তি পায় আগে। গত বছর শঙ্খ দাশগুপ্তর সে সিনেমাটির জন্যও ব্যাপক প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছেন অভিনেত্রী।

গত শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশে ‘সাবা’ মুক্তির কথা জানান মেহজাবীন। মুক্তির তারিখ উল্লেখ না করে তিনি লিখেছেন, ‘স্বপ্নের মতো এক যাত্রায় টরন্টো, বুসান, রেড সি, গথেনবার্গ, সিডনি, রেইনডান্সসহ আরও অনেক উৎসব ঘুরে, সারা বিশ্বের দর্শকের ভালোবাসা নিয়ে “সাবা” এখন প্রস্তুত নিজের মানুষদের সঙ্গে দেখা করার জন্য।’ তাঁর পোস্টে শুভকামনা জানিয়েছেন তাঁর সহকর্মী থেকে শুরু করে ভক্ত–অনুসারীরা। পরে মন্তব্যের ঘরে মেহজাবীন ভক্তদের কাছেই জানতে চান, ‘সাবা’ কবে মুক্তি দেওয়া উচিত—২৬ সেপ্টেম্বর নাকি ৩ অক্টোবর? ধারণা করা হচ্ছে, এই দুই তারিখের যেকোনো একটিতে মুক্তি পাবে সিনেমাটি।
এর আগে মেহজাবীন বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিনোদনের নানা মাধ্যমে কাজ করলেও সিনেমাটা করা হচ্ছিল না। যেখানেই যেতাম, প্রশ্নের মুখোমুখি হতাম, কেন আমি সিনেমা করছি না? তবে আমি সিনেমা করার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ভেবেছিলাম, মনের মতো করেই প্রথম সিনেমাটি করতে চাই। যে সিনেমা নিজের কাছেও স্মৃতি হয়ে থাকবে, দর্শকও সারা জীবন মনে রাখবেন। যে ছবির মান, গল্পের গভীরতা—সবই যেন দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তেমনই একটা গল্প, চরিত্র পেয়ে গেলাম।’
সিনেমাটি নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ছবিটির গল্প শোনার পর থেকে নিজেই বুঝতে পারছিলাম, এটাই হবে আমার প্রথম ছবি। সেভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রথম ছবি হিসেবে এটি করার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, সেটির প্রমাণ এখন পাচ্ছি।’

প্রথম সিনেমায় অভিনয়ের জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে হয়েছে অভিনেত্রীকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘অনেক রিহার্সাল করেছি। কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। এটা একই সঙ্গে আমার পরিচালকের শাশুড়ির কথা, চিত্রনাট্যকারের মায়ের গল্প। যে কারণে অনেক গভীরভাবে চরিত্র সম্পর্ককে আলোচনা করতে পেরেছি।’
সিনেমায় সাবার আহত মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকেয়া প্রাচী আর মেয়ে হয়েছেন মেহজাবীন চৌধুরী। গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি চরিত্রে রয়েছেন মোস্তফা মন্ওয়ার। ‘সাবা’ সিনেমায় প্রথমবার মেহজাবীন চৌধুরীর সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন মোস্তফা মন্ওয়ার।
প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেছিলেন, ‘আমি মেহজাবীনের অভিনয় পছন্দ করি। অনেক কাজ দেখেছি। কিন্তু কখনোই একসঙ্গে অভিনয় করা হয়নি। তিনি কেন ফিল্ম করেন না, সেটা প্রায়ই মনে হতো। তিনি খুবই আন্তরিক, চরিত্র বুঝেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। অভিনেত্রী হিসেবে তিনি অনেক ভালো। খুবই সহযোগিতা করেন। আমরা শুটিংয়ের আগে দীর্ঘ সময় রিহার্সাল করতাম। কাজের ফাঁকে আড্ডা হতো।’
শনিবার নির্মাতা মাকসুদ হোসাইন বলেন, ‘গত বছর টরন্টো দিয়ে আমাদের জার্নি শুরু হয়েছিল। আমাদের সেই ধারাবাহিকতায় এবারও ইউরোপের কয়েকটি উৎসবে সিনেমা অংশ নেয় ও প্রশংসিত হয়। প্রায় দেড় বছর ধরে সিনেমাটি নিয়ে উৎসব কর্তৃপক্ষ ও সমালোচকদের কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছি। কিন্তু সিনেমাটি নিয়ে দেশের দর্শকদের আগ্রহ ছিল। আমরা খুব শিগগির দেশে মুক্তি দেব। এটা এই সপ্তাহেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’
যৌথভাবে ৯০ মিনিটের ‘সাবা’ সিনেমার গল্প ও চিত্রনাট্য করেছেন মাকসুদ হোসেন ও ত্রিলোরা খান। পরিচালক মাকসুদ হোসেনেরও এটি প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। প্রায় দুই দশক ধরে প্রচুর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানিয়েছেন, বিজ্ঞাপনচিত্র পরিচালনা করেছেন মাকসুদ। এখন তিনি ব্যস্ত নিজের দ্বিতীয় সিনেমা ‘বেবিমুন’–এর কাজ নিয়ে।