বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলা: মার্কিন দূতাবাসের ‘তথ্য’ ও ‘পর্যবেক্ষণ’ চেয়ে ডিবির চিঠি

0
133
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, ছবি: সংগৃহীত

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সহযোগিতা চেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই মামলার ব্যাপারে দূতাবাসের কাছে কোনো ‘তথ্য’ ও ‘পর্যবেক্ষণ’ থাকলে তা জানাতে বলেছে ডিবি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সহকারী কমিশনার রাজন কুমার সাহা এ বিষয়ে দূতাবাসে চিঠি পাঠিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের আঞ্চলিক নিরাপত্তা কার্যালয়ের সিনিয়র ফরেন সার্ভিস ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটর বরাবর গত বৃহস্পতিবার এ চিঠি পাঠানো হয়।

মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। আদালত মামলাটির অধিক তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।

২০১৮ সালের ৪ আগস্ট রাতে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মোহাম্মদপুরের বাসায় নৈশভোজে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। নৈশভোজ শেষে গাড়িতে ওঠার সময় তাঁর গাড়িতে হামলা হয়।

ডিবি থেকে দূতাবাসে পাঠানো চিঠিতে সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, এই মামলায় ২০২১ সালের মার্চে নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। তাঁরা হলেন ফিরোজ মাহমুদ, নাইমুল ইসলাম, মীর আমজাদ হোসেন, সাজু ইসলাম, রাজীবুল ইসলাম, শহিদুল আলম খান, মোজাহিদ আজমি, সিয়াম এবং অলি আহমেদ। তবে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন।  আবেদনে তিনি বলেন, অভিযোগকারীসহ পাঁচজন এর আগে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যে তিনজন আসামি হিসেবে বাদী বদিউল আলম মজুমদারের শ্যালক ইশতিয়াক মাহমুদের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর নাম উল্লেখ করেননি। তাই প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করতে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন।

ডিবির সহকারী কমিশনার রাজন কুমার সাহা চিঠিতে জানান, আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশের পর তাঁকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়েছি, বাদী বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে কথা বলেছি, সাক্ষ্য নেওয়ার চেষ্টা করছি, তদন্ত কার্যক্রম চলছে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ আজ বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুত তদন্তকাজ শেষ করে ফেলব। মোটামুটি সাক্ষ্য নেওয়া শেষ। এখন যদি দূতাবাসের কাছে কোনো তথ্য থাকে বা এ বিষয়ে কোনো মতামত থাকে, তা জানতে চেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, এই মামলা দায়ের হয়েছিল মোহাম্মদপুর থানায়। তারা তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিল। পরে আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবিকে দায়িত্ব দিয়েছে।

মামলাটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সর্বশেষ ধার্য তারিখ ছিল ৬ আগস্ট। প্রতিবেদন জমা দিতে না পারায় আদালত পরবর্তী তারিখ ঠিক করেছেন ৪ সেপ্টেম্বর।

মামলার তদন্ত কোন পর্যায়ে আছে, তা বিভিন্ন সময়ে জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি, আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

এদিকে গত পাঁচ বছরেও এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করতে না পারায় হতাশা ব্যক্ত করেন মামলার বাদী সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আশা করি, এবার অপরাধীদের চিহ্নিত করতে পারবেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। অপরাধীরা বিচারের মুখোমুখি হবে।’

মার্শা বার্নিকাট ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মার্শা বার্নিকাটকে বহনকারী গাড়ির ওপর হামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বাংলাদেশের কাছে একাধিকবার জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলার ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার এবং এ ব্যাপারে কার্যকর ও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে তারা।

রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার চেয়ে সেই সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক পত্রও পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই কূটনৈতিক পত্রে বলা হয়, রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা দলের সদস্যরা হামলাকারীদের মধ্যে দুই ব্যক্তিকে শনাক্ত করেন। হামলার সময় ওই দুই ব্যক্তি চিৎকার করে বলছিলেন, বদিউল আলম সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত। হামলাকারীরা গাড়িবহরের দিকে এগোনোর সময় তাঁদের বাধা দেওয়া হলে রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা দলের দুই সদস্যকে ঘুষি মারেন হামলাকারীরা। গাড়িবহর চলে যাওয়ার সময় দুটি গাড়িতে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন হামলাকারীরা।

হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সে সময় বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে বিবৃতি দেয়। এতে তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘মামলার তদন্ত কোন পর্যায়ে আছে, তা বিভিন্ন সময়ে জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’

রোজিনা ইসলাম

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.