তিনি বরাবরই সাহসী। সময়ের সঙ্গে নয়, বরং এগিয়েই ছিলেন। নিয়ম ভেঙেছেন, গতানুগতিক সমীকরণ থেকে বেরিয়ে নিজের ছন্দেই বেশি সাবলীল। তিনি রেখা। আসল নাম ভানুরেখা গণেশন। আজ ‘সিলসিলা’, ‘উমরাও জান’–অভিনয়শিল্পী রেখার জন্মদিন। আজ শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ৭১ বছর পূর্ণ করলেন বলিউডের এই ‘চিরসবুজ’ অভিনেত্রী।
‘রেখা মানে এক রহস্য, এক ব্যথা, আর এক নারী—যিনি নিজের ছাই থেকে নিজেই জেগে উঠেছেন।’ ভারতীয় লেখক ও সাংবাদিক ইয়াসির ওসমান তাঁর জীবনীগ্রন্থ ‘রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’তে রেখাকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন। রূপ, রটনা, রহস্য আর প্রতিরোধে গড়া এই বলিউড তারকার জীবন নিয়ে লিখেছিলেন তিনি। সেই বইই তুলে ধরেছে এক অচেনা রেখাকে—যিনি আলোতেও ছিলেন, অন্ধকারেও থেকেছেন দীপ্ত। ইয়াসির ওসমানসহ অনেক চলচ্চিত্র সমালোচকের মতে, বলিউডে এমন অনেক তারকা আছেন, যাঁদের জীবন সিনেমার চেয়েও নাটকীয়। কিন্তু রেখা যেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
গতকাল রাত থেকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে নতুন করে ফিরে এসেছেন রেখা। যেন শুভেচ্ছার বৃষ্টি ঝরেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। সত্তর পেরিয়েও রেখা যেন ফিরে এলেন নেট–দুনিয়ায়।
অবশ্য ‘ফিরে এলেন’ বললে ভুল হবে। রেখা ছিলেন না কবে? রেখা তো বছরের পর বছর আছেনই—আছেন গল্পগুজবে, আছেন আলোঝলমল কোনো তারকাবহুল সন্ধ্যায় উজ্জ্বল তারকা হয়ে। রেখা নিজেই যেন সব সময় নতুন। তাঁর নামের পাশে ‘চিরসবুজ’ লিখলে একবিন্দুও বাড়াবাড়ি হয় না। যিনি চিত্তহরণ করেন কিশোর, তরুণ, যুবক, প্রৌঢ়, এমনকি বৃদ্ধেরও।
‘রেখা কে আসলে?’—জন্মদিনে ‘রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’র সূত্র ধরে সেই অচেনা রেখার গল্পে আরেকবার ফিরে যাওয়া যাক।

বছরের পর বছর দুটি নাম পাশাপাশি চর্চিত—অমিতাভ আর রেখা। আর এ দুটি নাম মনে এলেই একটি দৃশ্য চোখে ভাসে অনেকের—দিগন্তবিস্তৃত বর্ণিল টিউলিপ ফুলের সমারোহে একাকার তাঁরা। আর সঙ্গে গান ‘দেখা এক খাব তো ইয়ে সিলসিলে হুয়ে’।
বেঁচে থাকার গল্প
এখানে শুরুর প্রসঙ্গটা হয়তো ‘অপ্রাসঙ্গিক’ মনে হতে পারে। তবে এটা তো বড় সত্য, বছরের পর বছর দুটি নাম পাশাপাশি চর্চিত—অমিতাভ আর রেখা। আর এ দুটি নাম মনে এলেই একটি দৃশ্য চোখে ভাসে অনেকের—দিগন্তবিস্তৃত বর্ণিল টিউলিপ ফুলের সমারোহে একাকার তাঁরা। আর সঙ্গে গান ‘দেখা এক খাব তো ইয়ে সিলসিলে হুয়ে’।
হয়তো আজও অনেকে ইউটিউবে ঘুরে এসেছেন সেই টিউলিপ বাগানে। এ গানে রেখার আবেগঘন অভিব্যক্তি দারুণ সার্থক করেছে গানের কথা ও সুরকে। অনেকে বলেন, সত্যিকারের প্রেম না থাকলে এমন অভিব্যক্তি সম্ভব নয়। লেখা বাহুল্য, ছবির প্রেমিক অমিতাভের সংসার হয়েছে, প্রেমিকা রেখা একাই রয়ে গেছেন আজও।
এবার প্রসঙ্গে ফিরি।
এ লেখার শুরুতে ‘রূপ’, ‘রটনা’, ‘রহস্য’—এই শব্দ তিনটি ব্যবহার করা হয়েছে। যেটা বলা হয়নি, সেটা ‘সংগ্রাম’ শব্দের কথা। রেখা সেই নারী, যিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। রেখা, যিনি নেহাতই পেটের দায়ে চলচ্চিত্রে নেমেছিলেন—নিজের জন্য, সংসারের জন্য, মা–বোনদের জন্য। ইয়াসির ওসমান লিখেছেন, ‘রেখার জন্মই ছিল বিতর্কিত। কিন্তু তাঁর বেঁচে থাকা এক নীরব প্রতিরোধের গল্প।’ কেন লিখেছেন এমনটা? কারণ, ওই সংগ্রাম ছিল রীতিমতো যুদ্ধ—জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ।
গত শতকের পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়। তামিল অভিনেতা জেমিনি গণেশন ও তেলেগু অভিনেত্রী পুষ্পাভ্যালির ঘরে জন্ম ভানুরেখা গণেশনের। তবে তাঁর মা পুষ্পাভ্যালি ছিলেন জেমিনি গণেশনের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের সঙ্গিনী। সে কারণেই রেখার জন্মের পর বাবার স্বীকৃতি মেলেনি।
রেখা সেই নারী, যিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। রেখা, যিনি নেহাতই পেটের দায়ে চলচ্চিত্রে নেমেছিলেন—নিজের জন্য, সংসারের জন্য, মা–বোনদের জন্য।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সে কারণে রেখাকে শুনতে হয়েছে নানা কটুকথা। বাবা জেমিনিও শিশুকালে তাঁকে সন্তান হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন। পিতৃপরিচয়ের সংকট নিয়ে শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে আসেন রেখা। হার মানেননি; বরং স্বপ্ন দেখতেন বিমানবালা হওয়ার। কিন্তু বাবার অনুপস্থিতিতে পরিবারে নেমে আসে দারিদ্র্য।
নানা চড়াই–উতরাই পেরিয়ে রেখা হয়ে ওঠেন তাঁর ছয় সদস্যের পরিবারের কান্ডারি। কিশোরী রেখা পরিবারের হাল ধরেন। নিজের দায়িত্ব নিয়ে রেখা পরে বলেন, ‘বেশির ভাগ সময় আমি ছিলাম আমার ভাইবোনদের মা, এমনকি আমার মায়েরও মা।’
কিশোরী রেখা ঠিক করেন, বলিউডে গিয়ে পরিবারের অভাব দূর করবেন। অডিশন দিতে শুরু করেন। কিন্তু প্রযোজক–পরিচালকেরা বারবার ফিরিয়ে দিতে থাকেন তাঁকে। তাঁর জীবনের প্রথম অধ্যায় তাই কোনো গ্ল্যামার নয়—এটি ছিল নিখাদ বেঁচে থাকার গল্প।

যৌন নিপীড়নের শিকার
১৯৬৯ সালে ‘গোয়াদাল্লি সিআইডি ৯৯৯’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে রুপালি পর্দায় রেখার ভ্রমণ শুরু। এর আগে ১৯৬৬ সালে তেলেগু চলচ্চিত্র ‘রাঙ্গুলা রত্নম’–এ বেবি ভানুরেখা নামে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। ১৯৭০ সালে বলিউডের ছবি ‘আনজানা সফর’–এ অভিনয়ের সুযোগ মেলে। কিন্তু সেই ছবিই পরিণত হয় তাঁর জীবনের এক দুঃস্বপ্নে। ইয়াসির ওসমানের বইয়ে জানা যায়, জীবনের প্রথম হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হন তিনি। সেবার মেহবুব স্টুডিওতে ‘আনজানা সফর’ চলচ্চিত্রের শুটিং চলছিল। সেদিন রেখা ও বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে প্রেমের দৃশ্য চিত্রায়ণের কথা ছিল। পরিচালক ‘অ্যাকশন’ বলার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় শুটিং। কিন্তু পরিচালক যেভাবে দৃশ্য বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, সেভাবে হচ্ছিল না; বরং নায়ক বিশ্বজিৎ রেখাকে নিজের বাহুতে জোরে আটকে ধরে চুমু দিতে শুরু করেন। চিত্রনাট্যের বাইরে গিয়ে নায়কের এমন আচরণে রেখা হতবাক হয়ে যান; কিন্তু তাঁর কিছুই করার ছিল না। নায়ক তাঁকে ছাড়ছেন না, পরিচালকও ‘কাট’ বলছেন না। শুটিং ইউনিটের লোকজন এই দৃশ্য দেখে মজা পেয়েছেন আর সিটি বাজিয়েছেন।’ ইয়াসির ওসমান লেখেন, ‘মেহবুব স্টুডিওর সেই দিনটি ছিল বলিউডের নির্মম মুখ দেখার দিন।’ সেদিন এ ঘটনায় হতবাক হয়ে যান এবং শুটিং সেটে কান্নায় ভেঙে পড়েন রেখা। পরে এক সাক্ষাৎকারে রেখা বলেন, ‘সেদিনই বুঝেছিলাম, মেয়েদের জন্য পৃথিবী কোনো নিরাপদ স্থান নয়।’
এই চুম্বনের দৃশ্যকে ঘিরে দেখা দেয় একাধিক বিতর্ক। পরবর্তীকালে বিশ্বজিত্ চট্টোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে এক সাক্ষাত্কারে প্রশ্ন করা হলে বলেন, তিনি সেটাই করেছিলেন, যা তাঁকে পরিচালক করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই ছবির পরিচালক ছিলেন কুলজিত্ পাল। তিনি দাবি করেন, রেখা আগেই সম্মতি দিয়েছিলেন ও জানিয়েছিলেন, এমন দৃশ্য নিয়ে তাঁর কোনো অসুবিধা নেই।
তখনকার দিনে নায়িকা মানেই ফরসা ত্বক। বলিউড রেখাকে বারবার ফিরিয়ে দিয়েছিল গায়ের রঙের জন্য। রেখা ছিলেন শ্যামবর্ণ, উচ্চারণে দক্ষিণি টান। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। যোগব্যায়াম, ভাষা শেখা, মেকআপ, ডায়েট—নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তোলেন।

সৌন্দর্য ছিল তাঁর অস্ত্র
তখনকার দিনে নায়িকা মানেই ফরসা ত্বক। বলিউড রেখাকে বারবার ফিরিয়ে দিয়েছিল গায়ের রঙের জন্য। রেখা ছিলেন শ্যামবর্ণ, উচ্চারণে দক্ষিণি টান। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। যোগব্যায়াম, ভাষা শেখা, মেকআপ, ডায়েট—নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তোলেন। ইয়াসির ওসমান লিখেছেন, ‘রেখা ছিলেন নিজের রূপের নির্মাতা। তিনি সৌন্দর্যকে ব্যবহার করেছেন অস্ত্র হিসেবে।’
‘সাওয়ান ভাদো’ ছবিতে রেখা প্রথম বাণিজ্যিক সাফল্য পান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একে একে ‘কাহানি কিসমত কি’, ‘মিস্টার নটবরলাল’, ‘সিলসিলা’, ‘উমরাও জান’, ‘মুকাদ্দার কা সিকান্দর’, ‘খুন–পাসিনা’, ‘উৎসব’, ‘দো আনজানে’—তালিকাটা এত দীর্ঘ যে গুনে শেষ করা যায় না। ‘উমরাও জান’–এর জন্য পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ইয়াসির ওসমানের ভাষ্যে, ‘সেই চলচ্চিত্রে তাঁর চোখে যে ব্যথা, তাতে লুকিয়ে থাকে এক নারীর ইতিহাস—যে প্রতিবার ভেঙে পড়ে, কিন্তু আবার দাঁড়িয়ে যায়।’
অমিতাভ বচ্চন: প্রেম না কিংবদন্তি
আজকাল অনেক শিল্পীই কাজের বাইরে নানা কারণে আলোচনায় আসেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় তাঁদের কর্মকাণ্ড। নতুন ছবি, তির্যক মন্তব্য, তথাকথিত সাহসী ফটোশুট—সব মিলিয়ে তাঁরা খবরের শিরোনাম হন। সে হিসেবে রেখা ছিলেন সেকালের সবচেয়ে ‘ভাইরাল কন্যা’। বলিউডে প্রেমের গল্প অনেক, কিন্তু অমিতাভ ও রেখার গল্প—এ যেন এক শাশ্বত কৌতূহল। ‘দো আনজানে’ থেকে শুরু, ‘সিলসিলা’য় চূড়ান্ত! আজও অমিতাভ–রেখার নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হয়। ইয়াসির ওসমান লিখেছেন, ‘তাঁদের প্রেম ছিল নিঃশব্দ বজ্রপাতের মতো—অদৃশ্য, অথচ অনিবার্য।’

এক সন্ধ্যার কথা। রেখা তখন সুপারস্টার। দিনটা ১৯৮০ সালের ২২ জানুয়ারি। আরকে স্টুডিওতে ঋষি কাপুর আর নিতু কাপুরের বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। এমন সময় রেখা পৌঁছান সেখানে। মাথায় সিঁদুর, গলায় মঙ্গলসূত্র। যেমনটি থাকে হিন্দু বিবাহিত নারীদের; কিন্তু রেখার তখনো বিয়ে হয়নি। ঘটনা কী? এমনিতে ওই সময় আবার চলচ্চিত্র জগতে অমিতাভ বচ্চন-রেখার সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন। এসব নিয়ে অতিথিদের মধে৵ ফিসফাস। যদিও পরে রেখা বলেছেন, তিনি নাকি একটি ছবির শুটিংয়ে ছিলেন। সেখান থেকেই চলে যান বিয়ের অনুষ্ঠানে। মেকআপ তোলার কথা একেবারেই খেয়াল ছিল না। সেই সন্ধ্যার কথা বেশ কিছুদিন আলোচিত হয় বলিউডপাড়ায়।

কিন্তু বলিউড সেই ব্যাখ্যা বিশ্বাস করেনি। এরপর প্রায় এক মাসের মধ্যে তখনকার প্রখ্যাত শিল্পপতি মুকেশ আগরওয়ালকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু বিয়ের এক বছর পরেই আত্মহত্যা করেন মুকেশ। কেন মুকেশ আত্মহত্যা করেন, তা আজও জানা যায়নি। এরপর একের পর এক রটনা, গল্পগুজব, ফিসফাস রেখাকে নিয়ে। একসময় তাঁর নাম জড়ায় অভিনেতা বিনোদ মেহরার সঙ্গে। শোনা যায়, কলকাতায় নাকি বিয়ে করেন তাঁরা। কিন্তু বিনোদের মা তাঁকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন।
এমনও শোনা যায়, কলকাতায় বিয়ে করার পর বিনোদ রেখাকে তাঁর মুম্বাইয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। দরজা দিয়ে ঢুকে বিনোদের মায়ের পায়ে হাত দিতেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন তিনি। রেখাকে বাড়িতে থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। বিনোদের মা এতটাই উত্তেজিত ছিলেন যে পায়ের স্যান্ডেল খুলে রেখাকে মারতে শুরু করেন।

শেষ পর্যন্ত সংসার করা হয়নি রেখার। তাতে কখনো আফসোস করতে দেখা যায়নি। কিন্তু একাকিত্বকে দুর্বলতা নয়, মর্যাদায় পরিণত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার জীবন আমার নিজের সিনেমা। আমি তার একমাত্র নায়িকা।’
‘রেখা দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ বইয়ে এ ঘটনার উল্লেখ আছে, যদিও এ ব্যাপারে কোনো দিন মুখ খোলেননি রেখা। শুধু বিনোদ মেহরা অথবা অমিতাভ নন, জিতেন্দ্র,শত্রুঘ্ন সিনহা, রাজ বাব্বর, কমল হাসান, এমনকি সঞ্জয় দত্তের সঙ্গেও তাঁকে নিয়ে রটে নানা গল্প। বয়সে ছোট, এমন অনেকের সঙ্গে তাঁকে নিয়ে গুজব উঠেছে। এত কিছুর পর শেষ পর্যন্ত সংসার করা হয়নি রেখার। তাতে কখনো আফসোস করতে দেখা যায়নি। কিন্তু একাকিত্বকে দুর্বলতা নয়, মর্যাদায় পরিণত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার জীবন আমার নিজের সিনেমা। আমি তার একমাত্র নায়িকা।’

রেখা মানে রহস্য
বিনোদ মেহরা, রাজ বাব্বর, কমল হাসান, সঞ্জয় দত্ত—সবাই কোনো না কোনো সময় যুক্ত হয়েছিলেন রেখার নামের সঙ্গে। কিন্তু তিনি কখনোই নিজেকে ব্যাখ্যা করেননি। তিনি জানেন, রহস্যই তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি। ইয়াসির ওসমানের ভাষায়, ‘রেখা ব্যর্থতাকেও গয়না বানিয়েছেন।’ এই শক্তিতে, এই গয়নায় রেখা সব সময় আলোচনায় থেকেছেন ভারতের ছবিপাড়ায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর পুরোনো দৃশ্য ভাইরাল হয়, নতুন প্রজন্ম খোঁজে তাঁর পুরোনো গান, আর সাংবাদিকেরা খোঁজেন তাঁর চুপ থাকা মুখের গল্প। রেখাকে যতবারই বলা হয়েছে ‘শেষ’, তিনি ততবারই নতুনরূপে ফিরে এসেছেন। কখনো ‘উমরাও জান’, কখনো ‘মুকাদ্দার’, কখনো নিঃশব্দ একাকী নারী।
বলিউডের নতুন প্রজন্মের চোখেও রেখা আজও এক ‘স্টাইল আইকন’। শাড়ি, গাঢ় লিপস্টিক ও হাসি নিয়ে হাজির হলে দর্শক আজও শিউরে ওঠেন—এখনো এমন দীপ্তি কীভাবে সম্ভব!

এখন বড় পর্দায় তাঁকে সেভাবে দেখা যায় না, কিন্তু আজও মুম্বাইয়ের পুরস্কার বিতরণী কিংবা ফ্যাশন আয়োজনে প্রথম সারিতে দেখা যায় তাঁকে। বলিউডের নতুন প্রজন্মের চোখেও রেখা আজও এক ‘স্টাইল আইকন’। সোনালি বেনারসি শাড়ি, গাঢ় লিপস্টিক ও হাসি নিয়ে হাজির হলে দর্শক আজও শিউরে ওঠেন—‘এখনো এমন দীপ্তি কীভাবে সম্ভব!’ রেখা মানে সেই নারী, যিনি হার মানেননি কোনোকালে।
মাসুম অপু
ঢাকা