বান্দরবানে বেনজীরের খামারসহ আরও শত একর জমির খোঁজ

0
71
বেনজীর আহমেদ ও খামার
পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-কন্যার নামে বান্দরবানে র‌য়ে‌ছে মা‌ছের প্রজেক্ট, গরুর খামার, ফ‌লের বাগান ও রেস্টরুমসহ প্রায় ক‌য়েক কো‌টি টাকার সম্প‌ত্তি।
 
স্থানীয়দের কাছে এস‌পির জায়গা নামে প‌রি‌চিত এসব জমিতে একসময় অসহায় প‌রিবারের বসবাস থাক‌লেও নামমাত্র মূ‌ল্যে তাদেরকে জ‌মি বি‌ক্রি করতে বাধ‌্য ক‌রার অভিযোগ রয়েছে। এসব সম্পত্তি দেখাশোনা করেন বান্দরবান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াইচিং মারমা।
 
স্থানীয়রা জানান, বান্দরবান পৌরসভার মধ্যমপাড়া এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে শাহজাহানের কাছ থেকে বান্দরবান সদর উপজেলার ৩১৪ নম্বর সুয়ালক মৌজায় ৬১৪ নম্বর দাগের ৩ নম্বর সিটে ২৫ একর লিজের জমি ক্রয় করেন বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর। যেখানে গড়ে তুলেছেন গবাদিপশুর খামার, মৎস্য প্রজেক্ট, ফলজ, সেগুন বাগান ও বিলাসবহুল খামারবাড়ি। এই খামারবাড়িতে রয়েছে অন্তত অর্ধকোটি টাকারও বেশি গবাদিপশু। এ ছাড়া লামা উপজেলার সরই ডলুছড়ি মৌজার টংগো ঝিরিতে রয়েছে আরও অর্ধশত একরেরও বেশি জায়গা।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, সুয়ালকের মাঝের পাড়ার চা অফিস থেকে পৌনে ১ কিলোমিটার দূরে ২৫ একর জমিজুড়ে রয়েছে ‘নেচার হিল এগ্রো’ নামে গরু-মৎস্য খামার, সেগুনসহ বিভিন্ন ফল ও ফুলের বাগান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোতলা পাকা দালান।
 
খামারটিতে কাজ করছেন শ্রমিকরা। এদের মধ্যে লেদু মিয়া জানান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ওয়াইচিং মারমার নেতৃত্বে বেনজীর আহমেদের এই খামারে গত এক মাস ধরে গরুগুলো দেখাশোনা করছেন তিনি।
 
ডলুছ‌ড়ি মৌজার টংগঝি‌রি পাড়ার অজিত ত্রিপুরা ব‌লেন, আমি অনেকটাই ছোট ছিলাম। এ সময় মং ওয়াইচিং এসে আমার বাবার কাছ থে‌কে ১ লাখ টাকা দি‌য়ে জোর ক‌রে ৫ একর জায়গা দখ‌লে নি‌য়ে‌ছে। আমা‌দের মতো আরও অ‌নে‌কের কাছ থে‌কে জায়গা নি‌য়ে‌ছে। আমরা প্রতিবাদ কর‌লেই লামা ও অন‌্য জায়গা থে‌কে পু‌লিশ এসে আমা‌দে‌র হয়রা‌নি ক‌রে‌ছে। এত‌দিন ভ‌য়ে এসব কথা কাউকে বল‌তে পা‌রি‌নি।
 
লামা উপজেলার সরই ডলুছড়ি টংগো ঝিরি বাগানের কেয়ারটেকার মো. ইব্রাহিম জানান, দীর্ঘদিন ধরে বেনজীর আহমেদের ৫৫ একর জায়গা দেখাশোনা করছেন তিনি। আগে মং ওয়াইচিং বেতন পরিশোধ করলেও গত ৫ মাস ধরে কোনো বেতন পরিশোধ না করায় অতিকষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।
 
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াই চিং জানান, পার্শ্ববর্তী জায়গা থাকার সুবাদে সুয়ালকের মাঝের পাড়ায় বেনজীর আহমেদের ২৫ একর জায়গা দেখাশুনার দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়েছে। তবে লামার জায়গা-জমি সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে তার জানা নেই।
 
সুয়ালক ইউপি চেয়ারম্যান উ ক্য নু মারমা বলেন, বেনজীর আহমেদের সুয়ালক মৌজার মাঝের পাড়ায় জায়গা আছে তা আমি জানি। জায়গাটি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াই চিং দেখাশুনা করেন। মাঝে মাঝে একজন এসপিও এখানে আসেন। তবে তার নাম জানি না। জায়গাটি সকলের কাছে এসপির জায়গা হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি বাগানটিতে জোত পারমিট করা হয়েছে। তবে বেনজীর আহমেদ জায়গাগুলো কীভাবে নিয়েছেন তা তিনি জানেন না।
 
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, বান্দরবানে বেনজীর আহমেদের জায়গা-জমির তথ্য বা জবরদখল সংক্রান্ত কোনো বিষয় তার জানা নেই। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
 
এর আগে ২৬ মে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা, কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর, তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর ও জারা জেরিন বিনতে বেনজীরের সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আদেশের পর বেনজিরের স্ত্রী ও মেয়ের ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দেন আদালত।
 
এদিকে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও তিন কন্যার ১৯৮ একর জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। যার দলিলমূল্য ২০ কোটি ৭১ লাখ ৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া বেনজীরের পরিবারের ৩৮টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ এবং পরিবারের মালিকানার কোম্পানিও ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সব মিলিয়ে অ্যাকাউন্ট এবং কোম্পানি বাদেও দুইদিনে বেনজীরের পরিবারের প্রায় ২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.