বানের ফায়দা লুটছেন চাল ব্যবসায়ীরা

0
44
চালের বাজার

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দর কমেছে। তবে উল্টো পথে চাল। মাসখানেক ধরেই খাদ্যপণ্যটির দর ঊর্ধ্বমুখী। সাম্প্রতিক দেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দিয়েছে। বানের অজুহাতে ফায়দা লুটছেন তারা। ফলে উৎপাদন এলাকা উত্তরের জেলার পাশাপাশি কুষ্টিয়ায়ও চড়েছে দর। গত এক মাসে পাইকারিতে ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। গ্রাহককে খুচরা বাজারে কেজিতে ৩-৪ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।

ক্রেতারা বলছেন, সরকারের পতনে চালের সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে– সবাই ধারণা করলেও হয়েছে উল্টো। তদারকির অভাবে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আরও সক্রিয় হয়ে মুনাফা লুটছে। রংপুরের সিটি বাজারে চাল কিনতে আসা রিকশাচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ান। নতুন সরকার সিন্ডিকেট না ভাঙলে না খেয়ে থাকতে হবে।

অবশ্য বরাবরের মতো ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, চালের বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, বন্যায় পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর সরকারি গুদামের পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানাধীন শত শত টন চাল নষ্ট হয়ে গেছে। লাখ লাখ পরিবারের সঞ্চিত চাল পানির নিচে। এখন দুর্গত এলাকায় যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে বড় অংশ থাকছে চাল। ফলে বেড়েছে মোটা ও মাঝারি ধরনের চালের চাহিদা। ঢাকাসহ কয়েকটি জেলা থেকে প্রচুর ক্রয়াদেশের সুযোগে মিল মালিক ও মজুতদাররা দাম বাড়িয়েছেন। তদারকি না থাকায় তারা অতি মুনাফা করছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ধানের গুদামে অভিযান ও চাল আমদানির পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

মিলারদের ভাষ্য, এখন ধানের সংকট রয়েছে। মজুত চালও ফুরিয়ে এসেছে। লাইসেন্সবিহীন ধান ব্যবসায়ীদের আধিপত্যও রয়েছে। ফলে মিল পর্যায়ে কেজিতে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা বেড়েছে। মিলাররা সামান্য লাভ করলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা গলা কাটছেন।

কুষ্টিয়ার চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, মিলাররা যে চাল ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি করছেন, সেই চাল করপোরেট প্রতিষ্ঠান প্যাকেটজাত করে প্রায় দ্বিগুণ দাম নিচ্ছে। সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার পাশাপাশি আমন ওঠার আগ পর্যন্ত চাল আমদানির পরামর্শ দেন তিনি।

ঢাকা ও উৎপাদন এলাকায় নেই ফারাক

মাঝারি আকারের বিআর-২৮ ও পাইজাম চাল সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মহাখালী কাঁচাবাজারে দেখা যায়, প্রতিকেজি বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, যা মাসখানেক আগে ছিল ৫৪-৫৮। ৫০-৫৪ টাকার মোটা চাল (স্বর্ণা, চায়না ইরি) বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। মাঝারি ও মোটা চাল কেজিতে ১ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। ২-৪ টাকা বেড়ে মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৭৫ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন বলেন, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। সেসব এলাকায় মানুষ ত্রাণ দিচ্ছে। এ জন্য চাল, চিড়া, মুড়ির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

রংপুর অঞ্চলে মোটা চালের কেজি ৫৫ টাকা ছাড়িয়েছে। মান ভেদে ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। খুচরায় বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৬ টাকা। রংপুর সিটি বাজার, সিও বাজার, লালবাগ বাজারে শনিবার স্বর্ণা ও ব্রি-২৯ জাতের মোটা চাল ৫৫-৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েকদিন আগে ছিল ৫০ টাকার আশাপাশে। ৬২ টাকার মাঝারি মানের চাল হয়েছে ৬৪-৬৫ টাকা। চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়।

রংপুর জেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, অটো রাইস মিলে মজুত কমেছে। বন্যায় চালের বড় আড়ত কুমিল্লা ও ফেনীতে কয়েক লাখ টন চাল নষ্ট হয়েছে। এরই প্রভাব পড়েছে বাজারে।

কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। মিলগেটে মান ভেদে সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৬৭ টাকা। মিল মালিকরা বলছেন, বন্যার কারণে বাজারে ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় মণপ্রতি বেড়েছে ২০০ টাকা। তবে কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার বলেন, ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে চালের দাম বাড়ালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অসাধু মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা পরিস্থিতির সুযোগ নিলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি শহিদুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, একদিকে চালের চাহিদা বেড়েছে; অন্যদিকে মজুত ফুরিয়ে এসেছে ধানের। ফলে ৮-১০ দিন ধরে শুধু মোটা চালের দর চড়া। তবে শিগগির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

টিসিবির তথ্যে, গত এক মাসে মাঝারি ও মোটা চাল প্রায় ৩ শতাংশ আর সরু চালের দর বেড়েছে ৪ শতাংশ। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, পট পরিবর্তনের সুফল ভোক্তারা পাচ্ছেন না। অধিদপ্তর শিগগির বাজার তদারকিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.