যুক্তরাষ্ট্রের সবশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জো বাইডেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন টারা রিডি। তখন বাইডেন এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে অভিযোগ তুলেই মার্কিন সংবাদমাধ্যমে আলোচনায় এসেছিলেন টারা।
এই মার্কিন নারী এখন নতুন করে আবার আলোচনায় এসেছেন। কারণ, টারা এখন রয়েছেন রাশিয়ায়। গতকাল মঙ্গলবার মস্কোয় টারা বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে দেশটির নাগরিকত্ব চান তিনি। তাঁর এমন মন্তব্য নতুন করে শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
টারার বয়স এখন ৫৯ বছর। ১৯৯৩ সালে স্বল্প সময়ের জন্য বাইডেনের কংগ্রেশনাল অফিসে কাজ করেন তিনি। রাশিয়ার স্পুতনিক মিডিয়া গ্রুপে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে এই নারী বলেন, তিনি ছুটি কাটাতে রাশিয়ায় এসেছেন। এখন দেশটির নাগরিক হতে চান।
টারার মন্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের একজন আইনপ্রণেতা তাঁকে বলেছেন যে দেশে তাঁর জীবন হুমকিতে রয়েছে। তাই তিনি নাগরিকত্ব নিয়ে রাশিয়ায় থেকে যেতে চান। টারা বলেন, ‘আমি যখন উড়োজাহাজ থেকে নেমে মস্কোর মাটিতে পা দিয়েছি, দীর্ঘসময় পর প্রথমবারের মতো তখন নিরাপদ ও সম্মানিত বোধ করেছি।’
চলতি শতকের শুরুর দিকে প্রথমবারের মতো বাইডেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুঁড়েছিলেন টারা। তাঁর অভিযোগ, ১৯৯৩ সালের আগস্টে ক্যাপিটল হিলের করিডরে বাইডেন তাঁকে যৌন হয়রানি করেছিলেন। এই সময় তাঁর বয়স ছিল ২৯ বছর। আর বাইডেন তখন সিনেটর ছিলেন।
পরে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে আবারও বাইডেনের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন টারা। ওই সময় বাইডেন তাঁর রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। ট্রাম্পের নামে বিভিন্ন সময় ওঠা যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে তখন বাইডেন তোপ দেগেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে টারার অভিযোগ বেশ আলোচিত হয়েছিল।
তবে জো বাইডেন শুরু থেকেই সাবেক সহযোগী টারার তোলা যৌন হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। এ বিষয়ে বাইডেনের মন্তব্য, ‘এটা সত্য নয়। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, এমন ঘটনা কখনোই ঘটেনি, কখনোই নয়।’
যদিও সংবাদমাধ্যমকে টারা জানান, ওই ঘটনার পর তিনি একটি অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নথি কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও ১৯৯৬ সালে আদালতের একটি নথিতে যৌন হয়রানির ঘটনার ইঙ্গিত মেলে। নথিতে বলা হয়েছে, টারার সাবেক স্বামী জানিয়েছিলেন, বাইডেনের দপ্তরে কাজ করার সময় ঘটা যৌন হয়রানির আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তুলেছিলেন টারা।
তবে টারার এই অভিযোগ নিয়ে কখনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত হয়েছে কি না, সেটা জানা যায়নি।
টারা নিজেকে একজন ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে পরিচয় দেন। মস্কোয় দেওয়া সাক্ষাৎকারে টারা বলেন, ২০২০ সালে যখন তিনি বাইডেনের বিরুদ্ধে পুরোনো অভিযোগ নিয়ে আবারও সরব হন, তখন তাঁকে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাঁর জীবননাশের ঝুঁকি দেখা দিয়েছিল। এমনকি অনেকেই তাঁকে ‘রুশ এজেন্ট’ বলেও ডাকতেন।
সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় টারার পাশে বসেছিলেন মারিয়া বুতিনা। তিনি রুশ আইনপ্রণেতা। ২০১৮ সালে ওয়াশিংটনে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটেন মারিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তুলেছিল মার্কিন প্রশাসন। মারিয়ার পাশে বসে টারা বলেন, তিনি সব সময় রাশিয়াকে ভালোবেসেছেন।
টারার মন্তব্য, ‘অন্য মার্কিন নাগরিকদের মতো রাশিয়াকে কখনোই শত্রু হিসেবে দেখিনি।’ রাশিয়ার একজন ‘ভালো’ নাগরিক হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন টারা। তবে তিনি তাঁর মার্কিন নাগরিকত্বও রাখতে চান।