‘বাংলায় কথা বলায়’ কলকাতায় বেধড়ক মারপিটের শিকার দুই ছাত্র

0
11
শিয়ালদাতে বাংলায় কথা বলার কারণে বেধড়ক মার খেয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র

নিজ দেশেই বেঁচে থাকাটা দুষ্কর হয়ে উঠেছে ভারতের বাংলা ভাষাভাষী নাগরিকদের জন্য। ‘বাংলাদেশি’ অভিযোগে ধরপাকড়ের শিকার হতে হচ্ছে অনেককেই। স্থানীয়ভাবে অবাঙালিদের কাছে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে প্রায়ই। এবার তেমনই এক ঘটনা ঘটে গেছে খোদ পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়, যেখানকার নাগরিকদের মাতৃভাষাই বাংলা।

বুধবার (২০ আগস্ট) রাতে শিয়ালদাতে বাংলায় কথা বলার কারণে বেধড়ক মার খেয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র। শুধু তাই নয়, ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন তাদের আরও কয়েকজন সহপাঠী।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) পৃথক প্রতিবেদনে ইন্ডিয়া টুডে, দ্য হিন্দু, টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ বেশ কিছু ভারতীয় গণমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কলকাতার শিয়ালদা ব্রিজের কাছেই দুজন যুবককে হেনস্তা করেন হিন্দিভাষী এক দোকানদার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন ওই দুই যুবক। ঘটনার পর তারা পুলিশেও অভিযোগ দিয়েছেন। খোদ কলকাতায় এমন ঘটনা ঘটায় ক্ষুদ্ধ হয়েছেন পুরো পশ্চিমবঙ্গের জনগণ। ক্ষোভ ঝেড়েছেন রাজনৈতিক নেতারাও।

জানা গেছে, বুধবার রাতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র শিয়ালদাহর কাছে একটি মোবাইলের দোকানে যান। সেখানে দর কষাকষির এক পর্যায়ে চড়াও হন ওই দোকানদার। এসময় তার সঙ্গে থাকা একজনকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। হামলাকারী দোকানদার ও তার সঙ্গীরা হিন্দিভাষী বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্র।

মারধরের শিকার ওই ছাত্র বলেন, তারা হিন্দিতে বলছে তোদেরকে ‘বাংলাদেশি’ বলব। কী করবি বল? কী করার আছে কর। এরপর আমায় মারল। আমার মোবাইল কেড়ে নিল। আমাদের একটা ছেলেকে আটকেও রেখেছিল। অন্য যুবক বলেন, আমাদের হোস্টেলের কিছু ছেলে মোবাইলের কভার কিনতে যায়। তখন একটা লোক আমাদের ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দেয়। সেজন্য আমরা প্রতিবাদ করি। সেই কারণে, ছুরি-বন্দুক দিয়ে আঘাত করে আমাদের।

ওই ঘটনায় পরে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে আরও কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আহত হয়েছেন। তাদের মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা করানো হয়েছে। স্থানীয় থানায় অভিযোগের পর পুলিশও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। তবে, এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়।

পশ্চিমবঙ্গের বাংলাপক্ষের নেতা গর্গ চট্টোপাধ্যায় এই ঘটনার বিচার দাবি করে বলেছেন, আমরা গুজরাটে মার খাব, রাজস্থানে মার খাব, এখন কলকাতাতেও মার খাব? মানলাম উড়িশায় বিজেপি সরকার, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকার আছে। কলকাতায় তো বিজেপি নেই। তাহলে এই অপরাধীগুলো কেন গ্রেপ্তার হবে না?

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা সজল ঘোষও। তিনি বলেছেন, শিয়ালদহ মানে গেটওয়ে অফ কলকাতা। যদি সেখানেই এমন বাংলাদেশি বলে মারধর করা হয়! সবটাই তদন্ত করে দেখতে হবে।

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, শুধু ধিক্কার জানিয়ে এটা শেষ হচ্ছে না। আগে তো ভিন রাজ্যে হতো, এখন এখানে হচ্ছে। এই পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। আর এটা করছেন দিল্লিওয়ালারা।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.