বিশ্বের শীর্ষ কে–পপ ব্যান্ডে পরিণত করেছে তারা, জন্ম দিয়েছে ‘স্প্রিং ডে’, ‘ডায়নামাইট’, ‘বাটার’–এর মতো গান। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিটিএস নিয়ে রয়েছে অনেক উন্মাদনা, বিস্তর চর্চা, প্রচুর ভক্ত। অনেকে ব্যাংককে গিয়ে পর্যন্ত বিটিএসের কনসার্ট উপভোগ করেন। কেন এই জনপ্রিয়তা, কী আছে তাদের গানে, বাংলাদেশি কয়েকজন বিটিএস আর্মির কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা হয়েছে।
১০ পেরিয়ে আজ ১১ বছরে পা দিয়েছে বিটিএস। এক দশকের পথচলায় নিজেদের
‘বিটিএসের গানে নিজেকে খুঁজে পেয়েছি। বিটিএসের গানে জেনেছি, ভালো–মন্দ মিলিয়েই জীবন। নিজের দুঃসহ স্মৃতিকে ঝেড়ে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে, নিজেকে ভালোবাসতে হবে,’ বলছিলেন ঢাকার মেয়ে ফারিহা তাবাসসুম।
২০১৭ সালে প্রথম বিটিএসের নাম শুনেছেন ফারিহা, তখন তিনি ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন। সেই বছর বিলবোর্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডের টপ সোশ্যাল আর্টিস্ট হিসেবে টানা ছয়বার পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী জাস্টিন বিবারকে হটিয়েছিল বিটিএস; এরপর টানা পাঁচ বছর পুরস্কারটি নিজেদের দখলে রেখেছে তারা।
বিলবোর্ড পুরস্কার পাওয়ার আগে কোরিয়ার বাইরে খুব একটা পরিচিতি ছিল না বিটিএসের, যাঁরা কে–পপ সম্পর্কে ধারণা রাখতেন, তাঁরা একটু–আধটু নামটা জানতেন। বিলবোর্ড পুরস্কার পাওয়ার পরই মূলত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিটিএসের নাম। একই বছর প্রকাশিত ‘স্প্রিং ডে’ গানটিও আলোড়ন তোলে। পরের বছর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে নিজেকে ভালোবাসার মন্ত্র ছড়িয়েছিলেন বিটিএসের দলনেতা আরএম। এর আগে আগস্টে প্রকাশিত হয় বিটিএসের অ্যালবাম লাভ ইউরসেলফ: আনসার। আরএমের ভাষণ আর গানের কথা মিলেমিশে কিশোরমনে আলোড়ন তুলেছিল।
মাগুরার মেয়ে লামিয়া সিলভী হাসান বলছিলেন, ‘গানে টিনএজারদের ইতিবাচক বার্তা দেয় বিটিএস। তারা বলে, নিজেকে ভালোবাসো, তারপর পৃথিবীকে ভালোবাসো। এটা কোথাও বোঝানো হয় না, ওরা গানের মাধ্যমে সুন্দর করে তুলে ধরে।’
ইতিবাচক বার্তার পাশাপাশি গানের ভিডিওতে সাবলীল নৃত্য; আরএম, জিমিনদের সাধারণ জীবনধারা ও বিভিন্ন ধরনের দাতব্য কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা বলেছেন বিটিএসের গানের শ্রোতারা, যাঁরা বিটিএস আর্মি নামে পরিচিত।
২০১৫ সালে বিটিএস আর্মি অব বাংলাদেশ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ চালু করা হয়। বাংলাদেশে নিয়মিত যাঁরা বিটিএসের গান শোনেন, তাঁরা এই গ্রুপে ঢুঁ মারেন। একই নামে একটি পেজও রয়েছে। সেই গ্রুপের অ্যাডমিন সানজিদা নাসরিন বলেন, ‘অনেক ছোট একটি জায়গা থেকে উঠে এসেছে বিটিএস, ওদের কোম্পানিটাও ছিল ছোট।
নিজেরা চেষ্টা করে এত দূর এসেছে। যাঁরা স্ট্রাগল করেন, তাঁদের জন্য এটা অনেক ইন্সপায়ারিং। ব্যান্ডের সদস্যরা খুব সাধারণভাবে নিজেদের উপস্থাপন করেন।’ তাঁর জীবনযাপনেও বিটিএস ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে জানান সানজিদা। তাঁর ভাষ্য, ‘আমি নিজেকে ভালোবাসি, সব সময় নিজেকে প্রায়োরিটি দিই।’ এখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন সানজিদা নাসরিন।
বিটিএসের বেশির ভাগ গান কোরিয়ান ভাষায়, শুরুর দিকে বিটিএসের গানে কোনো সাবটাইটেল থাকত না বলে জানান ফারিহা তাবাসসুম। ভক্তদের অনেকেই গানের কথা অনুবাদ করে ভিডিও দিতেন, সেখান থেকেই গানের অর্থ উদ্ধার করতেন তিনি। এর ফাঁকে কোরিয়ান ভাষাটাও টুকটাক শিখে ফেলেছেন তিনি। ২০২০ সাল থেকে প্রতিটি গানে সাবটাইটেল দেওয়া শুরু করে বিটিএস।
২০২০ সালের বিটিএসের ইংরেজি গান ‘ডায়নামাইট’ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, গানটি বিলবোর্ড টপে ছিল টানা ১০ সপ্তাহ। মাঝে করোনাভাইরাসের মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষও সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সময় দিতে থাকেন। সেই সময় টিকটকে ভাইরাল হয় বিটিএসের গান ‘বাটার’, সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যান্ডটির গান ছড়িয়ে পড়ে।
কাতার বিশ্বকাপে জাংকুক ‘ড্রিমারস’ পরিবেশনের পর শহর ছাড়িয়ে গ্রামগঞ্জেও পৌঁছে যায় বিটিএসের নাম।