এবার আসল কথায় ফেরা যাক। ফুটবলের দেশ ইতালি ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার অঙ্ক কষছে। আর সেই অঙ্ক মেলাতে বিগ ব্যাশের সবশেষ আসরে সম্ভাবনাময় তারকা হিসেবে উঠে আসা স্পেনসার জনসনকে জাতীয় দলে খেলাবে ইতালি। গত মৌসুমে ৬ ফুট উচ্চতার এই বাঁহাতি পেসার ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করেন, যা দেখে মুগ্ধ হন অস্ট্রেলিয়ার পেস-কিংবদন্তি ব্রেট লিও।
ক্রিকইনফো জানিয়েছে, ব্রিজবেন হিটের হয়ে বিগ ব্যাশের ফাইনালে খেলা জনসনের শরীরে ইতালিয়ান রক্তও বইছে। তাঁর দাদা তরুণ বয়সে ইতালি থেকে অস্ট্রেলিয়ায় চলে এসেছিলেন। ক্রিকইনফো জেনেছে, জনসনের ইতালিয়ান পাসপোর্ট আছে এবং জুলাইয়ের বাছাই পর্বে ইতালির হয়ে খেলতে চান।
অন্তত উইকেটশিকার বিচারে গত বিগ ব্যাশে রশিদ খান-মুজিব উর রহমানদের মতো তারকা বোলারদের চেয়ে ভালো বোলিং করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে জন্ম নেওয়া জনসন (১০ ম্যাচে ৯ উইকেট)। তাঁর পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত স্পিন অলরাউন্ডার ওয়েন ম্যাডসেন ও অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার বেনজামিন মানেন্তিকেও জাতীয় দলে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতালি।
মানেন্তির জন্ম অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। খেলেছেন অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সে, দুবার বিগ ব্যাশ জিতেছেন সিডনি সিক্সার্সের হয়ে। ম্যাডসেন ডার্বিশায়ার, পেশোয়ার জালমি ও মুলতান সুলতানসেও খেলেছেন। ২০০৯ সালে কাউন্টি দল ডার্বিশায়ারে সই করার পর তিন সংস্করণ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি রান করেছেন ম্যাডসেন। তাঁরও ইতালিয়ান পাসপোর্ট আছে।
জুলাইয়ে স্কটল্যান্ডে ৭ দল নিয়ে শুরু হবে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বাছাই পর্ব। পাঁচবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা স্কটিশরাই এখানে ফেবারিট। ইউরোপের বাছাই পর্ব থেকে চূড়ান্ত পর্বের টিকিট কাটবে ২টি দল। ইতালি একটি জায়গা নিশ্চিত করতে চায়। আর সে জন্য দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ইতালির ৪২ বছর বয়সী অধিনায়ক ও কোচ গ্যারেথ বার্জ কয়েক মাস ধরে এই তিন ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলে শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেছেন। ক্রিকইনফোর ভাষায়, স্পেনসার জনসন, ওয়েন ম্যাডসেন ও বেনজামিন মানেন্তির মতো তিন প্রতিভাবানকে নিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ‘ইতালিয়ান জব’ সারতে চান গ্যারেথ বার্জ।
সিনেমার সূত্রে ‘ইতালিয়ান জব’ কথাটি বেশ জনপ্রিয়। ক্রিকেটের বেলায় বার্জ মিলে যাচ্ছেন ১৯৬৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘দ্য ইতালিয়ান জব’-এর চার্লি নামের সেই প্রধান চরিত্রের সঙ্গে। সঙ্গী-সাথি নিয়ে চার্লি সোনার বার চুরি করেছিলেন।
গ্যারেথ বার্জ তাঁর দল নিয়ে তো আর চুরি করবেন না, ক্রিকেট খেলবেন। কিন্তু সাত দলের সেই বাছাই পর্বে স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের মতো ক্রিকেটে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত দুটি দল থাকতে, সেখান থেকে চূড়ান্তপর্বের টিকিট তো আর এমনি এমনি কাটা যাবে না! ভদ্রস্থ অর্থে ভালো খেলে জিততে হবে আর রসিকতার ছলে বলতে পারেন, টিকিট চুরি করতে হবে!
রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে এডিনবার্গে ২০ জুলাই থেকে শুরু হবে এই বাছাই পর্ব। ইতালি ছাড়াও সেখানে বাকি ছয়টি দল—স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড,অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি ও জার্সি। এখান থেকে বিজয়ী ও রানার্সআপ দল আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবে।
ফুটবলের দেশে ক্রিকেট
ফুটবলে ইতালির সাফল্য সবার জানা। দেশটিতে ফুটবল সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। বিশ্বকাপ জিতেছে চারবার। উয়েফা আয়োজিত ইউরোপিয়ান ক্লাব প্রতিযোগিতায় ৪৮টি বড় টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে ইতালিয়ান ক্লাবগুলো। সেই ইতালি ক্রিকেট খেলে, এই তথ্যও সম্ভবত কাউকে চমকে দেবে না। এখন প্রায় সবারই জানা, টি-টোয়েন্টির প্রচলন হওয়ার পর থেকে আইসিসির পূর্ণ সদস্য ১২টি দেশের বাইরেও অনেক দেশ ক্রিকেট খেলছে। আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে ৮৫টি দেশের অন্তর্ভুক্তি এবং আইসিসির কাছ থেকে ৯৮টি দেশের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলার স্ট্যাটাস পাওয়া সে কথাই বলে।
উয়েফার ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি শিরোপাজয়ী স্পেনও (৩৬তম) টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ৪০টি দেশের মধ্যে আছে। জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়ার মতো দেশগুলোও এখন ক্রিকেটে মনোযোগী।
টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে ইতালির অবস্থান অবশ্য স্পেনের চেয়ে ভালো। ৩২তম স্থানে বার্জের দল। তাদের এক ধাপ ওপরে তানজানিয়া ও এক ধাপ নিচে সৌদি আরব। বার্জ ও তাঁর সহকারী কোচ আয়ারল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার কেভিন ও’ব্রায়েন দলকে আধা-পেশাদার বানানোর চেষ্টা করছেন। মিলান ও রোমে নিয়মিতই অনুশীলন ক্যাম্প করছে ইতালি জাতীয় ক্রিকেট দল।