বাংলাদেশ-ভারত অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপন চক্র: দিল্লিতে অ্যাপোলোর চিকিৎসক গ্রেপ্তার

0
71
কিডনি

অবৈধভাবে কিডনি প্রতিস্থাপনের একটি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক চিকিৎসককে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ। চক্রটি বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশে সক্রিয়।

গ্রেপ্তার চিকিৎসকের নাম বিজয়া কুমারী (৫০)। তিনি দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালে (আইএএইচ) কাজ করে আসছিলেন। তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

পুলিশ বলেছে, চক্রটির সঙ্গে যুক্ত একমাত্র চিকিৎসক বিজয়া। তিনি ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নয়ডার বেসরকারি ইয়াথার্থ হাসপাতালে ১৫ থেকে ১৬টি কিডনি প্রতিস্থাপনের কাজ করেছেন।

নথিপত্রের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি রোগীদের দিল্লির বড় হাসপাতালগুলোয় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য প্রলুব্ধ করত চক্রটি। চক্রে দালাল, চিকিৎসক বিজয়া ও অন্য সহযোগীরা আছেন। চক্রে জড়িত তিন বাংলাদেশিকে গত মাসে গ্রেপ্তার করা হয়।

চক্রটি নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের নামে জাল নথি তৈরি করত। ভারতীয় আইনের বাধ্যবাধকতা মানতে এসব নথিতে দেখানো হতো, অঙ্গদাতা ও প্রাপকের (উভয়ে বাংলাদেশি) মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে। এসব জাল নথিও পুলিশ জব্দ করছে বলে সূত্র জানায়।

সূত্র আরও জানায়, বিজয়া একজন জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট। তিনি একজন কিডনি প্রতিস্থাপন সার্জন। তিনি প্রায় ১৫ বছর আগে কনিষ্ঠ চিকিৎসক হিসেবে অ্যাপোলো হাসপাতালে যোগ দেন। তিনি হাসপাতালের বেতনভিত্তিক চিকিৎসক ছিলেন না। প্রতি চিকিৎসাসেবার বিনিময়ে ফি পেতেন।

ইয়াথার্থ হাসপাতালের অতিরিক্ত চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক (মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট) সুনীল বালিয়ান বলেন, বিজয়া হাসপাতালটিতে ভিজিটিং কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি তাঁর আনা রোগীদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতেন। ইয়াথার্থের কোনো রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয়নি। তিনি গত তিন মাসে একটি অস্ত্রোপচার করেছেন।

আইএএইচের এক মুখপাত্র বলেন, পুলিশি পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে বিজয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তদন্তের অংশ হিসেবে আইএএইচের কাছে পুলিশের অপরাধ বিভাগ কিছু তথ্য চেয়েছিল। এই তথ্য ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে।

আইএএইচের মুখপাত্র আরও বলেন, অন্য হাসপাতালে করা কাজের ব্যাপারে তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁর এসব কাজের সঙ্গে আইএএইচের কোনো সম্পর্ক নেই।

একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের রাসেল (২৯), মোহাম্মদ সুমন মিয়া, ইফতি ও ত্রিপুরার রতীশ পাল নিজ নিজ এলাকা থেকে সম্ভাব্য কিডনিদাতাদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে দিল্লিতে আনতেন। দাতারা ৪ থেকে ৫ লাখ রুপির বিনিময়ে কিডনি দিতেন। আর গ্রহীতার কাছ থেকে ২৫ থেকে ৩০ লাখ রুপি আদায় করত চক্রটি। ইফতি ছাড়া অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ভারতের রাজস্থানে একটি কিডনি চক্র ধরা পড়ে। সেখান থেকে তথ্য পায় পুলিশ। এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ প্রায় তিন মাস আগে কাজ শুরু করে। চক্রটি প্রতিটি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য চিকিৎসককে দু–তিন লাখ রুপি করে দিত।

সূত্র জানায়, আল শিফা নামে একটি মেডিকেল ট্যুরিজম কোম্পানির মাধ্যমে দাতা ও গ্রহীতাদের অবস্থান, চিকিৎসা ও পরীক্ষাকাজের সমন্বয় করা হচ্ছিল।

ইতিমধ্যে একজন ভুক্তভোগীর জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ইয়াথার্থ হাসপাতাল থেকে ভুক্তভোগীদের চিকিৎসাসংক্রান্ত নথি জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নামে করা জাল নথিও আছে।

সূত্র জানায়, পুলিশ এখন একটি সংগঠিত অপরাধী চক্রের ব্যাপারে তদন্ত করছে। তদন্ত চলাকালে বিজয়ার সহকারী হিসেবে কাজ করা বিক্রম নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নথির তথ্য অনুসারে, রাসেল যশোলা গ্রামে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন। সূত্র জানায়, এই ফ্ল্যাটে পাঁচ থেকে ছয়জন দাতাকে রাখা হয়েছিল। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আগে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল। এই ফ্ল্যাটে দাতাদের সঙ্গে গ্রহীতাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়।

সূত্র জানায়, রাসেলের বাড়ি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলায়। তিনি তাঁর সহযোগীদের শনাক্ত করেন। তাঁরা হলেন ঢাকার বাসিন্দা মিয়া (২৮) ও মোহাম্মদ রোকন (২৬)। জিজ্ঞাসাবাদের সময় দুজনই এই ফ্ল্যাটে ছিলেন।

সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের সময় রাসেলের কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ব্যাগে নয়টি পাসপোর্ট, দুটি ডায়েরি ও একটি রেজিস্ট্রার খাতা পাওয়া যায়। এই পাসপোর্টগুলো কিডনিদাতা ও গ্রহীতাদের ছিল। ডায়েরিতে দাতা ও গ্রহীতাদের মধ্যে আর্থিক লেনদেনের বিবরণ ছিল।

রোকনের কাছ থেকে একটি ব্যাগ জব্দ করেছে পুলিশ। এই ব্যাগে বিভিন্ন ছাপের ২০টি স্ট্যাম্প ও ২টি স্ট্যাম্প কালির প্যাড পাওয়া যায়। এগুলো জাল কাগজপত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল। রোকনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.