রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন মোজাফফর আহমদ। এমন সময় আকস্মিক পানির স্রোতে তার ঘরের প্রায় ২ ফুট প্লাবিত হয়। ভিজে যায় আসবাব, শীতের কাপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র। হঠাৎ পানি দেখে মোজাফফর সন্তানদের নিয়ে দিগ্বিদিক্ ছুটতে থাকেন। তার মতো প্রায় দেড় হাজার পরিবার শীতের রাতে এমন অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েন। শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় কৃত্রিমভাবে তৈরি করা লেকের বাঁধ কেটে দেওয়ায় ২ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। পূর্বঘোষণা ছাড়াই বন বিভাগ ওই বাঁধটি কেটে দেয় বলে জানা যায়। এতে লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া থেকে সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত আকস্মিক দুর্যোগ নেমে এসে।
স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন এলাকা প্রায় ৩-৫ ফুট পানির নিচে ডুবে যায়। এতে হাজার হাজার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বাঁধটি কাটার আগে বন বিভাগ ন্যূনতম সতর্কতাও জারি করেনি। এমনকি আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদেরও কিছু জানায়নি।
এদিকে পানির তোড়ে অন্তত দুটি স্লুইসগেট ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ৭০টি কাঁচা ঘর ভেঙে গেছে। প্রায় ২০ একর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে সদ্য লাগানো ধানের চারা। এ ছাড়া ব্যাক্তি মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া বনের প্রায় আড়াই হাজার একর বনভূমিতে গড়ে ওঠা ওই লেকের বাঁধ কাটার কাজ শুরু করে বন বিভাগ। এতে নেতৃত্ব দেন বন বিভাগের চট্টগ্রাম সদরের সহকারী বন সংরক্ষক মারুফ হোসেন এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক দেলোয়ার হোসেন। বন বিভাগের অর্ধশত কর্মী এ কাজে অংশ নেন। বাঁধটি কাটতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। পরে পানি নিম্নাঞ্চল পর্যন্ত যেতে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগে। রাত ১১টার দিকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। মুহূর্তের মধ্যে তা বন্যায় রূপ হয়। এতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বিপাকে পড়ে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে যায়, পানিতে লোহাগাড়ার বড়হাতিয়ার পর পশ্চিমের পাহাড় থেকে পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়ার সাইরতলী, তাঁতীপাড়া ডুবে যায়। এরপর একে একে কুতুবপাড়া, মঙ্গলচাঁদ পাড়া পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। পরে পানি পৌঁছায় সোনাকানিয়ার মির্জাখীল গ্রামে। ওই এলাকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র মির্জাখীল বাংলাবাজার পুরোটাই পানিতে তলিয়ে যায়। বাজারের সবগুলো দোকান ডুবে যায়।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, পানির প্রচণ্ড তোড়ে কালামিয়া পাড়া স্লুইসগেট ও মির্জাখীল দরবার স্লুইসগেট ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে কালামিয়া পাড়া, আচারতলী, সাইরতলী, মঙ্গলচাঁদ পাড়া, কুতুবপাড়া এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়ি মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে পড়ে।
এ ঘটনায় বন বিভাগকে দোষারোপ করছেন উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে এসেও তাদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বন বিভাগকে গালমন্দ করেন। তারা লাইভে ডুবে যাওয়া বিভিন্ন সড়ক ও তলিয়ে যাওয়া ফসলি জমি দেখান।
এ বিষয়ে জানতে সহকারী বন সংরক্ষক দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা না বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
সাতকানিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ৭০টি মাটির ঘর ভেঙে গেছে। ফসলেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরতে মাঠে রয়েছে বলে জানান তিনি।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, পানিতে কৃষি ও ফসলি জমির অন্তত ১৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।