বর্ণিল সাজ, উৎসবের আমেজ

0
167
মাওয়া স্টেশনে বর্ণিল সাজে দাঁড়িয়ে আছে ট্রেন।

পদ্মা সেতু দিয়ে আজ মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে নতুন এক রেলযুগে প্রবেশ করছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। এ উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে।

খুশির এ মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন সড়ক সাজানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ও ডিজিটাল ডিসপ্লে দিয়ে। এসবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে শুভেচ্ছা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা জানান, ভাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে দুই লক্ষাধিক মানুষ জমায়েতের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে ভাঙ্গাজুড়ে সাজ সাজ রব। সাজানো হয়েছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস। ফরিদপুর শহর ও আশপাশেরও একই চিত্র। সব মিলিয়ে বৃহত্তর ফরিদপুরে বইছে উৎসবের আমেজ।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেন চলাচলের নতুন এই পথ উদ্বোধন উপলক্ষে রং-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন ও আলোকসজ্জায় সেজেছে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। সরকারের উন্নয়নের চিত্র শোভা পাচ্ছে রাস্তার পাশের দেয়াল ও মোড়ে মোড়ে।

ভাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চার স্তরে চার হাজার নিরাপত্তাকর্মী থাকছেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইমদাদ হোসাইন জানান, পুলিশ ও বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাবের বিভিন্ন টিম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকেও থাকবেন।
জনসভা সফল করতে এক সপ্তাহ ধরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রস্তুতি সভা, মিছিল ও লিফলেট বিতরণ চলছে। জনসভাকে কেন্দ্র করে জেলার চারটি সংসদীয় আসনের সব ইউনিটের আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমরা দিনরাত কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য জনসভাস্থল ও আশপাশ এলাকায় দুই লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটানো।’ নৌকার আদলে প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলের মঞ্চ নির্মাণ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।
ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার মো. শাহজাহান জানান, প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-ভাঙ্গা রেল চলাচল উদ্বোধনের পর দ্রুত এই রেলপথ বাণিজ্যিকভাবে খুলে দেওয়া হবে। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হচ্ছে।

ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে ভাঙ্গায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সব প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ফরিদপুরে সর্বশেষ জনসভা করেন শহরের রাজেন্দ্র কলেজে ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ।

বর্ণিল সাজে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে

পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচল উদ্বোধন উপলক্ষে সেজেছে সেতুর মাওয়া প্রান্ত। তৈরি করা হয়েছে সুধী সমাবেশ মঞ্চ। এখানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। সেনাবাহিনী, র‍্যাব, পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, নৌ পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের একযোগে মোতায়েন করা রয়েছে। এ ছাড়া আকাশপথে থাকছে র‍্যাবের হেলিকপ্টারের নজরদারি।
বর্ণিল সাজে সেজেছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে। প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার সাঁটিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা। সড়কের মোড়ে মোড়ে তৈরি হয়েছে তোরণ। এই প্রচারে পিছিয়ে নেই বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও।

মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। এই এগিয়ে যাওয়ার পথে পদ্মা সেতু রেল প্রকল্প বিশাল এক মাইলফলক।’

মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মাওয়ায় সুধী সমাবেশ শেষে মাওয়া স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে চালু করা হচ্ছে আধুনিক সিবিআই সিগন্যালিং সিস্টেম। প্রথম ধাপে মাওয়া প্রান্তের মাওয়া স্টেশন, শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের পদ্মা স্টেশন ও মাদারীপুরের শিবচর স্টেশনে এই সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মো. মনোয়ার হোসেন জানান, কোথায় ট্রেন অবস্থান করছে, তা ডিজিটাল মনিটরে দেখা যাবে। এ জন্য স্টেশন এলাকায় ৪ থেকে ৩০ কোরের কপার কেবল ব্যবহার করা হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ ভোল্টের বিদ্যুৎ রাখা হয়েছে সঞ্চালন রেললাইনে। কোনোভাবে টেলিকমিউনিকেশন কাটা পড়লে, তা কোন দূরত্বে বা কোথায় কাটা পড়েছে, সেই বার্তা চলে আসবে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। এই সিগন্যাল টেলিকমিউনিকেশন আধুনিক রেল নেটওয়ার্কের প্রতীক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.