বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারে নেমে ভিন্ন রকম সাড়া ফেলেছেন তিন মেয়র পদপ্রার্থীর স্ত্রীরা। তিনজনই পেশায় গৃহিণী। তাঁরা দিন–রাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। মেয়র পদপ্রার্থী স্বামীর জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন, বিশেষ করে নারীদের নিয়ে আলাদা সভা-সমাবেশের পাশাপাশি মতবিনিময় সভা করে ভোটের মাঠে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।
এই তিন নারী হলেন—আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর স্ত্রী লুনা আবদুল্লাহ, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেনের স্ত্রী ইসমত আরা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসানের স্ত্রী হুমায়রা মিরাজ।
বরিশাল সিটি করপোরেশনে এবার ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫। এর মধ্যে নারী ভোটার পুরুষের তুলনায় বেশি। নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৪ জন। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের স্ত্রীরা এতটা তৎপর ছিলেন না। নারী ভোটার বেশি হওয়ায় এবার প্রার্থীদের স্ত্রীরাও মাঠে বেশি তৎপর।
এবার নির্বাচনের প্রচার শুরুর অনেক আগে থেকেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর স্ত্রী লুনা আবদুল্লাহ। তিনি প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে যাচ্ছেন, উঠান বৈঠকসহ নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। লুনা বৃদ্ধাশ্রমে নারী-পুরুষদের সঙ্গে কথা বলছেন। আবার বস্তি এলাকায় গিয়ে শিশুদের কোলে নিয়ে আদর করছেন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, তাঁদের খোঁজখবর নেওয়া, সমস্যার কথা শুনছেন এবং স্বামীর পক্ষে এসব সমস্যা সমাধানে আশ্বাসও দিচ্ছেন। শুধু নারী নয়, পুরুষ ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন। শুরু থেকে সবার আগে মাঠে নামায় লুনা আবদুল্লাহর নিরবচ্ছিন্ন এই কার্যক্রম নগরবাসীর মধ্যে আলাদাভাবে নজর কেড়েছে।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেনের স্ত্রী ইসমত আরা ইকবালও প্রচার শুরুর পর প্রতিদিনই নারীদের কাছে গিয়ে স্বামীর জন্য ভোট চাইছেন। স্বামীর পক্ষে নানা আশ্বাস দিচ্ছেন। এক সপ্তাহ ধরে স্বামীর জন্য ভোট চাইতে মাঠে নেমেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান ওরফে রূপণের স্ত্রী হুমায়রা মিরাজ।
নির্বাচনী প্রচার কাজে লুনা আবদুল্লাহর সঙ্গে থাকা নারী কর্মীরা বলছেন, আবুল খায়ের আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর ঘরে থাকেননি লুনা আবদুল্লাহ। সকাল-বিকেল এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত নগরের আনাচকানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। যেখানেই যান, সেখানে নারীরা আগ্রহ নিয়ে উপস্থিত হন। কুশল বিনিময় করেন, তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
লুনা আবদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নারীরা যাতে অবহেলিত না থাকেন, এ জন্য সব সময়ই আমাদের চেষ্টা-উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। আর এ জন্য শুরু থেকেই নারীদের কথা শুনতে তাঁদের কাছে যাচ্ছি, তাঁদের উৎসাহ দিচ্ছি। আবুল খায়ের আবদুল্লাহর স্ত্রী হিসেবে আগেও আমি তাঁর পাশে ছিলাম, এখনো একসঙ্গে কাজ করছি, সামনেও করব।’
ইসমত আরা ইকবালও ভোটের মাঠে বেশ সরব প্রচার চালাচ্ছেন। তাঁর স্বামী ইকবাল হোসেন বলেন, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ইসমত দিন-রাত মানুষের কাছে ছুটছেন। এরই মধ্যে তিনি ভোটারদের মন জয় করেছেন। তাঁর কাছে খুব সহজেই নারীরা নিজেদের দুঃখ-দুর্দশার কথা খুলে বলছেন।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে এবার ধনী ও শিক্ষিত প্রার্থী বেড়েছে
ভোটের মাঠে লুনা আবদুল্লাহ ও ইসমত আরার নির্বাচনী প্রচার তৎপরতার পর হুমায়রা মিরাজের প্রচার কার্যক্রম চোখে পড়ে। হুমায়রা পলাশপুর বস্তি, রসুলপুর, কলাতলা, পুরাণপাড়া, কাউনিয়া, গড়িয়ারপাড়, গণিফুলিয়াসগ প্রত্যন্ত এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারী ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে ভোটের মাঠে সাড়া ফেলেছেন।
হুমায়রা মিরাজ বলেন, ‘আমার শ্বশুর বরিশাল শহরে প্রায় ২০ বছর জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের সেবা করেছেন। বরিশালে বিএনপির অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি। একটি রাজনৈতিক পরিবারের পুত্রবধূ হিসেবে আমি মানুষের সঙ্গে মেশার শিক্ষা পেয়েছি। সেই শিক্ষা থেকেই নারী ভোটারদের কাছে যাচ্ছি, তাঁদের ভালোবাসা, আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।’
বরিশাল সিটির ভোটে নেই, তবু প্রার্থীদের প্রচারণায় সাদিকের নাম
তিন মেয়র পদপ্রার্থীর স্ত্রীদের এমন প্রচার তৎপরতা ভোটের মাঠে এবার যে বেশ সাড়া ফেলেছে তা জানা গেল ভোটারদের সঙ্গে আলাপে। নগরের আমির কুটির এলাকার ভোটার কুট্টি আক্তার বলেন, ‘এবার প্রার্থীদের স্ত্রীরা ভোট চাইতে আসছেন। এটা খুব ভালো লাগছে। কারণ, আমরা তো পুরুষ প্রার্থীদের কাছে আমাদের সমস্যার কথা মন খুলে তুলে ধরতে পারি না। এবার অন্তত তাঁদের স্ত্রীদের কাছে তুলে ধরতে পারছি।’
ভোটের মাঠে প্রার্থীদের এমন তৎপরতাকে ইতিবাচক মনে করছেন সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা। তিনি বলেন, পুরুষের তুলনায় এবার বরিশাল নগরে নারী ভোটার বেশি। তাই নারীদের সমস্যা আলাদা করে ভাবতে হবে। প্রার্থীদের স্ত্রীরা এবার আলাদাভাবে নারী ভোটারদের কাছে যাওয়ায় নারীরা ভোটে আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছেন। নারীরা তাঁদের দাবিদাওয়ার কথা তুলে ধরারও সুযোগ পাচ্ছেন।