‘বড় লোকের বিটি লো’ গানের স্রষ্টা পাচ্ছেন পদ্মশ্রী

0
110
২০২০ সালে সনি মিউজিকের ব্যানারে বলিউড র‍্যাপার বাদশার সংগীতায়োজনে ‘বড় লোকের বিটি লো’ গানটি নতুন করে ‘গেন্দা ফুল’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়

‘নিজের লেখা গান শুনতে ভালো লাগবে না? আমরা তো বাঙালি, আমাদের মনটা অনেক বড়। আমরা সরলও। এত বছর পর আবার যখন গানটি শুনলাম, ভালো লেগেছে। কিন্তু বাংলার মধ্যে হিন্দি ও ইংরেজি মিশিয়ে যা করা হলো, তা নিয়ে কী বলব বুঝতে পারিনি। কী আর করা। এভাবে উপস্থাপনে কষ্ট পেয়েছি। যেভাবে গানটি তৈরি করেছে, সেটা সত্যি ভালো লাগেনি।’ ২০২০ সালের ১ এপ্রিল প্রথম আলো বিনোদনের ছাপা হওয়ার এক সাক্ষাৎকারে নিজের গান নিয়ে কষ্টের কথা এভাবেই জানিয়েছিলেন গীতিকবি রতন কাহার।

২০২০ সালে সনি মিউজিকের ব্যানারে বলিউড র‍্যাপার বাদশার সংগীতায়োজনে ‘বড় লোকের বিটি লো’ গানটি নতুন করে ‘গেন্দা ফুল’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। গানটি ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় ছোট ছেলে শিবনাথ কাহারের মাধ্যমে প্রথম আলোর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের সিউড়ির বাড়ি থেকে মুঠোফোনে কথা বলেন অশীতিপর এই গীতিকবি। গত বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, নিভৃতচারী এই বাউল চলতি বছরের পদ্মশ্রী পদক পাচ্ছেন।

রতন কাহার জানালেন, জীবনের শেষ বেলায় আছেন তিনি। বয়স ৯০ ছুঁই ছুঁই। স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। সারা জীবন কেটেছে দারিদ্র্যের ভেতর। ভালোবাসেন গান; সারা জীবনই গানের সঙ্গে আছেন। সে অর্থে পাননি কিছুই। ২০২০ সালে গায়ক, র‍্যাপার বাদশার সংগীতায়োজনে প্রকাশিত ‘গেন্দা ফুল’ গানটি নিয়ে তখন অনেক বিতর্ক হয়।

নিজের ঘরে বসে লিখছেন গীতিকবি রতন কাহার। ছবি: সংগৃহীত

বিতর্কের কারণ ওই গান ব্যবহার করা নয়, গানের আসল স্রষ্টাকে স্বীকৃতি না দেওয়া। গানটির লেখক ও সুরকার বীরভূমের সিউড়ির বাসিন্দা রতন কাহার।
বিতর্কের একপর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের অনেকেই বাদশাকে গানটি সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানান। এরপর তিনি মূল শিল্পীকে স্বীকৃতি দেন। প্রকাশ্যে নিজের ভুল স্বীকার করেন এবং পাঁচ লাখ টাকাও দেন রতন কাহারকে। তাতে কি আর সারা জীবনের না পাওয়ার শূন্যতা পূরণ হয়? না পাওয়ার সেই গ্লানি যেন কিছুটা হলেও ঘুচল এবার। বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি ফোন আসে। আর সেই ফোনেই খুব খুশি রতন কাহার। তাঁকে জানানো হয়, পদ্মশ্রী পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে পদ্ম সম্মানে সম্মানিত করার জন্য এ বছর ১৩২ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে জায়গা পেয়েছেন বীরভূমের লোকসংগীতশিল্পী রতন কাহার। এদিকে রতন কাহারকে পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রদানের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ওই এলাকার বাসিন্দারা খুব খুশি। অনেকে এমনও বলছেন, অবশেষে তিনি জীবনের সন্ধিক্ষণে এসে যোগ্য সম্মান পেলেন।

‘বড় লোকের বিটি’ গানটির ইতিহাস বলতে গিয়ে ২০২০ সালে প্রথম আলোকে রতন কাহার বলেছিলেন, ‘এ গানটি আমি তৈরি করি ৪৮ বছর আগে। তৈরির পর আমি নিজেই গানটি আকাশবাণীতে গেয়েছিলাম। সে সময় গানটি অবশ্য জনপ্রিয়তা পায়নি। আমার মামার একটি গানের দল ছিল, সেখানে এই গান সবাই মিলে গাইতাম। তখন স্বপ্না চক্রবর্তী নামের একজন গানটি লিখে নেন। আর ১৯৭৬ সালের দিকে প্রথমবারে মতো তিনি “বড় লোকের বিটি লো” গানটি রেকর্ড করলে ছড়িয়ে যায় সবার মুখে মুখে। সেদিনই আমি এই গান নিয়ে দুঃখ পাই। কারণ, গানে গীতিকার হিসেবে আমার নাম উল্লেখ না করে “প্রচলিত গান” লেখা হয়! আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। তখন প্রতিবাদ করেছিলাম; কারণ, দৌড়ানোর মতো সময় ছিল। রেকর্ডিং যাঁরা করেছিলেন, তাঁদের কাছে গিয়েছিলাম। তখন আমার কথা তাঁরা আমলে নেননি। আমাকে বলেছিল, যেন “প্রচলিত গান” বিষয়টি মেনে নিই। ওটাই ছিল “বড় লোকের বিটি লো” নিয়ে প্রথম কষ্ট পাওয়া।’

স্ত্রীর সঙ্গে গীতিকবি রতন কাহার। ছবি: সংগৃহীত
স্ত্রীর সঙ্গে গীতিকবি রতন কাহার। ছবি: সংগৃহীত

একটি ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রতন কাহার বলেন, ‘অনেকেই আমার লেখা ও সুর করা গান নিয়ে নিজের নামে চালিয়েছেন। আমি গরিব, অসহায়। লোকে বেইমানি করলে আমি কী করব! আমরা মাটির গান লিখি, যদিও অনেকেই আমাদের সম্মান দেন না।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.