ফেনীতে বিএনপির পদযাত্রা শেষে আওয়ামী লীগের ‘শান্তি’ শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারীসহ অন্তত শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে শহরের ট্রাংক রোডের প্রেসক্লাব এলাকা, খেজুর চত্বর ও ইসলামপুর রোডের মাথায় এসব ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে ফেনী শহরের প্রধান সড়ক ট্রাংক রোড ও প্রেসক্লাবের আশপাশের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। হামলাকারীদের ইটপাটকেলের আঘাতে ফেনী প্রেসক্লাবসহ আশপাশের কয়েকটি ভবনের দরজা-জানালার কাচ ভেঙে যায়। এ সময় সড়কে থাকা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর হয়।
এর আগে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিএনপির নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে প্রথম দফা সংঘর্ষ হয়। বিএনপির পদযাত্রা চলাকালে শেষ মুহূর্তে শহরের ট্রাংক রোডের খেজুর চত্বর ও ইসলামপুর রোডের মাথার সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এর আগে বিকেল চারটার দিকে শহরের গ্র্যান্ড ট্রাংক রোডের দাউদপুর এলাকা থেকে পদযাত্রা শুরু করে বিএনপি। পদযাত্রাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যাওয়ার ঘোষণা কথা থাকলেও শহরের ট্রাংক রোডের খেজুর চত্বরে পৌঁছালে পুলিশ তাঁদের গতিপথ শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের দিকে এবং পরে ইসলামপুর রোডের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। মিছিলের পেছনের অংশ খেজুর চত্বরে পৌঁছালে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
একই সময় পাশে দোয়েল চত্বরে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির কর্মীদের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দুই দিকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। শহরের ইসলামপুর রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে বিএনপির পদযাত্রা শেষ হয়।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির পদযাত্রা শেষে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শহরে ‘শান্তি শোভাযাত্রা’ বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি ফেনী পৌরসভা চত্বর থেকে শুরু হয়ে ট্রাংক রোডের জিরো পয়েন্ট হয়ে তাকিয়া রোডের মাথায় যায়। সেখান থেকে আবার শহীদ মিনারে ফেরার পথে প্রেসক্লাবের পাশে খাজা আহাম্মদ সড়কের মাথায় পৌঁছালে কে বা কারা শোভাযাত্রায় একটি ককটেল নিক্ষেপ করেন। এতে শহরে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েকটি গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। সংঘর্ষে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতা-কর্মী, পথচারীসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, সংঘর্ষে তাঁদের অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফেনী শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হায়দার আলী রাসেল পাটোয়ারী, যুবদলের নেতা আল আমিন, এনামুল হক, গিয়াস উদ্দিন, মো. হাসান, আবু তৈয়ব বাবুল, সাহাব উদ্দিন, আবদুল করিম, রফিকুল ইসলাম জমিদার, শ্রমিক দলের নেতা নুরুল হুদা, কৃষক দলের আমীর হোসেন, মহিলা দলের নুর তানজিলা রহমানের নাম জানা গেছে।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল দাবি করেন, মিছিলের ওপর ককটেল নিক্ষেপ ও ইটপাটকেলের আঘাতে তাঁদের অন্তত ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ধর্মপুরের দয়াল, এনাম ও ছনুয়ার জমির উদ্দিনের নাম জানা গেছে। তাঁদের মধ্যে দয়ালকে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দুই দলের সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েকজন পথচারী আহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এ সময় শহরে প্রায় এক ঘণ্টা দোকানপাট ও সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল।
ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, ফেনীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচি শেষে ইসলামপুর রোডের মাথা ও প্রেসক্লাবের সামনে পৃথক উসকানিমূলক ঘটনায় সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ থামাতে কতটি ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়েছে গণনা করা হয়নি। সংঘর্ষে ফেনী মডেল থানার ওসিসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও উত্তেজনা থাকায় শহরে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি চলছে।