জীবনকে সুস্থ রাখার জন্য চাই সুস্থ ফুসফুস, সুস্থ নিঃশ্বাস আর বিশুদ্ধ বাতাস।
ফুসফুসের যত্নের শুরু মাতৃজঠরে থাকার সময় থেকেই। গর্ভাবস্থায় মায়ের অপুষ্টি, বিভিন্ন সংক্রামক রোগের সংক্রমণ, সময়ের আগে অপরিণত অবস্থায় স্বল্প ওজনের শিশুর জন্মগ্রহণ শিশুর ফুসফুসের বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। আবার জন্মের পর মাতৃদুগ্ধ পান নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমায়। এ কারণে হবু মা ও নতুন মায়ের যত্ন শিশুর সুস্থ ফুসফুসের পূর্বশর্ত। অন্যদিকে ধূমপায়ী বাবা শুধু তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্যই নয়, এমনকি যে শিশুটি এখনও ভূমিষ্ঠ হয়নি, তার জন্যও হুমকিস্বরূপ। ধূমপায়ী মায়েদের জন্য এ কথা আরও বেশি সত্য।
ফুসফুস বিভিন্ন সংক্রামক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার একটি প্রধান অঙ্গ। করোনা মহামারি আমাদের এই সত্য আরও ভালোভাবে বুঝিয়েছে। পুরো পৃথিবী ছোট্ট করোনাভাইরাসের কাছে অসহায় হয়েছিল। একইভাবে নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ইনফ্লুয়েঞ্জা এমনকি বিভিন্ন ছত্রাকজনিত রোগেরও আকর এ ফুসফুস। অথচ সামান্য স্বাস্থ্যবিধি, যেমন– নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমান সময়ে পরিবেশদূষণ ও বায়ুদূষণ একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। বায়ুদূষণের সরাসরি আঘাত হয় ফুসফুসে। অ্যাজমা, সিওপিডিসহ বিভিন্ন ফুসফুসের শ্বাসনালির বাধাজনিত রোগের সৃষ্টি এই বায়ুদূষণের জন্য। অতএব, পৃথিবীর সজীব নির্মল বায়ু নিশ্চিতকরণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা ফুসফুসের যত্নের একটি অংশ।
জীবিকার প্রয়োজনে আমরা বিভিন্ন ধরনের পেশা বেছে নিই। তার মধ্যে এমন কিছু পেশা আছে, যা ফুসফুসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন– পাথরভাঙা, জাহাজভাঙা, ওয়েল্ডিং, আঁশ ও তুষজাতীয় উপাদানের সংস্পর্শে থাকা ইত্যাদি। এই পেশার কারণে তৈরি ছোট ছোট ধূলিকণা বা সূক্ষ্ম তন্তু আমাদের ফুসফুসে আটকে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। অথচ কাজের সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করলে এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব; যে ব্যাপারে আমরা মোটেও সচেতন নই। তাই ‘অকুপেশনাল হেলথ’ বা জীবিকা-সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে। ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপে সম্মিলিতভাবে সবাই উপকৃত হতে পারেন। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ফুসফুসের তথা সঠিক স্বাস্থ্য রক্ষায় আরও মনোযোগী হতে হবে। শুধু চিকিৎসা নয়, রোগ প্রতিরোধে উদ্যোগী হওয়ার এখনই সময়। করোনা মহামারি আমাদের সে শিক্ষাটাই দিয়েছে।
লেখক : অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ ও কোষাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।