সিলেট সিটি করপোরেশনের ফুটপাত, নালা ও যাত্রীছাউনি দখল করে পাঁচটি নির্বাচনী কার্যালয় তৈরি করা হয়েছে। ২ জুন নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর চারজন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থনে এসব কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এতে পথচারীদের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। আগামী বুধবার এই সিটিতে ভোট গ্রহণ করা হবে।
সিটি করপোরেশন (নির্বাচনী আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬-এর ১৬ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা আছে, কোনো সড়ক কিংবা জনগণের চলাচল ও সাধারণ ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প বা কার্যালয় স্থাপন করা যাবে না।
জানতে চাইলে সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের বলেন, কোনো প্রার্থীই নাগরিকদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করতে পারবেন না। এটি আচরণবিধি লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায় ফুটপাত দখল করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রার্থীর সমর্থনে নগরের উপশহর মেইন রোডের সি ব্লকে স্থাপিত নির্বাচনী কার্যালয়ের ভেতরে পাশের নালাও ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে টুকেরবাজার এলাকায় স্থাপিত জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বাবুলের নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনের ফুটপাত বাঁশ ও শামিয়ানা টাঙিয়ে দখল করে কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ফুটপাত কিংবা নালা দখল করে কার্যালয় করার কথা নয়। বিষয়টি তাঁর জানা নেই। হয়ে থাকলে বিষয়টি দুঃখজনক। খোঁজখবর নিয়ে সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্টদের আজই (শনিবার) কার্যালয় অপসারণের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
অন্যদিকে মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘টুকেরবাজার এলাকায় আমার কার্যালয়টি একটি কক্ষে স্থাপন করা হয়েছে। সামনের ফুটপাত দখল করে কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত রাখার কথা নয়। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
নগরের উপশহর মেইন রোডের সি ব্লকে কাউন্সিলর প্রার্থী ছালেহ আহমদের (সেলিম) যে নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে, এর অংশবিশেষ পড়েছে নালা ও ফুটপাতের মধ্যে। ছালেহ আহমদ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এ ছাড়া নগরের শ্যামলী এলাকায় সংরক্ষিত ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী মোছা. হাজেরা বেগমের নির্বাচনী কার্যালয়টি একটি যাত্রীছাউনি ও এর সামনে অংশ দখল করে তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী ছালেহ আহমদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে মোছা. হাজেরা বেগম বলেন, ‘বিষয়টি আমি খেয়াল করিনি। খোঁজ নিয়ে দেখব।’
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ফুটপাত, নালা ও যাত্রীছাউনি দখল করে নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করায় মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। টানা কয়েক দিন নগরে বৃষ্টি হচ্ছে। যাত্রীছাউনি বেদখল হয়ে পড়ায় বৃষ্টির সময় অনেকে কার্যালয়ের ভেতরে যাত্রীছাউনিতে বসতে ইতস্তত বোধ করছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অবস্থান বিবেচনায় প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।
টানা তিন দিন নগরের ৪২টি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বেশির ভাগ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থনে বিভিন্ন বাসাবাড়ির দেয়ালে লোহা দিয়ে ব্যানার গেঁথে রাখা হয়েছে। নির্বাচনী কার্যালয় থেকে শুরু করে অনেক স্থানে রঙিন ব্যানার ও ফেস্টুন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুতের খুঁটি, গাছ, সড়ক বিভাজক, যাত্রীছাউনি ও কালভার্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পোস্টার ও ফেস্টুন সাঁটানো আছে। কোনো কোনো প্রার্থীর পক্ষে ট্রাকযোগেও প্রচারণা চালানো হচ্ছে। রাত আটটার পর মাইকের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও বিভিন্ন পথসভায় সেই নির্দেশনা উপেক্ষিত থাকছে।
সিলেটে ব্যাপকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক শাহ সাহেদা আখতার। তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই সিলেটে একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। অথচ তা রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফুটপাত, নালা, যাত্রীছাউনি দখল করে কার্যালয় স্থাপন যেমন দুঃখজনক, তেমনি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া আরও হতাশাজনক।’