ফরিদপুরের ঐতিহ্য বাগাটের দই। একবার খেলে এ দইয়ের স্বাদ মুখে লেগে থাকে, এমনটাই বলেন এখানকার মানুষ। যেকোনো অনুষ্ঠানে পাতে এই দই না পড়লে যেন খাবারের আয়োজন শেষ হয় না।
ফরিদপুর শহর থেকে ৩১ কিলোমিটার দূরে বাগাট ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের ঘোষপাড়ায় তৈরি করা হয় যে দই, তা ফরিদপুর শহরসহ আশপাশের এলাকায় বাগাটের দই হিসেবে পরিচিত।
বাগাটের দই প্রথম তৈরি করেন ভুবেন্দ্রনাথ ঘোষ। ১৯৪০ সালে তিনি প্রথম দই তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করেন বাগাটে। তখন তাঁর বয়স ২২ বছর। তাঁর বাড়ি বাগাটের ঘোষপাড়ায়। এরপর বাবার সঙ্গে যুক্ত হন ছেলে সুনীল কুমার ঘোষ। ১৯৮৬ সালে ভুবেন্দ্রনাথের মৃত্যু হলে দই তৈরি ও বিক্রির দায়িত্ব নেন সুনীল। দিনে দিনে এ দই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১৩ সালে সুনীলের মৃত্যুর পর সুকুমার ঘোষ, দেবু ঘোষ ও রাজকুমার ঘোষ বাবার ব্যবসার হাল ধরেন।
কম মিষ্টি আর ছানার ঘ্রাণে অনন্য ফরিদপুরের ‘খোকা মিয়ার রসগোল্লা’
তিন ভাইয়ের সহযোগী হিসেবে আছেন তাঁদের ফুফাতো ভাই প্রদীপ ঘোষ। এখন প্রদীপ ঘোষ দই তৈরির কাজ করেন। তিনজন কর্মচারী দুধ কেনা, জ্বাল দেওয়াসহ অন্য কাজগুলো করেন।
মালিকদের একজন সুকুমার ঘোষ বলেন, বর্তমানে চার ধরনের দই হয় তাঁদের। মিষ্টি দই ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। দুধের সর দিয়ে বানানো ক্ষীর দইয়ের কেজি ৩০০ টাকা। কোনো ধরনের মিষ্টি ছাড়া বানানো দইয়ের কেজি ৩০০ টাকা। আর টক দই বিক্রি হয় ১৫০ টাকা কেজি। তাঁদের মোট পাঁচটি শোরুম আছে। এখানে দইয়ের সঙ্গে নানা রকমের মিষ্টিও বিক্রি করেন তাঁরা। দোকানে মিষ্টি বিক্রির শুরুটা করেছিলেন তাঁদের মা গীতা রানী ঘোষ। প্রয়াত মায়ের স্মৃতি ধরে রাখতে দোকানে মিষ্টি রাখেন তাঁরা।
সুকুমার ঘোষ জানান, দইয়ের জন্য দুধ সংগ্রহ করতে বাড়িতে গরুর একটি বড় খামার করেছেন তাঁরা। খামারে আছে ৮০টি গরু। পাশাপাশি বাইরে থেকেও প্রচুর পরিমাণ দুধ কিনতে হয়।
বাগাটের দই মানুষের কেন এত প্রিয়—জানতে চাইলে সুকুমার ঘোষ বলেন, বিশেষ টেকনিক কিছু তো আছেই, সেটা প্রকাশ করার নয়। কাজগুলো শুধু পরিবারের সদস্যরা জানেন। কর্মচারীরাও জানেন না। এ ছাড়া দুধের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে স্বাদ কেমন হবে। ফরিদপুর ছাড়াও বাগাটের দই যায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বেশির ভাগ জেলায়।
শহরের ভাটিলক্ষ্মীপুর মহল্লার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী মুমিনুল হক (৬৪) বলেন, ‘বাগাটের দই একবার খেলে মুখে স্বাদ লেগে থাকে। তখন অন্য কোনো দই আর ভালো লাগে না।’
সিরাজগঞ্জে অনুষ্ঠান মানেই ‘রাজাপুরের দই’
সালথার সিংহ প্রতাপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহিদুজ্জামান খান বলেন, বাগাটের দই ফরিদপুরের ব্র্যান্ডিং হয়ে গেছে। সবার মুখে মুখে এ দইয়ের সুনাম। বিয়ে বা সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন হলে এই দই পরিবেশন করা হয়।