ফরিদপুরে প্রান্তর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

0
188

ফরিদপুরে কলেজছাত্র প্রান্ত মিত্র’র হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় পূজা উদযাপর পরিষদ জেলা, শহর ও উপজেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এ আল্টিমেটাম দেন। তা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনের নেতারা।

এর আগে মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে বন্ধুর বোনকে রক্ত দিতে বাসা থেকে বের হয়ে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স (বোটানি বিভাগ) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র প্রান্ত মিত্র (২৩)।

বিক্ষোভ পরবর্তী মানববন্ধনে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ননী গোপাল রায় বলেন, ‘ফরিদপুর একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার শহর। এই শান্ত শহরে গভীর রাতে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইনোসেন্ট ছাত্র প্রান্তর নৃশংস হত্যাকাণ্ড আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। ফরিদপুরের সাধারণ মানুষ আজ বিক্ষুব্ধ। আজকের কর্মসূচির মাধ্যে পুলিশ প্রশাসনকে সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই- আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রান্তর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের কাঠগড়ায় দেখতে চাই। তা না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব। আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করেছি। তারাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নজর রাখছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। অপরাধীদের ক্ষমতার হাত যতদূরই হোক আমরা তাদের বিচার দেখতে চাই।’

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি সুকেশ সাহা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি পূজা উদযাপর পরিষদের নেতাদের বিনীত অনুরোধ থাকবে- আপনারা অবিলম্বে প্রান্তর হত্যাকারীদের আইনের আওয়াতায় এনে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দিন। এই অসাম্প্রদায়িক ফরিদপুর শহরকে অশান্ত করছে কারা তাদের খুঁজে বের করুন। তা না হলে আমাদের রাজপথে নেমে তাদের প্রতিহত করতে হবে। অশান্ত শহরকে শান্ত করতে আমাদের কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য করবেন না। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফরিদপুর শহরকে অচল করে দিতে পারি। আমরা তা করতে চাচ্ছি না। আমরা প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছি। আপনারা দ্রুততার সঙ্গে অপরাধীদের আইনের আওয়াত আনতে না পারলে আমাদের কঠোর কর্মসূচি আসবে।’

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শংকর সাহা বলেন, ‘হঠাৎ করেই শান্ত ফরিদপুরে একের পর এক ঘটনার মধ্য দিয়ে অশান্ত পরিবেশ তৈরি করছে। এই কর্মকাণ্ডগুলোর সঙ্গে কারা সম্পৃক্ত, সঠিক তদন্তর মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে। আমরা চাই, ফরিদপুরবাসী যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে।’

এই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি তাপস সাহা, ডাক্তার প্রকাশ সরুপ অপু, ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিধান সাহা, সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সিতাংশু মিত্র কিংকর, পূজা উদযাপন পরিষদ শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কর্মকার, বাবু রাম কর্মকার, অশোক রাহুত বাপন, অজয় রায়, উৎপল দত্ত, অ্যাডভোকেট তুষার দত্ত, অমিত বিশ্বাস প্রমুখ। এ সময় অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, বন্ধুর বোনকে রক্ত দিতে সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে খুন হন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স (বোটানি বিভাগ) তৃতীয়ে বর্ষের ছাত্র প্রান্ত মিত্র (২৩)। এর আধা ঘণ্টা পর শহরের আলীপুর সেতুর উত্তর পাশের সড়কের পাশ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে কোতয়ালি থানা পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের অম্বিকাপুর শ্বশানে প্রান্তর সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। এই খুনের ঘটনার নেপথ্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা করছেন নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা। ঘটনার পর থেকে প্রান্তর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা পলাতক রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রান্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত সোমবার (২৪ জুলাই) ফরিদপুরে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন শহরের ঝিলটুলী মহল্লার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জনি। প্রান্ত তার অনুসারী হিসেবে মিছিল নিয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেন। সেখানে যাওয়ার আগে আলীপুরে শেখ রাসেল স্কয়ারে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধনের সময় তার স্েগ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের একটি গ্রুপের মারামারির ঘটনা ঘটে। কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকা থেকে সম্মেলনে যোগ দিলেও রহস্যজনক কারণে এ সম্মেলনে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। নতুন কমিটির সভাপতি প্রার্থী ছিলেন ২৩ জন, তাদের মধ্যে পদ পাওয়া নিয়ে বিরোধ চলছিল। এরপর সোমবার রাতে খুন হন প্রান্ত মিত্র।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.