খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প
এ প্রকল্পের ২০টি পাঁচতলা ভবনে ইতিমধ্যে ঠাঁই হয়েছে প্রায় ৬০০ পরিবারের। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ শুঁটকিশ্রমিক, জেলে, ভিক্ষুক, রিকশা ও ভ্যানের চালক। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশন।
পাঁচতলা ভবনের প্রতিটিতে ৬৫০ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট রয়েছে। ২০ লাখ টাকা দামের প্রতিটি ফ্ল্যাটবাড়ির মালিক হতে একেকটি পরিবারের খরচ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ১ টাকা করে। এ টাকাও রেজিস্ট্রির কাজে ব্যয় হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, মাত্র ১ হাজার ১ টাকায় ফ্ল্যাটবাড়ির মালিক হওয়ার নজির বিশ্বের কোথাও নেই। এটি গরিবের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দরদ ও আন্তরিকতার কারণে সম্ভব হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের দক্ষিণে বাঁকখালী নামের পাঁচতলা বনের চতুর্থ তলার ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটটি বরাদ্দ পেয়েছেন বিধবা ছবিলা বেগম (৪২)। সঙ্গে থাকেন তাঁর এক মেয়ে ও তিন ছেলে। তিন বছর আগে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে জলদস্যুদের হামলায় নিহত হন তাঁর স্বামী মোহাম্মদ ফোরকান। এত দিন তিনি ঝুঁপড়ি ঘরে ছিলেন।
শেখ হাসিনাকে একনজর দেখতে ৭ ডিসেম্বর জনসভায় যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে ছবিলা বেগম বলেন, ‘শেখ হাসিনার জন্য আমরা ফ্ল্যাটবাড়ির মালিক হয়েছি। বাচ্চাদের লেখাপড়ার সুযোগ পাইছে। হাসিনার জন্য কৃতজ্ঞতার শেষ নাই।’
রেল প্রকল্প
আগামী বছরের জুনে ট্রেনে চড়ে ঢাকায় যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন শহরের ঈদগাঁহ বাজারের স্কুলশিক্ষক নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, রেল কক্সবাজারবাসীর স্বপ্ন ছিল। এখন বাস্তবে পরিণত হচ্ছে।
রেল প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৭৭ শতাংশ। রেলপথ বসেছে ৫৫ কিলোমিটার। আইকনিক রেলস্টেশন ভবন, ছোট-বড় সেতু, কালভার্ট, লেভেল ক্রসিং ও হাইওয়ে ক্রসিংয়ের কাজও পুরোদমে চলছে। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
১০০ কিলোমিটারের নির্মাণাধীন রেলপথের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে আইকনিক রেলস্টেশন। কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের চাঁন্দেরপাড়ায় ২৯ একর জায়গায় নির্মিতব্য এ রেলস্টেশনের ছয়তলা ভবনের আয়তন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুট। যেখানে থাকছে তারকামানের হোটেল, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, শিশুযত্নকেন্দ্র, লকার বা লাগেজ রাখার স্থান।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে রাতের ট্রেন ধরে সকালে কক্সবাজারে নেমে পর্যটকেরা লাগেজ, মালামাল স্টেশনে রেখে সারা দিন সমুদ্রসৈকত বা দর্শনীয় স্থান ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ফিরতে পারবেন গন্তব্যে।
বিমানবন্দরের রানওয়ে প্রকল্প
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর শৈশবের অনেক স্মৃতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েকে সাগরের দিকে আরও ১ হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারণ করা। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সুপরিসর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হবে।
রানওয়ের ৪২ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে জানিয়ে এ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, অবশিষ্ট কাজ আগামী বছরের অক্টোবর মাস নাগাদ শেষ হলে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত হবে, যা হবে দেশের সর্ববৃহৎ রানওয়ে। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৫০০ ফুট।
বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস-বাংলা, নভোএয়ারসহ দৈনিক ২৫-৩০টি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে এবং কক্সবাজার-যশোর রুটে চিংড়ি পোনা সরবরাহ দিচ্ছে ৬-৮টি কার্গো বিমান। সাগরজলের রানওয়ের কাজ শেষ হলে নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর, ৭৪৭-৪০০ ও এয়ারবাসের সহজে ওঠানামা সম্ভব হবে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান মো. নুরুল আবছার বলেন, ৭ ডিসেম্বরের দলীয় জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের উন্নয়নে নতুন প্রকল্প ঘোষণা দিতে পারেন। এখন শেখ হাসিনার প্রতি কক্সবাজারবাসীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পালা।
৭ ডিসেম্বর সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের মোহাম্মদ শফিরবিল সৈকতে (রয়েল টিউলিপ হোটেলের সামনে) তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নৌশক্তি প্রদর্শন মহড়ার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিন বেলা আড়াইটায় শহরের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা।
এর আগে ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন শেষে কক্সবাজার শহরের একই স্টেডিয়ামে দলীয় জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পাঁচ বছর পর শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে পুরো শহরকে সাজানো হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে শহর। বিভিন্ন সড়কে নির্মাণ হয়েছে শতাধিক তোরণ।