‘প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের মানুষের শিক্ষা আর সব সেবা ফ্রি করে দেব’

0
19
ঋতুপর্ণা চাকমা

খেলোয়াড় পরিচয়ে সবাই তাঁদের চেনেন। কিন্তু সেই পরিচয়ের বাইরে তাঁদের অন্য জীবনটা কেমন? সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়দের সঙ্গে এই ঝটপট প্রশ্নোত্তর পর্বে সেটাই জানার চেষ্টা…

আজকের তারকা: ঋতুপর্ণা চাকমা

রাঙামাটি থেকে উঠে এসে দ্রুতই আলো কেড়েছেন। গত বছর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে হয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা নারী খেলোয়াড়ও। বাংলাদেশের নারী ফুটবলে আলোকিত মুখ ঋতুপর্ণা চাকমা এখন ভুটানে। সেখানকার নারী লিগে খেলবেন পারো এফসিতে। কথা বলেছেন তাঁর ভুটানের জীবন ও মাঠের বাইরের নানা প্রসঙ্গে। টেলিফোনে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুদ আলম

প্রশ্ন: গত ৬ এপ্রিল ভুটান গেছেন আপনারা। এক মাস হয়ে গেল। কেমন আছেন? দিনকাল কেমন কাটছে?

ঋতুপর্ণা চাকমা: ভালোই কাটছে। সব মিলিয়ে ভালো আছি। এখন বেশ ঠান্ডা, কদিন আগে ৩ ডিগ্রিতে নেমেছিল। প্রথম দিকে একটু সমস্যা হয়েছে। এখন মানিয়ে নিয়েছি।

প্রশ্ন: গত মাসে শুরু হওয়ার কথা ছিল ভুটানের নারী লিগ, সেটা তো হয়নি। খেলা কবে শুরু?

ঋতুপর্ণা: এই ১০ তারিখে শুরু হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: আপনার ক্লাবের খেলা কবে?

ঋতুপর্ণা: এখনো জানি না (হাসি, পারোর প্রথম ম্যাচ ১৫ মে)।

ভুটানের ক্লাব পারোর হয়ে অনুশীলন শুরু করেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা
ভুটানের ক্লাব পারোর হয়ে অনুশীলন শুরু করেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা,ছবি: ইনস্টাগ্রাম
প্রশ্ন: সারা দিন কীভাবে কাটে?

ঋতুপর্ণা: সারা দিনই ব্যস্ত থাকি। সকালে ঘুম থেকে উঠে সাড়ে আটটার দিকে ব্রেকফাস্ট করি, নয়টার দিকে জিম। কখনো কখনো এক্সট্রা জিম করি। সাধারণত বিকেলে ৫-৭টা পর্যন্ত ট্রেনিং থাকে। সারা দিনই আসলে ব্যস্ততায় কেটে যায়। সময় তেমন পাই না।

প্রশ্ন: কিন্তু ম্যাচ তো নেই।

ঋতুপর্ণা: ম্যাচ না থাকলেও আমরা এখানে ছেলেদের আন্ডার সিক্সটিন, ফোরটিনের সঙ্গে ম্যাচ খেলি। পারোর ছেলেদের ম্যাচ থাকলে দেখতে যাই। সম্ভবত আজও যাব।

প্রশ্ন: কিন্তু নিজেরা লম্বা সময় অপেক্ষা করছেন ম্যাচের জন্য, খারাপ লাগে না?

ঋতুপর্ণা: খারাপ লাগার কী আছে, এটা তো পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। আমরা তো কন্টিনিউ ট্রেনিংয়ের ওপর আছি। এমন নয় যে আমরা ট্রেনিংয়ের বাইরে।

প্রশ্ন: আপনারা কি ক্লাব ভবনেই থাকেন?

ঋতুপর্ণা: আমরা ক্লাব সভাপতির নিজস্ব রিসোর্টে থাকি। পারো এয়ারপোর্টের পাশেই। পাহাড়ি ঢালু রাস্তার নিচে নদী, এর গা ঘেঁষেই মনোরম রিসোর্টটা। নাম তাশি নামগে। ফরেন প্লেয়াররা এই রিসোর্টে থাকে। এটা পারো শহরের সবচেয়ে বড় রিসোর্ট না মনি (পাশে মনিকাকে প্রশ্ন। মনিকা বলেন, হুঁ)! মনিকা আমার রুমমেট। সাবিনা আর সুমাইয়া আপু থাকে এক রুমে।

পারোর হয়ে খেলতে ভুটানে গেছেন (বাঁ থেকে) সুমাইয়া, ঋতুপর্ণা, সাবিনা ও মনিকা
পারোর হয়ে খেলতে ভুটানে গেছেন (বাঁ থেকে) সুমাইয়া, ঋতুপর্ণা, সাবিনা ও মনিকা,ছবি: ইনস্টাগ্রাম
প্রশ্ন: সাবিনার কথা বলুন, তিনি কী করছেন?

ঋতুপর্ণা: আপু ভালো আছেন। তিনিই আমাদের গাইড করেন বড় বোনের মতো। আমাদের কোনো কিছু নিয়ে আপসেট হতে দেন না। ওনাকে আমরা সবাই অনেক সম্মান ও শ্রদ্ধা করি।

প্রশ্ন: সানজিদা, মারিয়াদের সঙ্গে দেখা হয়?

ঋতুপর্ণা: গত সোমবার দেখা করে আসছি ওদের সঙ্গে। যেদিন ওয়ার্ক পারমিটের জন্য গিয়েছিলাম থিম্পু। মারিয়ারা থাকে রাজধানী থিম্পু শহরে, আমরা পারো শহরে। প্রায় এক ঘণ্টার রাস্তা। সেদিন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও দেখা করেছি আমরা।

প্রশ্ন: পারোতে বাংলাদেশি ছাড়া অন্য দেশের খেলোয়াড় আছেন?

ঋতুপর্ণা: যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে একজন গোলকিপার, হংকং থেকে এসেছে একজন ডিফেন্ডার। আমরা চারজন বাংলাদেশিসহ সব মিলিয়ে ছয়জন বিদেশি আছে পারো টিমে।

সর্বশেষ সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা
সর্বশেষ সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা, ছবি: ফেসবুক
প্রশ্ন: ভুটানের লিগে একটি ক্লাবে সর্বোচ্চ কয়জন বিদেশি খেলতে পারেন?

ঋতুপর্ণা: ছয়জন।

প্রশ্ন: পারো এফসি ক্লাবটা কেমন?

ঋতুপর্ণা: অনেক ভালো। সুযোগ–সুবিধা অনেক। যেটা আমাদের দেশে অনেক ক্লাবেরই নেই। থাকা-খাওয়া, কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে সবই ভালো। ছেলেদের দলে স্প্যানিশ কোচ। মেয়েদের কোচরা সব স্থানীয়। তবে অনেক ভালো। নিজস্ব মাঠ, জিমসহ একটা ক্লাবের যা থাকা দরকার, সবই আছে। নিজস্ব গ্যালারিও আছে, ক্যাফে আছে। টার্ফের মাঠ, অনেক ভালো। আমাদের কমলাপুরের মতো নয়।

পারো এফসির সুযোগ–সুবিধা বেশ উন্নত মানের
পারো এফসির সুযোগ–সুবিধা বেশ উন্নত মানের, ছবি: ফেসবুক
প্রশ্ন: তাহলে তো বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক পার্থক্য?

ঋতুপর্ণা: অনেক…অনেক। এখানে পারোর একাডেমি আছে। আন্ডার ফাইভ থেকে শুরু করে টোয়েন্টি পর্যন্ত আছে একাডেমি। ক্লাবের একাডেমির মাঠ আলাদা, সবকিছুই আলাদা। ছোট-বড়দের মাঠ আলাদা। ওরা অনেক পেশাদার। বাংলাদেশের লিগটা প্রফেশনাল নয়। এক মাসে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এখানে লিগ অন্তত ছয় মাসব্যাপী করতে হবে।

প্রশ্ন: ওখানে খাওয়াদাওয়া কেমন?

ঋতুপর্ণা: অনেক অনেক ভালো। আমরা বুফেতে খাই। আমরা যদি বলি যে আমরা বাঙালি ফুড খাব, তাহলে সেটা রান্না করে দেবে। মানে যা চাইব, তা–ই দেবে। আমরা ভুটানিজ খাবার ট্রাই করিনি। তবে এখানে বাঙালিদের মতো বিরিয়ানি, খিচুড়ি—এসব খাই না। স্বাস্থ্যের জন্য যা ভালো, সেটা মেনে ডায়েট অনুযায়ী খাই।

প্রশ্ন: খেলা তো নেই। অনুশীলন, জিম—এসবের বাইরে পাওয়া সময়টা কীভাবে পার করেন?

ঋতুপর্ণা: বাসায় কথা বলি। একটু হাঁটাহাঁটি করি, গল্প করি রুমমেটের সঙ্গে। পারো টিমে আমরা বাংলাদেশের চারজন মিলে গল্প করি।

প্রশ্ন: বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়েছে?

ঋতুপর্ণা: ২০ এপ্রিল গিয়েছিলাম। পারোর সবচেয়ে দর্শনীয় স্থানে, টাইগার নেস্টে। পাহাড়ময় এলাকাটায় একটা মন্দির আছে। ভুটানের ঐতিহ্যবাহী স্থান। দেশটির অনেক ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত। আমরা পারোর পুরো টিম, ছেলে-মেয়ে সবাই। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ১২০ মিটার উঁচু। হাইকিং করেছি সেদিন।

ভুটানে রোমাঞ্চকর সময় কাটছে ঋতুপর্ণার
ভুটানে রোমাঞ্চকর সময় কাটছে ঋতুপর্ণার, ছবি: ইনস্টাগ্রাম
প্রশ্ন: নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সময় আপনার অনেক ভক্ত হয়ে গিয়েছিল। ভুটানেও কি ভক্ত হয়ে গেছে অনেক?

ঋতুপর্ণা: এখানে আমাদের অনেক ফ্যান আছে না মনি? (পাশে মনিকাকে প্রশ্ন। মনিকা বলেন, হ্যাঁ, আছে)। সবারই অনেক ফ্যান আছে। সবাই আমাদের চেনে। পারোর ফ্যানরা চেনে।

প্রশ্ন: আপনি যে সাফের সেরা খেলোয়াড়, ভুটানের ফুটবল ফ্যানরা কী জানেন?

ঋতুপর্ণা: জানে। আমি এই যে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির পুরস্কার পেলাম, সবাই আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। পারোর ফেসবুক পেজে সেটা দিয়েছে। তবে পুরস্কারটা নিজের হাতে নিতে পারলে বেশি ভালো লাগত।

প্রশ্ন: ভুটানে কী বেশি ভালো লেগেছে?

ঋতুপর্ণা: সবচেয়ে ভালো লাগে এখানকার মানুষ—অনেক লাভিং, কাইন্ড, হেল্পফুল। আমরা সবাই মিলেমিশে থাকি। এনজয় করি। ট্রেনিংয়ে বলেন, আউট অব ট্রেনিংয়ে বলেন, মনেই হয় না আমরা আলাদা দেশ থেকে এসেছি। ওরা আমাদের এমনভাবে ট্রিট করে যে আমরা তাদের মতোই। আমাদের ক্লাব প্রেসিডেন্ট সব সময় খোঁজ রাখেন, মাঠে আসেন। ম্যানেজার সব সময় টিমের সঙ্গে থাকেন।

ভুটানে সময়টা উপভোগ করছেন ঋতুপর্ণা
ভুটানে সময়টা উপভোগ করছেন ঋতুপর্ণা, ছবি: ইনস্টাগ্রাম
প্রশ্ন: ভুটানের ভাষা কি দু–একটা শেখা হয়েছে?

ঋতুপর্ণা: (হাসি) আমি শুধু পারি হ্যালো বা হাউ আর ইউ। ভুটানের ভাষায় এটাকে বলে কুজুজাংপো।

প্রশ্ন: অবসর সময়ে কী করতে আপনার সবচেয়ে ভালো লাগে?

ঋতুপর্ণা: আমি গান শুনতে পছন্দ করি। ফোন দেখি, নিউজফিড দেখতে ভালো লাগে।

প্রশ্ন: কী গান শোনেন, প্রিয় শিল্পী কে?

ঋতুপর্ণা: ওই রকম কিছু নয়। প্রিয় গায়ক-টায়ক নেই। ইংলিশ, বাংলা, হিন্দি—সবই শুনি। মুডের ওপর নির্ভর করে। আমি নতুন নতুন গান শুনতে বেশি পছন্দ করি।

প্রশ্ন: রবীন্দ্রসংগীত শোনেন?

ঋতুপর্ণা: না না। রবীন্দ্রসংগীত শোনা হয় না।

প্রশ্ন: আপনাদের চাকমা গানও তো আছে।

ঋতুপর্ণা: হ্যাঁ, চাকমা গানও শোনা হয়। তবে সে রকম প্রিয় গায়ক-গায়িকা নেই।

ঋতুপর্ণার জন্ম, বেড়ে ওঠা রাঙামাটিতে
ঋতুপর্ণার জন্ম, বেড়ে ওঠা রাঙামাটিতে, ছবি: ইনস্টাগ্রাম
প্রশ্ন: সিনেমা দেখেন?

ঋতুপর্ণা: সিনেমা দেখার সময় পাই না। তবে দেখেছি কিছু ছবি। ‘তুফান’ দেখতে গেছিলাম, ‘তুফান’…শাকিব খানের।…কী যেন মনি…‘দামাল’ না? ও হ্যাঁ, ‘পরান’ও দেখেছি। এগুলো আমাদের দেখা শেষ। হলে গিয়ে দেখা হয়েছে।

প্রশ্ন: তাহলে তো মনে হচ্ছে আপনার প্রিয় নায়ক শাকিব খান, নাকি?

ঋতুপর্ণা: না…না…না…। আমার প্রিয় নায়ক-নায়িকা বলতে কেউ নেই।

প্রশ্ন: কী বলেন, কাউকেই ভালো লাগে না?

ঋতুপর্ণা: শাকিব খানের অ্যাক্টিং ভালো লাগে। তবে প্রিয় নন।

প্রশ্ন: আপনার প্রিয় খাবার কী?

ঋতুপর্ণা: মায়ের হাতের রান্না। মা যা রান্না করে, সবই ভালো লাগে, সবই প্রিয়। সেটা আমাদের চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার বাঁশকোঁড়লও হতে পারে। তবে বিরিয়ানি-টিরিয়ানি ভালো লাগে না।

মায়ের হাতের রান্না ঋতুপর্ণার প্রিয় খাবার
মায়ের হাতের রান্না ঋতুপর্ণার প্রিয় খাবার, ছবি: ফেসবুক
প্রশ্ন: প্রিয় পোশাক?

ঋতুপর্ণা: জিনস, টপস।

প্রশ্ন: শাড়ি পরেন?

ঋতুপর্ণা: না না। শাড়িতে একেবারেই কমফোর্টেবল নই। শাড়ি দু-তিনবার পরেছি। তবে থ্রি–পিস ওকে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী চাকমা পোশাক আছে, ওটায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। যদিও পরার সময় পাই না। কোনো উৎসব হলে হয়তো পরা হয়।

প্রশ্ন: জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় স্মৃতি কী?

ঋতুপর্ণা: সে রকম কিছু মনে পড়ছে না। সব ভুলে গেছি (হাসি)। তবে সবচেয়ে স্মরণীয়, সাফে আমরা চ্যাম্পিয়ন হলাম। গত বছর সাফের সেরা খেলোয়াড় হলাম। পুরস্কার পেলাম।

প্রশ্ন: সাফে পুরস্কারের ৫০ হাজার টাকা কী করলেন?

ঋতুপর্ণা: ওই টাকাগুলো এখনো খরচ করিনি। নিজের কাছে আছে। মায়ের জন্য কিছু কিনব বলেছিলাম। তার জন্য অবশ্য সব সময়ই কিনি।

প্রশ্ন: আপনি তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনে ভর্তি হয়েছেন ২০২৩ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কি একেবারেই যাওয়া হয় না?

ঋতুপর্ণা: খুব কম। প্রয়োজন ছাড়া যাই না। সবশেষ কবে গেলাম, মনে নেই। এমনিতে ক্লাস করেছি, পরীক্ষাও দিয়েছি।

প্রশ্ন: বিকেএসপির জীবনটা কেমন ছিল?

ঋতুপর্ণা: বিকেএসপিতে বেশি দিন থাকিনি। ২০১৬ সালে ভর্তি হই। ওই এক বছরই ছিলাম বিকেএসপিতে। ২০১৭ সালে বাফুফের ক্যাম্পে চলে যাই। সেই থেকে আমার জীবন কেটেছে বাফুফেতে। পড়াশোনা, খেলাধুলা—সবই বাফুফের ভবনে থেকে। জীবনের অর্ধেক সেখানেই কেটেছে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ নারী দলে আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধু কে?

ঋতুপর্ণা: বন্ধু বলতে সে রকম কেউ নেই। তবে মনিকা আছে। সেই ছোট থেকে ওর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক।

প্রশ্ন: আপনি রাঙামাটির, মনিকা খাগড়াছড়ির। ছোটবেলা থেকে সম্পর্কটা কীভাবে?

ঋতুপর্ণা: ও কিন্তু রাঙামাটিতেই বড় হয়েছে। আমাদের ঘাগড়া এলাকায়। খাগড়াছড়ি ছেড়ে ও আমাদের এলাকায় থাকত, পড়ত, খেলাধুলা করত। ও তো এখানে আমার রুমমেট।

প্রশ্ন: ছোটবেলার কোন স্মৃতিটা বেশি মনে পড়ে?

ঋতুপর্ণা: বলে লাথি মারতে গিয়ে বুড়ো আঙুলের নখ উঠে যায়। ২০১৩ সালের কথা । তখন আসলে জানতাম না মেয়েরাও ফুটবল খেলে।

প্রশ্ন: আপনার বাবা, ভাই মারা গেছেন। চার বোনের একজন আপনাদের বাড়িতে থাকেন বলে জানি। আপনার মা কেমন আছেন?

ঋতুপর্ণা: মা ভালো নেই। ব্রেস্টে টিউমার ধরা পড়ছে। ডাক্তারের কাছে গেছে। কী হয় কে জানে। বেশি সমস্যা হলে অপারেশন করতে হবে। আমি বাসায় থাকতেই এটা ধরা পড়ে।

প্রশ্ন: ভয় পান কিছু?

ঋতুপর্ণা: না, ভয় পাই না। কোনো কিছুই ভয় পাই না। তবে সাপ, কেঁচো, জোঁক—এই তিনটাকে ভয় পাই।

প্রশ্ন: প্রথম বিমানে ওঠার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

ঋতুপর্ণা: ২০১৭ সালে হংকং যাই। আন্ডার ফিফটিন খেলতে…চার ঘণ্টার মতো জার্নি। একটু রোমাঞ্চিত ছিলাম। যখন শুনি যে টিমে আছি, অনেক খুশি ছিলাম।

প্রশ্ন: লটারিতে কোটি টাকা পেলে কী করবেন?

ঋতুপর্ণা: এটা কখনো পাব না জানি (হাসি)। তবে পেলে সব গরিব মানুষকে দিয়ে দেব। এটা আমার খুব ইচ্ছা। কখনো টাকাপয়সা পেলে গরিব মানুষকে সাহায্য করব।

শাড়িতে ঋতুপর্ণা চাকমা
শাড়িতে ঋতুপর্ণা চাকমা, ছবি: ফেসবুক
প্রশ্ন: ধরুন, এক দিনের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন। কী করতে চাইবেন দেশের মানুষের জন্য?

ঋতুপর্ণা: ভুটানে একটা জিনিস দেখেছি, ভুটানিজরা রাজাকে খুব মানে। এখানে শিক্ষা আর সেবা সব ফ্রি। তো আমি প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের মানুষের শিক্ষা আর সব সেবা ফ্রি করে দেব। এখানে আপনি হাসপাতালে যাবেন, ফ্রিতে সেবা করবে। আর বাংলাদেশে, ওহ্‌ মাই গড…হাজার হাজার টাকা লাগে।

প্রশ্ন: আর যদি কখনো বাফুফের সভাপতি হয়ে যান?

ঋতুপর্ণা: আমি আগে মেয়েদের ফ্যাসিলিটির কথা চিন্তা করব। কারণ, মেয়েরা যা প্রাপ্য, তা পায় না। ছেলেদের জন্যও করব, তবে মেয়েদেরটা বেশি গুরুত্ব দেব। এত দূরে অবশ্য চিন্তা করতে চাই না (পাশে বসে মনিকা হাসছিলেন)।

প্রশ্ন: একজন মানুষের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ এলে কার সঙ্গে দেখা করতে চান?

ঋতুপর্ণা: রোনালদোর সঙ্গে। সিআর সেভেনকে জিজ্ঞেস করব, কীভাবে এত হার্ডওয়ার্ক করেন! এত ধৈর্য কীভাবে ওনার!

প্রশ্ন: ফুটবলের বাইরে প্রিয় খেলা?

ঋতুপর্ণা: ব্যাডমিন্টন ভালো লাগে।

প্রশ্ন: আর ক্রিকেট?

ঋতুপর্ণা: ক্রিকেট আমি পারি না। ভালো লাগে না (হাসি)।

প্রশ্ন: কবে ফিরবেন দেশে?

ঋতুপর্ণা: জানি না। এ মাসের শেষ সপ্তাহে যদি জর্ডান সফরের জন্য জাতীয় দলে ডাকে বাফুফে, তাহলে আসা হবে। না হলে হবে না। আসলে না ডাকলে তো আমাদের কিছু করার নেই। ভুটানের লিগ শেষ করে ফেরা হবে।

ফুটবলার না হলে শিক্ষক হতেন ঋতুপর্ণা
ফুটবলার না হলে শিক্ষক হতেন ঋতুপর্ণা, ছবি: ফেসবুক
প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। ফুটবলার না হলে কী হতেন?

ঋতুপর্ণা: বাচ্চাদের পড়াতে আমার ভালো লাগে। তাই ছোটবেলায় ইচ্ছা ছিল প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হওয়া। হতে পারতাম কি না, জানি না। এখন আর কোনো শখ নেই ফুটবল ছাড়া। ফুটবলার হয়ে আমি খুশি। ফুটবলের জন্যই আজ আমি এত দূর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.