প্রধান উপদেষ্টার বিবৃতি যত ক্ষমতাবানই হোক, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়—এটা পুনর্নিশ্চিত করেছে এই রায়

0
18
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আজ বাংলাদেশের আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা সারা দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এই রায় ও সাজা একটি মৌলিক নীতিকে পুনর্নিশ্চিত করেছে—যত ক্ষমতাবানই হোক, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষ এবং এখনো সেই ক্ষত বহনকারী পরিবারগুলোর জন্য এই রায় সীমিত মাত্রায় হলেও ন্যায়বিচার এনে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ইউনূস।

আজ সোমবার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছরের নিপীড়নে ভেঙে পড়া গণতান্ত্রিক ভিত্তি পুনর্নির্মাণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। যে অপরাধগুলো নিয়ে বিচার হয়েছে—তরুণ ও শিশু, যাদের একমাত্র অস্ত্র ছিল তাদের কণ্ঠস্বর, তাদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের আদেশ, যা আমাদের আইন এবং সরকার–নাগরিক সম্পর্কের মৌলিক বন্ধনকে লঙ্ঘন করেছে। এসব জঘন্য কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মূল মূল্যবোধ—মর্যাদা, দৃঢ়তা ও ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারকে আঘাত করেছে।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁরা শুধুই সংখ্যা নন; তাঁরা ছিলেন আমাদের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। গত কয়েক মাসের সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, কীভাবে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি—এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও ব্যবহার করা হয়েছিল। এই রায় তাঁদের ভোগান্তিকে স্বীকৃতি দেয় এবং আমাদের বিচারব্যবস্থায় অপরাধীদের জবাবদিহির নিশ্চয়তা পুনর্ব্যক্ত করে।’

বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক জবাবদিহির ধারায় পুনরায় যুক্ত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনের পক্ষে দাঁড়ানো শিক্ষার্থী ও নাগরিকেরা এটি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন এবং তাঁদের অনেকেই জীবন দিয়ে মূল্য দিয়েছেন—তাঁদের বর্তমান উৎসর্গ করেছেন আমাদের ভবিষ্যতের জন্য।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সামনের পথচলায় শুধু আইনি জবাবদিহি নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনও জরুরি। প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের জন্য মানুষ কেন সবকিছু ঝুঁকির মুখে ফেলে—তা বোঝা এবং সেই আস্থার উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থা তৈরি করা অপরিহার্য। আজকের রায় সেই যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমার দৃঢ়বিশ্বাস, বাংলাদেশ সাহস ও বিনয়ের সঙ্গে সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং প্রতিটি মানুষের সম্ভাবনার প্রতি অঙ্গীকারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার বাংলাদেশে শুধু নামেমাত্র টিকে থাকবে না; এটি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সুদৃঢ় হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.