সিলেটে ভোটের মাঠে মেয়র পদপ্রার্থী সাতজন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীদের মধ্যে। টানা দুবার হারের বেদনা কাটিয়ে আওয়ামী লীগ এবার জয় পেতে মরিয়া। দলটি সর্বশক্তি নিয়েই প্রচারে নেমেছে। অন্যদিকে বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সুযোগ নিতে চাইছে জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারাও সিলেট নগরীর সর্বত্র ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে এবং তাদের প্রচারণায় প্রাধান্য পাচ্ছে সরকারের সমালোচনা।
স্থানীয় রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মতে, গত দুটি নির্বাচনে জয় পাওয়া বিএনপিদলীয় বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে না আসায় তুলনামূলকভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এগিয়ে আছেন।
তবে বিএনপি, জামায়াতসহ বিরোধী বলয়ের ভোট যদি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রতিপক্ষ অন্য কোনো প্রার্থী এককভাবে পান, তাহলে ভোটের সব হিসাব-নিকাশ অনেকটাই বদলে যেতে পারে। এটি মাথায় রেখে আওয়ামী লীগও বিরোধী বলয়ের ভোট নিজেদের পক্ষে আনতে কৌশলী প্রচারণা চালাচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান নগরের একাধিক স্থানে গণসংযোগ, মতবিনিময় ও উঠান বৈঠক করেন।
এসব কর্মসূচিতে প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে সিলেট নগরের পরিকল্পিত ও অত্যাধুনিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন বলে নানা প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়া গতকাল অন্য চার মেয়র প্রার্থী জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম এবং স্বতন্ত্র মো. আবদুল হানিফ, মো. ছালাহ উদ্দিন ও মো. শাহ জামান মিয়ার তৎপরতা দেখা যায়নি।
২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি-জামায়াতকে ‘চটাতে’ চায় না আ.লীগ
সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন গত ২০ মে। এর আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সভা-সমাবেশে আরিফুল হকের বিরুদ্ধে অপরিকল্পিত উন্নয়নের অভিযোগ এনে সমালোচনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন।
পরে আরিফুল হক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে আনোয়ারুজ্জামানের বক্তব্যের ধরনও পাল্টে যায়। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সমালোচনার বদলে আরিফুল হকের প্রশংসা করে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। আরিফুল হকের প্রশংসা করে বক্তব্য দেওয়ার সেই ধারা এখনো অব্যাহত রেখেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, গত দুটি নির্বাচনে জয় পাওয়ার পর আরিফুল হক তাঁর কাজ ও আন্তরিকতা দিয়ে নগরবাসীর কাছে ইতিবাচক একটা ভাবমূর্তি তৈরি করেন। এর ফলে নিজ দল বিএনপির বাইরেও তাঁর ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে।
এ অবস্থায় মেয়র আরিফুল হক নির্বাচনে না আসার কারণে অযথা তাঁকে নিয়ে আওয়ামী লীগ ঘাঁটাঘাঁটি করতে চাইছে না। কারণ, আরিফুল হকের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিলে বিপুলসংখ্যক ভোটারের কাছে নেতিবাচক বার্তা ছড়াতে পারে। ভোটের কারণেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী কিছুদিন আগে মেয়র আরিফুলের বাসায়ও গিয়ে দেখা করেছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কিছু বিষয় স্ববিরোধী হলেও এখানে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ কৌশলী অবস্থান নিচ্ছে। যেমন সিলেটে বিএনপির ৪২ ও জামায়াতের ২০ জন নেতা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে বিএনপি-জামায়াতের অনেক অনুসারী যাবেন। তাঁদের ভোটও যেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে যায়, সে ব্যাপারেও তাদের চেষ্টা রয়েছে। তাই স্থানীয়ভাবে কোনো ধরনের কঠোর আচরণ করে বিএনপি-জামায়াতকে ‘চটাতে’ চাইছে না আওয়ামী লীগ।
যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখানে বিএনপি কিংবা জামায়াতের প্রশ্ন কেন আসবে? তাঁরা দলের আদর্শের জায়গা থেকেই প্রতিদিন ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন।’
আরিফুলের জনপ্রিয়তা কাজে লাগাতে চায় জাপা
জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানিয়েছে, নিজেদের ভোটের পাশাপাশি আওয়ামী লীগবিরোধী ভোট তাঁদের প্রার্থী প্রচুরসংখ্যক পাবেন বলে দলটি মনে করছে। এ জন্য প্রচার-প্রচারণা, সাংগঠনিক পূর্ণ শক্তি নিয়োগ, ভোটারদের আকৃষ্ট করতে আধুনিক ও যুগোপযোগী স্লোগান দিয়ে অনলাইনে প্রচারণা চালানোসহ নানামুখী কৌশল নির্ধারণ করে পরিকল্পনামাফিক এগোচ্ছেন দলটির নেতারা।
এ ছাড়া মেয়র আরিফুল নির্বাচনে না থাকায় সরকারবিরোধী ভোটের সিংহভাগই তাঁদের পক্ষে যাবে বলে জাপার একটা অংশ মনে করছে। জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মো. নজরুল ইসলামও প্রচারণায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর প্রশংসা করে বক্তব্য দিচ্ছেন।
নারী ভোটার এবং ধর্মভিত্তিক সংগঠনে গুরুত্ব
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান ও তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা নগরে প্রতিদিনই পৃথকভাবে প্রচার-প্রচারণা করছেন। হাতপাখা প্রতীকের সমর্থনে মাইকিংও করা হচ্ছে।
দলটির স্থানীয় একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ইসলামী আন্দোলন নারী ভোটারদের গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। একই সঙ্গে ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের ভোটব্যাংককেও গুরুত্ব দিয়ে তাদের মধ্যেও প্রচারণা চালানো হচ্ছে।