পেঁয়াজের ঘাটতি ও চড়া দামের এই সময়ে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের ভালো ফলনের খবর দিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা। এ বছর জেলার সাড়ে চার হাজার কৃষক কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় সাড় চার হাজার বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। ভালো ফলন ও ভালো দাম পেয়ে তাঁরা দারুণ খুশি।
গতকাল রোববার সকালে সদর উপজেলার রানীহাটি ইউনিয়নের রানীহাটি গ্রামে গিয়ে কথা হয় পেঁয়াজচাষি সায়েম আলী, কামাল আলী, মো. মোমিন, রুবেল আলী ও তরিকুল ইসলামের সঙ্গে। প্রায় পাশাপাশি জমি তাঁদের। এরই মধ্যে কেউ কেউ জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে ফেলেছেন। কেউ পেঁয়াজ তুলছেন। এই কৃষকেরা জানান, এক বিঘা করে জমিতে চাষের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে তাঁরা প্রণোদনা হিসেবে পেয়েছেন ভারতীয় এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজের বীজ, সার-কীটনাশক ও ২ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর ধরেই পেঁয়াজের চাষ করলেও এবার ফলন বেশি হয়েছে বলে জানালেন তাঁরা।
তরিকুল ইসলাম বলেন, গত ১০ থেকে ১২ দিনে তিনি খেতের সব পেঁয়াজ ঘরে তুলেছেন। বিক্রিও করছেন। এক বিঘায় ফলন হয়েছে প্রায় ১০০ মণ। শুরুতে ৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। তবে গত শনিবার তাঁর বাড়ি থেকেই এক পাইকার ৫ মণ পেঁয়াজ কিনে নিয়ে গেছেন ৬ হাজার টাকা মণ দরে।
বেশির ভাগ কৃষকেরই ভালো ফলন হয়েছে। এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। তাঁরা ভালোই লাভের মুখ দেখবেন। এ পেঁয়াজ বাজারে আসার পর দামও কমবে। পলাশ সরকার, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
সায়েম আলী জানান, তিনি অল্প কিছু পেঁয়াজ তুলেছেন। পেঁয়াজের আকারও হয়েছে বেশ বড়। একেকটি ওজন ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম। এক বিঘায় ফলন ১১০ থেকে ১২০ মণ হবে বলে আশা করছেন তিনি। কমপক্ষে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন সায়েম আলী। এ দামে বিক্রি করতে পারলে তাঁর লাভ হবে প্রায় ৪ লাখ টাকা। তবে এ লাভ এখনকার বাড়তি দামের জন্য হবে বলে জানান তিনি।
রানীহাটি এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জোহরুল ইসলাম বলেন, রানীহাটি মৌজায় ১৮ জন কৃষককে প্রণোদনা দিয়ে ১৮ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করানো হয়েছে। সবার জমিতেই ভালো ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি ১০৫ থেকে ১২০ মণ ফলন হবে বলে আশা করা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক পলাশ সরকার বলেন, জেলায় তিন দফায় সাড়ে চার হাজার কৃষককে প্রণোদনা দিয়ে সাড়ে চার হাজার বিঘা জমিতে ভারতীয় এন-৫ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ করানো হয়েছে। বেশির ভাগ কৃষকেরই ভালো ফলন হয়েছে। এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। তাঁরা ভালোই লাভের মুখ দেখবেন। এ পেঁয়াজ বাজারে আসার পর দামও কমবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটিতে পেঁয়াজের আকার একটু ছোট হওয়ায় বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ মণ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালেহ আকরাম বলেন, এই ফলনও কম কিছু নয়। এখানকার চাষিরা এখন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছেন। হাসি ফুটেছে তাঁদের মুখে।