পুলিশ সপ্তাহ শুরু আজ, পদক পাচ্ছেন ৪০০ জন

0
103
পুলিশ সপ্তাহ শুরু আজ

‘স্মার্ট পুলিশ, স্মার্ট দেশ; শান্তি প্রগতির বাংলাদেশ’– এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যান্য বারের মতো এবারও পুলিশ সপ্তাহে বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করা হবে।

পুরোনো দাবির পাশাপাশি এবার থাকছে নতুন কিছু প্রস্তাবনা। তুলে ধরা হবে ক্যাম্পাস পুলিশ ইউনিট গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা। এ ছাড়া স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগের দাবি জানানো হচ্ছে। এর আগে একই দাবি উত্থাপন করা হয়েছিল। এ ছাড়া পুলিশ পরিদর্শক থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঝুঁকি ভাতা চাওয়া হবে। এখন কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক পর্যন্ত সদস্যরা ঝুঁকি ভাতা পান। পুলিশের পদোন্নতি ও পদায়নের জট কাটানোর ব্যাপারে বেশ কিছু দাবি-দাওয়া থাকছে।

পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪ এর ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সুপার নিউমারারির ৩৬৫টি পদ দেওয়ায় আমরা খুশি। তবে একবার দিলেই পুলিশের পদোন্নতিজটের সমাধান হবে না। বয়স ও ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি, পদায়ন না করলে এ সমস্যা থেকে বের হওয়া যাবে না। ক্যাম্পাসের জন্য পুলিশ ইউনিট গঠন করা হলে সেখানকার যে কোনো সমস্যা দ্রুত সমাধানে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, বাহিনীর প্রধান সমস্যা পদোন্নতি ও পদায়নজট। সুপারনিউমারারি হিসেবে ৩৬৫ পদ তৈরি হলেও তাদের পদায়ন করা যায়নি। নিয়মিত পদ হিসেবে এর কাঠামো গঠনের দাবি করা হবে। এ ছাড়া প্রেষণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বৈদেশিক মিশনে পদায়ন চাওয়া হবে। বিশেষ করে যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক বেশি, সেখানে লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে পুলিশ সদস্যরা কাজ করতে পারেন। এর আগে একই ধরনের দাবি জানানো হলে তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে সেই প্রক্রিয়া আর এগোয়নি। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা গাড়ি

কিনতে সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা চান। এখন সরকারের উপসচিবসহ তদূর্ধ্ব কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীর মেজর বা সমমানসহ তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা বিনা সুদে গাড়ির ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

এ ছাড়া পুলিশের দাবি-দাওয়ার মধ্যে থাকছে হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ ও মেট্রোরেল পুলিশ ইউনিটের বিস্তৃতি। পুলিশের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এ ধরনের বিশেষায়িত ইউনিটের আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে যত ধরনের অপরাধ সমাজে হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাইবার অপরাধ। দিন দিন সাইবার অপরাধ বাড়ছে। বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), ঢাকা মহানগর পুলিশ, কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের আলাদা সাইবার ইউনিট রয়েছে। পুলিশের দীর্ঘ দিনের দাবি– একজন অতিরিক্ত আইজিপির নেতৃত্বে স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট গঠন। এবারও পুলিশ সপ্তাহে এ দাবি তোলা হবে। জেলা পর্যায়ে এ ইউনিটের নেতৃত্ব দেবেন একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তাঁর অধীনে দু’জন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), চারজন ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক), আটজন সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই), ১৬ জন এএসআই থাকবেন।

আরেক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের দীর্ঘদিনের দাবি স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগ। এতে পুলিশের প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতির পথ সহজ হবে। এ ছাড়া পুলিশের জন্য মেডিকেল কলেজের দাবি জানানো হবে। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজ ঘোষণা করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুলিশে সচিব মর্যাদার পদ বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরা হবে।

জানা গেছে, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পুলিশ সদস্যদের জন্য মূল বেতনের ৫০ শতাংশ উচ্চ ঝুঁকি ভাতার দাবি তোলা হবে। বিভিন্ন বাহিনীতে কর্মরত সদস্যরা প্রণোদনা হিসেবে ফ্রেশ মানি পান। তবে পুলিশ সদস্যরা এর থেকে বঞ্চিত। এবারও ফ্রেশ মানি দেওয়ার দাবি তোলা হবে। বর্তমানে কনস্টেল থেকে এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তারা ঝুঁকি ভাতা পান। পরিদর্শক থেকে তদূর্ধ্বদের ঝুঁকি ভাতার বিষয়ে একজন অতিরিক্ত আইজিপির নেতৃত্বে একটি কমিটিও হয়েছে।

পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশ সদস্যরা সারাবছর দায়িত্ব পালন করেন। এক মাসের সমপরিমাণ বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও আর্থিক সংকটের কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। পুলিশ সপ্তাহে ওই দাবি ফের তোলা হবে। এ ছাড়া পুলিশের আবাসন সমস্যা ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো ক্যাম্পাসে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও আইনি পদক্ষেপ নিতে নানা প্রতিবন্ধকতা পুলিশের সামনে আসে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে কেউ অপরাধচক্র গড়ে তুললেও অনেক সময় আগাম তথ্য থাকে না। ক্যাম্পাস পুলিশ ইউনিট তৈরি করা হলে প্রো-অ্যাকটিভ পুলিশিং সহজতর হবে। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মোটিভেশনাল কার্যক্রম চালানো সহজ হবে।

পার্বত্য এলাকায় পুলিশ সদস্যরা দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দায়িত্ব পালন করায় তাদের প্রণোদনার অংশ হিসেবে মূল বেতনের ৩০ শতাংশ অনধিক ৩ হাজার টাকা হারে পাহাড়ি ভাতা পান। এই সিলিং তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ ও সড়ক দুর্ঘটনার মতো ঝুঁকির ভেতরে কাজ করেন। তারা উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। অনেকে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। ট্রাফিক ভাতা বাড়ানোর দাবি তোলা হবে পুলিশ সপ্তাহে।

জানা গেছে, রাজারবাগে প্যারেড পরিদর্শন ও ভাষণের পর পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে দরবার করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া পুরো সপ্তাহে প্রধান বিচারপতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আরও একাধিক মন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করবেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশ কর্মকর্তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও দেখা করবেন।

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ২০২৩ সালে অসীম সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ কাজ, মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা প্রদর্শন, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলাপূর্ণ আচরণের জন্য ৪০০ জন বিপিএম ও পিপিএম পদক পাচ্ছেন। আগামী ৩ মার্চ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির সম্মেলনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সপ্তাহের আয়োজন। পুলিশ সপ্তাহে এক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরবর্তী বছরের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.