পলিটেকনিকের ৭৫০ শিক্ষকের বোবাকান্না

0
144
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর

দেশের ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৭৫০ জন শিক্ষক টানা ৩৪ মাস বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা। ঈদ সামনে রেখে তাঁদের মুখে নেই হাসি। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রকল্পের (স্টেপ) শিক্ষক তাঁরা। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সরকার এই শিক্ষকদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু স্থানান্তর না হওয়ায় ২০২০ সালের জুলাই থেকে তাঁরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
শরীয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর ফরহাদ আলী বলেন, প্রকল্প শেষ হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাঁদের মৌখিকভাবে কাজ করে যেতে বলা হয়। সে কারণে কোনো বেতন ছাড়াই তাঁরা ৩৪ মাস ধরে ক্লাস নিচ্ছেন। এতদিন ধারদেনা করে চলেছেন। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে তাঁরা নিকট আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকেও টাকা ধার করতে পারছেন না। তাঁদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বৃদ্ধ বাবা-মা এবং সন্তানের ভরণপোষণের আর কোনো উপায়ই দেখছেন না। অনেক শিক্ষকের শিশুসন্তানের দুধ কেনারও পয়সা নেই।

সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশ পলিটেকনিক টিচার্স ফেডারেশনের (বিপিটিএফ) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান জানান, সরকার দেশের কারিগরি শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তাঁরাও রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আর্থিক এবং মানসিকভাবে তাঁরা অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।

বিপিটিএফের সভাপতি ও পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর প্রকৌশলী মো. সানাউল্লাহ হক বলেন, রমজান মাসেও বেতন ও উৎসব ভাতার কোনো খবর হয়নি। শিক্ষকদের মধ্যে এখন চরম হতাশা।

দেশের ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মোট শিক্ষক ১ হাজার ৪২৭ জন। তার মধ্যে রাজস্ব খাতে ৬৫০ জন, আর প্রকল্পের ৭৭৭ জন। তাঁদের মধ্য থেকে ২৭ জন চাকরি ছেড়ে বিভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। এখন রয়েছেন সাড়ে ৭শর মতো শিক্ষক। এই শিক্ষকরা ক্লাস নেওয়া বন্ধ করলে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম মুখথুবড়ে পড়বে।

শিক্ষকরা জানান, ২০১২ সালে স্টেপ প্রকল্প চালু হয়। তখন সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে যোগ্য শিক্ষক দেওয়ার জন্য এ প্রকল্পের অধীনে ১ হাজার ১৫ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে (তখন স্কেল ছিল ৮ হাজার টাকার, ২০১৫ সালের বেতন স্কেলে তা ১৬ হাজার টাকা হয়) তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১২ ও ২০১৪ সালে দুই দফায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল মোট ১ হাজার ১৫ জনকে।

বেতন-ভাতার জন্য শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিচ্ছেন। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে টানা ১৩ দিন অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। সে সময় শিক্ষামন্ত্রীর মৌখিক আশ্বাসে ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. ওমর ফারুকের পানি পান করানোর মাধ্যমে তাঁরা আমরণ অনশন প্রত্যাহার করে বাড়ি ফিরেছিলেন।

এই শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি) মো. মহসিন বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। একটি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এর সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরা টার্মিনেট হয়ে যান। এর পরও এই শিক্ষকদের যাতে বহাল রাখা যায়, সেজন্য চেষ্টা চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.