বাংলাদেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতু দিয়ে আজ মঙ্গলবার পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে। সাত বগির একটি বিশেষ ট্রেন ও একটি রেল ট্রাক কার ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া স্টেশনে যাবে। রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন দুপুর ১২টার দিকে পরীক্ষামূলক এ রেল চলাচলের উদ্বোধন করবেন।
পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলার খবরে উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরা। সড়ক পথে ঢাকা যাওয়ার সময় অনেকেই ফরিদপুরের ভাঙ্গা, শিবচরের পাচ্চর, কুতুবপুর ও জাজিরার নাওডোবায় অপেক্ষা করছে ট্রেন চলাচল দেখার জন্য। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের জীবনযাপনে অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। ভোগান্তি শেষ হয়েছে। আজ রেল চলবে এমন খবর শুনেই রেল চলাচল দেখার জন্য জাজিরার নাওডোবায় অপেক্ষা করছি। অনেক আনন্দ ও গর্ব লাগছে।’
বরিশালের গৌরনদীর বাসিন্দা সীমান্ত ইসলাম ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সড়ক পথে ঢাকা যাচ্ছেন। পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলার কথা শুনে তিনি পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজার কাছে অপেক্ষা করছিলেন। সীমান্ত ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু চালু হয়েছে অন্তত ১০ মাস হলো। এ সময় সেতু দিয়ে অসংখ্যবার ঢাকায় যাতায়াত করেছেন। আজ সেতুতে রেল চলবে। এমন খবর শুনেই পুলকিত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ভাবা যায়! দোতলা সেতু। একতলায় বাস, আরেক তলায় ট্রেন। ব্যাপারটি ভাবলেই ভালো লাগে। তাই প্রথম রেল চলাচল দেখতে অপেক্ষায় আছি।’
পদ্মা সেতুর রেললিংক প্রকল্প সূত্র জানায়, যাত্রীদের ট্রেনে চলাচলের জন্য ভাঙ্গা হতে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার রেলপথ প্রস্তুত করা হয়েছে। নির্মাণ করা হচ্ছে চারটি স্টেশন ও একটি জংশন। স্টেশনগুলো হলো—ভাঙ্গা স্টেশন, ভাঙ্গা জংশন স্টেশন, শিবচর স্টেশন, পদ্মা স্টেশন ও মাওয়া স্টেশন। দুপুর ১২টার দিকে ৭ বগির বিশেষ ট্রেন ও রেল ট্রাক কার পদ্মা সেতুর দিকে রওনা হবে। দুই ঘণ্টায় ৪২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বেলা দুইটায় সেতু পার হয়ে মাওয়া স্টেশনে পৌঁছাবে। পথিমধ্যে শিবচর ও পদ্মা স্টেশনে দাঁড়াবে ট্রেন দুটি। পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের জন্য ওই পাঁচটি স্টেশন সাজানো হয়েছে। সৈয়দপুর থেকে সাত বগির বিশেষ ট্রেনটি ভাঙ্গা স্টেশনে আনা হয়েছে।
পরীক্ষামূলক এই ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের সময় রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলামের পাশপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, ইকবাল হোসেন অপু ও সাগুপ্তা ইয়াসমিন এমিলি থাকবেন। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, রেলওয়ে ও রেললিংক প্রকল্পের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৪২ নম্বর ও মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর পিয়ারে আতশবাজির মাধ্যমে উচ্ছ্বাস ও আনন্দ প্রকাশ করা হবে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, গত বছর ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে সড়ক পথে যাতায়াত করতে পারছে। পদ্মা সেতু ঘিরে কৃষি ও অর্থনীতিতে নানা ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। জাজিরার উৎপাদিত সবজি আজ ইউরোপের দেশে রাপ্তানি করা যাচ্ছে। কৃষি সমৃদ্ধ দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে শরীয়তপুরে কৃষিনির্ভর অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। দক্ষিণের এ অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুতে ট্রেন সংযুক্ত করেছেন। আজ তা পদ্মার বুক দিয়ে চলবে। এটা অনেক গর্বের ও আনন্দের।
শরীয়তপুর জজ কোর্টের আইনজীবী অমিত ঘটক চৌধুরী আজ সকালে সড়ক পথে ঢাকা যাচ্ছিলেন। পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলের খবর শুনে তিনি বলেন, ‘ওপর তলা দিয়ে বাস আর নিচতলা দিয়ে ট্রেন চলছে। ছবির মতো এমন দৃশ্যটি বাস্তবে রূপ নিচ্ছে পদ্মা সেতুতে। ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণের যোগাযোগের এক নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হতে যাচ্ছে। এ খবরে আমরা আনন্দিত, উৎফুল্ল ও উচ্ছ্বসিত।’
পদ্মা সেতুর রেললিংক প্রকল্প সূত্র জানায়, মাওয়া-ভাঙ্গা রেলপথের ৪২ কিলোমিটারের মধ্যে পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এর আগে গত বছর ১ নভেম্বর ভাঙ্গা স্টেশন হতে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রাপ্ত পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার রেললাইনে রেল চালানো হয়।
পদ্মা সেতুর রেললিংক প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহম্মেদ বলেন, ‘আজ অনেক আনন্দের দিন। আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কিছু সময়ের মধ্যেই আমরা রেল নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিব। এ প্রকল্পের সব কর্মকর্তা, শ্রমিক ও প্রকৌশলীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ করতে পেরেছি।’