পদ্ধতিগত কারণে গুটিকয়েক ঠিকাদারের হাতে সব কাজ

0
162
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর

একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বারবার কাজ পায় পদ্ধতিগত কারণে। কোনো প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা থাকলে সেই প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিলে তার নম্বর বাড়ে। একে বলে ম্যাট্রিক্স পদ্ধতি। এ কারণে যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পাচ্ছে, তারা পেয়েই যাচ্ছে। একে অনিয়ম বলা যাবে না। তবে এর সংশোধনে কাজ চলছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরসহ (সওজ) সবখানে একই অবস্থা। সমস্যা নিরসনে সরকারের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড টেন্ডার ইউনিট (সিপিটিইউ) কাজ করছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবনে অনুষ্ঠিত সওজের গণশুনানিতে এসব কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ। তিনি আরও বলেন, সড়কের ভাঙাচোরা অবস্থা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। কিন্তু আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আসে না। অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও অভিযোগ করেন। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর কেউ অভিযোগ করে ই-মেইল করেন না। কোথাও সেবার ঘাটতি থাকলে তা জানতে ইচ্ছা করে। অভিযোগ পেলে ছুটে যাই।

গুটিকয়েক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কীভাবে সব কাজ পাচ্ছে– তা নিয়ে গত রোববার সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। কমিটি এর কারণ জানতে চেয়েছে। সচিব বলেছেন, দরপত্র নিয়ে অনিয়ম হয়ে থাকলে সুনির্দিষ্ট তথ্য চাই। তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সওজের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মাইনুল হাসান বলেন, গত অর্থবছরে ৪ হাজার ৩০০টি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু সারাদেশে মানসম্মত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে মাত্র ২০ থেকে ৩০টি। ফলে ঘুরেফিরে তারাই কাজ পায়। এটা একটা ঝুঁকি। এই সংকট নিরসনে সওজ তিন-চার বছর ধরে কাজ করছে। তবে দরপত্রের পদ্ধতিটি চূড়ান্ত করে সিপিটিইউ। সওজ কেবল সুপারিশ করতে পারে।

প্রধান প্রকৌশলী আরও বলেন, দুই পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে (ওটিএম) অধিকাংশ কাজ হয়। দরপত্রে যে দর উল্লেখ করা হয় তার ১০ শতাংশের কম বা বেশি দর দিতে পারেন না ঠিকাদাররা। দর সমান হলে ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিতে দক্ষতা নির্ণয় করা হয়। বিদ্যমান ই-জিপি পদ্ধতিতে কারা টেন্ডার সাবমিট করেছে তা বোঝা যায় না। ই-জিপিতে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে যেসব ঠিকাদার অতীতে বেশি কাজ করেছে বা বেশি সংখ্যক কাজ চলমান রয়েছে, তারাই বেশি নম্বর পায়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ম্যাট্রিক্স পদ্ধতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

গণশুনানিতে অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে যান চলাচলের প্রসঙ্গ আসে। বহু বছর ধরেই বলা হচ্ছে, এ কারণেই সড়ক টিকছে না। সচিব বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকার সড়ক নষ্ট হচ্ছে এ কারণে। অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে।

তিন এক্সেলের ট্রাকের নিজস্ব ওজনসহ ১৫ টন পণ্য পরিবহনের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু সরকার ব্যবসায়ী এবং ট্রান্সপোর্ট অপারেটরদের চাপে ২২ টন পণ্য পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে। সওজ কেন ২২ টন ওজন বিবেচনায় সড়কের নকশা করছে না– প্রশ্নে সংস্থাটির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সড়কের মানদণ্ড সারা দুনিয়ায় একই রকম। যানবাহনের মানদণ্ডও একই রকমে। তা বিবেচনায় নিয়ে সড়কের নকশা করা হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি গত ১২-১৩ বছরে ব্যাপক উন্নতি করায় পণ্য পরিবহন বেড়েছে। কিন্তু তার বিপরীতে পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই বেশি পণ্য বহনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ওজন বহনের অনুমতি রোধ করতে হবে ধীরে ধীরে। তার আগে অর্থনৈতিকভাবে আরেকটু সমৃদ্ধ হতে হবে।

ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির প্রতিনিধি অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট ওজন মানতে চান না। ১৫ টন মেনে চলতে চাইলে ট্রিপ পাওয়া যায় না। মালিকরা বেশি পণ্য পরিবহন করতে বাধ্য করেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ২৫-৩০ টন পণ্য নিয়ে চলে তিন এক্সেলের ট্রাক।

সারাদেশে ২০টি স্থানে ২৮টি এক্সেল লোড সেন্টার বা অতিরিক্ত ওজন প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ করছে সওজ। এগুলোর নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করতে প্রতি সপ্তাহে তদারকি করতে প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন সচিব। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পটির অগ্রগতি বারবার জানতে চেয়েছেন। তবে বাস্তব সমস্যাও রয়েছে। জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সময় চলে যায়। সে কারণে প্রকল্প ঠিকঠাক এগোয় না। আবার স্থানীয়দেরও আপত্তি থাকে। সিলেটে একটি ওয়ে স্কেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান জানান, বেসরকারি মালিকরাও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বাস চালাতে চান। কিন্তু রুট পারমিট নেই। এক্সপ্রেসওয়ের টোলের টাকা যোগ করে ভাড়া বাড়াতে হবে। সচিব বলেছেন, বিআরটিসি ভাড়া না বাড়িয়ে বাস চালু করেছে। রুট পারমিট নিয়ে বেসরকারি বাসও চলতে পারে। তবে ভাড়া বাড়ানো যাবে না।

গণশুনানিতে আরও অংশ নেন সওজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিআরটিএ, ডিটিসিএ, হাইওয়ে পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.