পঞ্চগড়ে আহমদিয়ার জলসা নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১

0
136
আহমদিয়ার জলসা নিয়ে পঞ্চগড় রণক্ষেত্র।

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বার্ষিক সালানা জলসা বন্ধকে কেন্দ্র করে শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পঞ্চগড় শহর। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আরিফুর রহমান (২৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি শহরের ইসলামবাগ এলাকার ফরমান আলীর ছেলে। তিনি শহরের একটি প্রিন্টিং প্রেসে কাজ করতেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় সাংবাদিক, পুলিশসহ আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকশ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। সংঘর্ষ চলাকালে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীদের কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং ২০টি বাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৭ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জনসংযোগ দপ্তর।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) বার্ষিক সালানা জলসা বন্ধ ও তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ করে সম্মিলিত খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ পরিষদ সমর্থক মুসল্লিরা। জুমার নামাজ শেষে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লিরা শহরের শেরেবাংলা পার্ক মোড়ে জড়ো হন। বিক্ষুব্ধ মুসল্লিদের সঙ্গে স্থানীয় এবং বহিরাগত কিছু যুবক বিক্ষোভসহ সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধরা পুলিশের ওপর ব্যাপক ইটপাটকেল ছোড়ে। পুলিশও কয়েকশ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় নিহত হন আরিফুর রহমান নামে এক যুবক। পরে রাত ৮টার দিকে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বার্ষিক সালানা জলসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

নিহত আরিফুর রহমান। ছবি-সংগৃহীত

তবে এই ঘটনার সময় পুলিশ কয়েকজন যুবককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবির সদস্যদের টহল দেখা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিহত আরিফুর রহমানের পরিবারের লোকজনের দাবি, বাড়ির কাছে মসজিদপাড়া মহল্লায় আরিফুর রহমানকে ধাওয়া করেন পুলিশ সদস্যরা। তাঁরা এলোপাতাড়ি রাবার বুলেট ছোড়েন। আরিফের মাথায় বুলেট লাগলে তিনি মারাত্মক আহত হন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাজেদুর রহমান চৌধুরী ইরান বলেন, আমাদের মহল্লার আরিফুর রহমান নামে এক যুবক মারা গেছেন।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. রহিমুল ইসলাম বলেন, আরিফুর রহমানের মাথায় সম্ভবত বুলেটের আঘাত ছিল। ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা মুশকিল। তবে মাথা থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিই।

জেলা সম্মিলিত খতমে নবুওয়াত পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কারি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, আজকে (শুক্রবার) আমাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। আমরা সালানা জলসা বন্ধসহ তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেছিলাম। শুক্রবার বিক্ষুব্ধ তৌহিদি জনতা মিছিল বের করলে প্রশাসনের পরামর্শে আমরা শেরেবাংলা পার্ক মোড় থেকে যারা মিছিল করছিল তাদের নিয়ে আসি এবং আমরা বাড়ি চলে যাই। এর পর কে কোথায়, কীভাবে হামলা করল আমরা জানি না।

পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দকে সালানা জলসা বন্ধের আহ্বান করলে তারা তা বন্ধ করতে সম্মত হয়। তবে বিক্ষুব্ধরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ করছে। আহমদনগর এলাকাসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। যুবকের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা এখনও নিশ্চিত নই। কেউ মারা গেছে কিনা, যদি কেউ মারা যায়, তাহলে কীভাবে এবং কোথায় মারা গেল তা খোঁজ না নিয়ে বলা যাবে না। পুলিশ কোনো গুলি ছোড়েনি।

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া আহমদিয়া সম্প্রদায়ের তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসা আজ রাতেই বন্ধ করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিকের পথে। পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় কেউ মারা যাওয়ার তথ্য পাইনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.