নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে জেন-জিদের পছন্দ কে এই সুশীলা কারকি

0
20
সুশীলা কারকি

নেপালে রক্তক্ষয়ী গণবিক্ষোভের পর স্থিতিশীলতা ফেরাতে জেন–জি তথা তরুণদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছে সেনাবাহিনী। বিক্ষোভের জেরে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব কে দেবেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। এ সরকারের প্রধান হিসেবে জেন–জিরা সমর্থন দিচ্ছেন দেশটির প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে।

নেপালে দুই দিনের বিক্ষোভের মুখে গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। সেদিন রাত থেকেই দেশের ‘পরিস্থিতির’ নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী। বিভিন্ন শহরে মোতায়েন করা হয় সেনাসদস্যদের। এরই মধ্যে বুধবার তরুণদের সঙ্গে প্রথম দফায় বৈঠক করেন সেনা কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবারও তাঁদের আলোচনায় বসার কথা ছিল।

নেপালে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজা রাম বাসনেট বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কে হচ্ছেন, তা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টাও চালানো হচ্ছে। আর জেন–জি প্রতিনিধি ওজাশ্বি রাজ থাপা সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের প্রধান হিসেবে সুশীলা কারকির নাম বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ও সেনাবাহিনীকে জানানো হয়েছে।

ওজাশ্বি রাজ থাপার ভাষ্যমতে, বিক্ষোভকারীরা চান নেপালের পার্লামেন্ট যেন ভেঙে দেওয়া হয়। তবে দেশের সংবিধান বাতিল করার পক্ষে নন তাঁরা। আপাতত সংশোধনই যথেষ্ট বলে মনে করছেন। আর বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতায় থাকতে চান না বলে এএফপিকে জানিয়েছেন তাঁদের আরেক প্রতিনিধি সুদান গুরুং। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারে কোনো অবস্থান চাই না। আমরা প্রকৃত সংস্কার চাই।’

কে এই সুশীলা

জেন–জিদের পছন্দের প্রার্থী সুশীলা কারকির বয়স ৭৩ বছর। ২০১৬ সালে নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে অবসরে। জেন–জি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে আলোচনার বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন একজন রয়টার্সকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে সুশীলা রাজি আছেন। এখন তাঁকে নিয়োগের উপায় খোঁজা হচ্ছে।

নেপালের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সরকারপ্রধান হওয়ার প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল ও সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সুশীলা। এ বিষয়ে জানতে তাঁর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল রয়টার্স। তবে সাড়া মেলেনি। সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করেননি তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নিয়ে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তাতে তিনি বলেছেন, বর্তমানের কঠিন পরিস্থিতির সমাধান করতে সব ধরনের চেষ্টা করছেন তিনি। গণতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য এবং শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে এ চেষ্টা করা হচ্ছে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে—এ বিষয়ে সবাইকে আশ্বস্ত থাকতে বলেন প্রেসিডেন্ট।

নেপালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সুজিত কুমার ঝা। ৩৪ বছর বয়সী এই যুবক বলেন, ‘আমরা সুশীলাকে একজন সাহসী এবং নিজ সংকল্পে অটল মানুষ হিসেবে চিনি।’ তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের সবাই সুশীলাকে সরকারপ্রধান হিসেবে সমর্থন করছেন না। তাই সর্বসম্মতভাবে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

আলোচনায় আরও যাঁরা

নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে জেন–জিদের পছন্দ হিসেবে কুলমান গিসিংয়ের নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি দেশটির বিদ্যুৎ বোর্ডের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। নেপালের বিদ্যুৎ–বিভ্রাট মোকাবিলা করে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি তাঁকে বিদ্যুৎ বোর্ডের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতি দিয়ে কুলমান গিসিংয়ের প্রতি সমর্থন জানান বিক্ষোভকারীদের একাংশ। বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবিধানিকভাবে সুশীলা কারকি অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হতে পারেন না। কারণ, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের বিচারিক কাজের বাইরে অন্য কোনো দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে বিধিনিষেধ আছে। আর জেন–জিদের নেতা হওয়ার জন্য তিনি ‘অনেক বয়স্ক’।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে কাঠমান্ডুর সাবেক ৩৫ বছর বয়সী বালেন্দ্র শাহর নাম শোনা যাচ্ছিল। একজন র‌্যাপার হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তাঁর। তবে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তিনি লিখেছেন, সুশীলা কারকির প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

নিহত বেড়ে ৩৪

নেপালে দুর্নীতি, বেকারত্ব, বৈষম্য ও রাজনীতিবিদদের স্বজনপ্রীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এরই মধ্যে সম্প্রতি ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এতে ক্ষোভ চরমে পৌঁছায়। এর জেরেই সোমবার থেকে বিক্ষোভে নামেন তরুণেরা। সেদিনই বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৯ জন নিহত হন।

বৃহস্পতিবার নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এদিন পর্যন্ত বিক্ষোভের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি। এদিনও কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি ছিল। রাস্তায় ছিল সেনাসদস্যদের উপস্থিতি। বন্ধ ছিল স্কুল, কলেজ ও দোকানপাট। তবে জরুরি কিছু সেবা চালু করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.