নেপথ্য কূটনীতি জোরদার, তবু হয়নি অস্ত্রবিরতি

0
122
  • খোলেনি রাফাহ ক্রসিং, অপেক্ষায় ত্রাণবাহী হাজারো গাড়ি
  • গাজায় দখলদারিত্ব হবে ‘বড় ভুল’, নেতানিয়াহুকে বাইডেন
  • ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা ১০০০ মানুষ

 

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে টানা ১০ দিন ধরে চলা যুদ্ধে অবরুদ্ধ উপত্যকাটি ছাড়তে সীমান্তে জড়ো হয়েছেন শত শত ফিলিস্তিনি নাগরিক। তাদের ফিলিস্তিন থেকে বের হতে এবং গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে অস্ত্রবিরতির জন্য নেপথ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চললেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে মিসর ও ফিলিস্তিনের মধ্যে অবস্থিত রাফাহ ক্রসিং খোলার অনুমতি দেয়নি ইসরায়েল। এতে আটকে আছে ত্রাণবাহী হাজার হাজার গাড়ি।

এরই মধ্যে গাজার পরিস্থিতি আরও বিপর্যয়কর হয়ে পড়েছে। ফুরিয়ে গেছে খাদ্য, পানি। হাসপাতালগুলো যেন মৃত্যুপুরী। ধারণা করা হচ্ছে, এখনও ১ হাজার ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে। এ অবস্থায় গাজা দখলের চেষ্টা ইসরায়েলের জন্য বড় ভুল হবে বলে তেল আবিবকে সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিম তীর থেকে ৯২ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজার হাসপাতালসহ চিকিৎসাকেন্দ্রে ১১০ বারের বেশি হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ যত দ্রুত সম্ভব মানবিক করিডোর খোলার আহ্বান জানিয়েছে।

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অস্ত্রবিরতির জন্য বিভিন্ন পক্ষ নেপথ্য কূটনীতি জোরদার করেছে। তবে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর গতকাল সোমবারও গাজায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রাখে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাস-শাসিত গাজার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিমান হামলা ছিল খুবই ভয়াবহ। অনেক ভবন মাটিতে মিশে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে বহু মানুষ। অন্যদিকে, হামাসের রকেট হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে বেশ কয়েকটি শহরে সতর্কীকরণ সাইরেন বাজানো হয়েছে।

গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ২ হাজার ৮০৮ জন নিহত হয়েছেন। এর এক-চতুর্থাংশই শিশু। আর আহত হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি। অন্যদিকে, হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নতুন করে কেউ মারা যায়নি। সেখানে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৪০০ জনের।

যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা নেই, বলছে ইসরায়েল

গাজায় যুদ্ধবিরতির কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধান সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি। তিনি বলেন, ‘হত্যাকারী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’ এর মধ্যেই গতকাল রাফাহ  ক্রসিং এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, সেখানে কোনো যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেই। হামাসের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল। এখন হামাসের বিরুদ্ধে স্থল অভিযানে সীমান্তে জড়ো করা হয়েছে বিপুল সেনা ও ট্যাঙ্ক। তবে অভিযান কবে শুরু হবে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারছে না। এটা বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, ইসরায়েল গাজাবাসীকে সরে যেতে যে আলটিমেটাম দিয়েছিল, তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

এরই মধ্যে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের প্রধান গ্রিফিথস মধ্যপ্রাচ্য সফরের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের ব্যাপারে কাজ করবেন। এ সময় তিনি ইসরায়েলও সফর করবেন।

সংঘাত বন্ধে বাইডেনের তৎপরতা

যুদ্ধ আরও বড় আকার ধারণ করা ঠেকাতে তৎপরতা চলাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসে জাতীয় নিরাপত্তা বৈঠকে থাকার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার কলোরাডো সফর স্থগিত করেছেন। হামাসের হামলার পর বাইডেন ইসরায়েলে সামরিক সহায়তা পাঠিয়েছেন। তবে ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের মানবিক সহায়তা পাওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে শিগগির স্থল হামলা চালানোর বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সতর্ক করেছেন বাইডেন। তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলের দখলদারিত্ব হবে ‘বড় ভুল’। সিবিএসের এক অনুষ্ঠানে বাইডেন বলেন, হামাস পুরো ফিলিস্তিন জাতির প্রতিনিধিত্ব করে না।

পুতিন-নেতানিয়াহু এবং এরদোয়ান-রাইসি ফোনালাপ

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। ক্রেমলিনের মতে, পুতিন নেতানিয়াহুকে সংঘাত থামানোর ব্যাপারে মস্কোর সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। ইন্টারফ্যাক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুতিন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। অপরদিকে যুদ্ধ বন্ধের পদক্ষেপ ও গাজায় সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান ও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।

ইসরায়েলি বন্দির সংখ্যা

হামাস ১৯৯ জনকে বন্দি করেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর শীর্ষ মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানিয়েছেন, হামাসের হাতে আটক হওয়া ‘১৯৯ বন্দির’ পরিবারের সঙ্গে সেনাবাহিনী যোগাযোগ করেছে। এর আগে অবশ্য হামাসের হাতে আটকের সংখ্যা ১৫৫ জন বলে জানানো হয়েছিল।

জানাজায়ও হামলা, বাবা-ছেলে নিহত

জানাজা নামাজের ওপরও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পশ্চিম তীরের কুসরা গ্রামে ৪ ফিলিস্তিনির জানাজা হচ্ছিল। এ সময় ছোট ভাইকে হারানো দুঃখ প্রকাশ করছিলেন বড়ভাই। হঠাৎ ইসরায়েলি হামলায় তিনি মারা যান। প্রাণ হারান তাঁর বাবাও।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.