নিষেধাজ্ঞায় লাভ হয়েছে চীনের, তেল কিনে বাঁচিয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলার

0
139
রাশিয়াসহ পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলোর কাছ থেকে তেল কিনে লাভবান হচ্ছে চীন।

বিভিন্ন দেশের তেল বিক্রির ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা অনেক ক্ষেত্রে চীনের জন্য শাপেবর হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশগুলো থেকে তেল কিনে চীন এ বছর ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার বাঁচিয়েছে।

রাশিয়া, ভেনেজুয়েলা ও ইরানের মতো দেশের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা অনেকের জন্য একভাবে শাপেবর হয়েছে। এতে চীনের মতো পশ্চিমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশগুলো থেকে কম দামে তেল কিনতে পারছে, যদিও চীন প্রায়ই এ ধরনের একপক্ষীয় নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে থাকে।

জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ভরটেক্সা ও কেপলারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ইরান, রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলা থেকে সমুদ্রপথে দৈনিক ২৭ লাখ ৬৫ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে চীন।

জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীন যত তেল আমদানি করেছে, তার চার ভাগের এক ভাগ তারা এই তিন দেশ থেকে আমদানি করেছে। ২০২২ সালের একই সময়ে তারা এই তিন দেশ থেকে আমদানি করেছিল মোট আমদানির ২১ শতাংশ এবং ২০২০ সালে করেছিল ১২ শতাংশ। এই প্রক্রিয়ায় মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো পিছিয়ে পড়েছে।

কম দামে তেল কিনে চীন বিভিন্নভাবে লাভবান হয়েছে। এতে চীনের তেল পরিশোধনাগারগুলোর উৎপাদন ও মুনাফা বেড়েছে। একই দামে বেশি পরিমাণ তেল কেনার কারণে চীনের তেল পরিশোধনাগারগুলো যেমন বেশি উৎপাদন করতে পারছে, তেমনি পণ্যের উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় বিশ্ববাজারে তার প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বেড়েছে।

নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশগুলোও চীনের এই তেল কেনার কারণে লাভবান হচ্ছে। মস্কো, তেহরান ও কারাকাসের ওপর যেভাবে পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাতে চীন তাদের কাছ থেকে এভাবে তেল না কিনলে এসব দেশের পরিস্থিতির আরও অবনতি হতো।

এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রয়টার্স যোগাযোগ করলে তারা জবাব দেয়নি; বরং এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, চীন একপক্ষীয় নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে। চীনের স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি অন্যদের সম্মান দেখানো উচিত, সেই সঙ্গে তার সুরক্ষাও দরকার।

এদিকে ভরটেক্সা ও কেপলারের তথ্যানুসারে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত রাশিয়ার কাছ থেকে চীন দিনে ১৩ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে। এটা সমুদ্রপথের হিসাব। একই সঙ্গে তারা পাইপলাইনে দৈনিক আট লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত এসপো তেল আমদানি করেছে।

জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের হিসাব বলছে, এই সময় রাশিয়া থেকে চীনের তেল আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দৈনিক চার লাখ ব্যারেল বেড়েছে। একই সময়ে ভারতেও রাশিয়ার তেল রপ্তানি বেড়েছে।

রাশিয়ার তেল আমদানি করে চীন ৪৩৪ কোটি ডলার বাঁচিয়েছে। এ ছাড়া ভেনেজুয়েলার তেল কিনে ব্যারেলপ্রতি ১০ ডলার এবং ইরানের তেল কিনে প্রতি ব্যারেলে ১৫ ডলার বাঁচিয়েছে দেশটি।

এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেছেন, রাশিয়ার তেলের দাম বেঁধে দেওয়ার কারণে ক্রেতারা আরও দর-কষাকষির সুযোগ পেয়েছে। এতে রাশিয়ার আয় কমেছে।

তারা আরও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সাল থেকে ইরানের তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত—এমন ১৮০ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এতে ইরানের মুদ্রার দরপতনের সঙ্গে সেখানে বড় ধরনের মূল্যস্ফীতি হয়েছে।

সম্প্রতি ইসরায়েলে হামাসের হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে ইরানের তেল রপ্তানি আরও কমতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। চীনের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার সম্পর্কের প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য, এটা শক্তি নয়; বরং ভেনেজুয়েলা যে বিশ্বসম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন, এটা তারই প্রমাণ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.