নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে পেঁয়াজ ও চিনি দেবে ভারত

0
115

চিনি ও পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ভারত সরকারের। তারপরও পবিত্র রমজান উপলক্ষে চিনি ও পেঁয়াজের সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে এ দুটি পণ্য আমদানিতে বিশেষ সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ। এ অনুরোধে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত। রমজানকে কেন্দ্র করে ভারত ৫০ হাজার টন চিনি এবং ২০ হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানি করতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে গত সোমবার নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে চিঠি পাঠিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চিঠিতে বলা হয়, গত ২৪ জানুয়ারি ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প, বস্ত্র ও ভোগ্যপণ্য এবং খাদ্য ও গণ বিতরণবিষয়ক মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর টেলিফোনে আলাপ হয়। এ সময় আহসানুল ইসলাম ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীকে ১ লাখ টন চিনি ও ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ সরবরাহের পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান। তবে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী ৫০ হাজার টন চিনি এবং ২০ হাজার টন পেঁয়াজ সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও শিল্পকারখানার কাঁচামালের বৃহত্তম জোগানদাতা ভারত। নিত্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বার্ষিক চাহিদার সুনির্দিষ্ট সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ যে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব ভারতকে পাঠিয়েছে, শিগগির তা বাস্তবায়নেরও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু  বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী তাঁকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য টেলিফোন করেছিলেন। শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর তিনি রমজান উপলক্ষে বাংলাদেশে চিনি ও পেঁয়াজ রপ্তানির অনুরোধ জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী ৫০ হাজার টন চিনি এবং ২০ হাজার টন পেঁয়াজ দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান।
আহসানুল ইসলাম আরও বলেন, ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন দাপ্তরিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষা। আশা করা যাচ্ছে, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রমজানের অনেক আগেই ভারত থেকে চিনি ও পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসবে। ভারত থেকে সাত নিত্যপণ্য আমদানিতে বার্ষিক কোটার বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আলোচনা চলছে। কিন্তু এখনও ভারত কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সে দেশ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সাত পণ্য আমদানিতে বার্ষিক কোটা (নির্ধারিত পরিমাণ) চাওয়া হয়। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে চাল, গম, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, চিনি ও মসুর ডাল। কোটা দিতে ভারত প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ভারতের পরামর্শে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টন চাল, ২৬ লাখ টন গম, ১০ লাখ টন চিনি, ৮ লাখ টন পেঁয়াজ, ৫০ হাজার টন আদা, ৭০ হাজার টন রসুন ও ১ লাখ টন মসুর ডালের কোটা চাহিদা পাঠানো হয় ভারতে। কোটা দিতে রাজি হলে ভারত কোনো পণ্য রপ্তানি বন্ধ করলেও বাংলাদেশ নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য আমদানি করতে পারবে। ভুটান ও মালদ্বীপকে এ সুবিধা দিয়ে আসছে ভারত।

কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের নতুন বাজার খোঁজার নির্দেশ

এদিকে পাটজাত ও চামড়াজাত পণ্যসহ সব ধরনের পণ্য রপ্তানির নতুন বাজার খুঁজতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ হতে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বিশ্বের ২৩ দেশে কর্মরত কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের তিনি এসব নির্দেশনা দেন।
শুধু রপ্তানি নয় বাংলাদেশ যেসব পণ্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, তার উৎপাদন ও মূল্য মনিটরিং এবং মন্ত্রণালয়ে পাঠানোরও নির্দেশনা দেওয়া হয়। আগামী বছর ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় সব কমার্শিয়ালকে কর্মরত দেশের একটি করে স্টল নিশ্চিত করতে এখন থেকে কাজ করারও নির্দেশ দেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.