গ্যাসের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ মাশুল বাড়ানো হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে এই চার্জ বৃদ্ধি করেছে সরকার। এতে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়বে না তবে গ্যাস কোম্পানিগুলোর আয় বাড়বে। যদিও অধিকাংশ গ্যাস কোম্পানি মুনাফা করছে।
বৃহস্পতিবার চারটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে জ্বালানি বিভাগ গ্যাসের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ মাশুল বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। যা কার্যকর হবে জুলাই মাস থেকেই।
লোকসান হচ্ছে এমন দাবিতে গ্যাস কোম্পানিগুলো দীর্ঘ দিন ধরে মাশুল বৃদ্ধির দাবি করছিল। কোম্পানিগুলো মুনাফা করছে এমন যুক্তিতে বিইআরসি তাদের দাবি নাকচ করে দেয়। ফলে কোম্পানিগুলো জ্বালানি বিভাগে চার্জ বৃদ্ধির আবেদন করে। এরপরই নির্বাহী আদেশে মাশুল বাড়ানো হলো। এর মাধ্যমে এলএনজি চার্জ, বিতরণ চার্জ, সঞ্চালন চার্জ এবং উৎপাদন পর্যায়ে মার্জিন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু গ্যাস উন্নয়ন ও উৎপাদন কাজের জন্য ব্যবহৃত তহবিলগুলোর চার্জ বাড়েনি।
গত জানুয়ারিতে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়। গ্যাস উৎপাদনের দায়িত্বে আছে তিন সরকারি কোম্পানি- বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি (বিজিএফসিএল), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি (এসজিএফসিএল) ও বাপেক্স। যাদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদনের মার্জিন যথাক্রমে ৩ দশমিক ০৪১৪ টাকা, শূন্য দশমিক ৭০৯৭ টাকা ও শূন্য দশমিক ২০২৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা, ১ টাকা এবং ১ টাকা করা হয়েছে।
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির (জিটিসিএল) প্রতি ইউনিটের সঞ্চালন মাশুল ৪৭ পয়সা থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে এক টাকা দুই পয়সা করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের জন্য শূন্য দশমিক ০৬৮৩ টাকা আর এলএনজি আমদানির দায়িত্বে থাকা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল) প্রতি ইউনিটে পাবে শূন্য দশমিক ১০৪৩ টাকা।
তিতাসের প্রতি ইউনিটের বিতরণ চার্জ ১৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২১ পয়সা করা হয়েছে। সুন্দরবনের ইউনিট প্রতি ১৫ পয়সা থেকে ২৪ পয়সা, কর্ণফুলীর ২৩ পয়সা থেকে ৩৭ পয়সা, জালালাবাদের ১১ পয়সা থেকে ১৮ পয়সা, বাখরাবাদের ১৯ পয়সা থেকে ৩০ পয়সা এবং পশ্চিমাঞ্চলের ১৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৬ পয়সা করা হয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে শুধু তিতাস গ্যাসকে ২ শতাংশ হারে সিস্টেম লস দেয়া হয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম. শামসুল আলস বলেন, সরকারি সব কোম্পানিগুলো এমনিতেই লাভ করছে। তাই কমিশন তাদের দাবি আমলে নেয়নি, তাদের রাজস্ব চাহিদা বুঝেই চার্জ নির্ধারণ করেছিল। নির্বাহী আদেশে চার্জ বাড়িয়ে তাদের বাড়তি মুনাফার পথ সৃষ্টি করা হলো।