নির্বাচন নিয়ে কারও কারও বক্তব্য জনমনে জিজ্ঞাসার জন্ম দিয়েছে: তারেক রহমান

0
25
স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র, ঢাকা। ১৯ আগস্ট

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণার পর কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য জনমনে নানা জিজ্ঞাসার জন্ম দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপির এই শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণ দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় পর নির্ভয়ে, নিরাপদে নিজেদের ভোট দিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারবে। তবে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের যোদ্ধা কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের বা তাদের সদস্যদের বক্তব্য, মন্তব্য গণতন্ত্রকামী জনগণের মনে নানা জিজ্ঞাসার জন্ম দিয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে তিনি ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

তারেক রহমান বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি দূরত্ব তৈরি হয়, তাহলে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে পতিত পলাতক ফ্যাসিস্ট চক্রের পুনর্বাসনের পথ সহজ হয়ে উঠবে। এ ব্যাপারে তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

লিখিত বিধিবিধান দিয়ে কখনোই ফ্যাসিবাদ ঠেকানো যায় না উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে যদি ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে হয়, তাহলে অবশ্যই জনগণকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।

সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার চর্চার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণ শক্তিশালী হয়ে উঠে বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, জনগণ রাজনৈতিকভাবে যদি শক্তিশালী হতে না পারে, তাহলে রাষ্ট্র ও সরকার শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে না।

নানা উপায় বা শর্ত আরোপ করে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে যদি বাধা সৃষ্টি হয়, তাহলে গণতন্ত্রের উত্তরণের পথ সংকটে পড়বে বলে মনে করেন তারেক রহমান।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ আর ২০২৪ সালে স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ হয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের ৫৪ বছরে ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের এই আত্মত্যাগের প্রতিদান দেওয়া সম্ভব নয়। তবে ফ্যাসিস্টের পতনের পর ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তির নিজেদের মধ্যে নিত্যনতুন ইস্যু নিয়ে অহেতুক বিতর্কে লিপ্ত হওয়া শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি অবমাননার শামিল।

বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাইলে প্রচলিত ধারার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, প্রতিরোধ, প্রতিহিংসা কিংবা কথামালার রাজনীতির পরিবর্তে বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রচলিত রাজনীতির ধারার গুণগত পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তারেক রহমান দেশের সর্বস্তরের জনগণের কাছে বিএনপির পরিকল্পনাগুলো ছড়িয়ে দিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) এই যুগে সময়ের চাহিদার দিকে লক্ষ রেখে বিএনপি সুনির্দিষ্ট ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা নির্ধারণ করছে বলে জানান তারেক রহমান। একই সঙ্গে তিনি বিএনপি ক্ষমতায় এলে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত অন্তত শিক্ষাক্রমে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবহারিক ও কারিগরি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করা, সারা দেশে ৫ বছরে ২৫ কোটি গাছ লাগানো, খাল খনন কর্মসূচি শুরুর মতো বিষয়গুলো পুনর্ব্যক্ত করেন।

জনগণের জীবনমান উন্নয়নের রাজনীতিই বিএনপির আগামী দিনের নীতি বা রাজনীতি হবে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী, গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ কে এম ফজলুল হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইয়াসির আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেন, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এ এ জহির উদ্দিন এবং বিগত সরকারের সময়ে গুম ও নিহত হওয়া নেতাদের স্বজনেরা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি, কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.