আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্য মণিপুরে। সহিংসতা কবলিত মণিপুর ধীরে ধীরে শান্ত হওয়ার পর সোমবার ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা হয়। এর একদিন পরই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মেইতি সম্প্রদায়ের দুই যুবক-যুবতীর মরদেহের ছবি ভাইরাল হয়। তারা হলো- ১৭ বছর বয়সী হিজাম লিন্থোইনগাম্বি ও ২০ বছর বয়সী ফিজাম হেমজিত। এ ঘটনায় ইম্ফলে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের বাড়ির সামনে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হন এবং টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
জানা গেছে, ৬ জুলাই থেকে তারা নিখোঁজ ছিলেন। সেই সময় থেকেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের ছবি দেখা যায়। সোমবার তাদের মরদেহের ছবি সামনে আসার পরই রাজ্যটিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে এই ঘটনার তদন্তের ভার তুলে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) হাতে।
দুই শিক্ষার্থীর মরদেহের ছবি সামনে আসার পরই মণিপুর সরকারের পক্ষে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কথা বলেছেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সঙ্গে। তিনিও দোষীদের কঠোর শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজ্যের মানুষের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়েই এই ঘটনার তদন্তের ভার সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে মণিপুর পুলিশও এই ঘটনার তদন্ত করছে। অভিযুক্তদের দ্রুত খুঁজে বের করতে এবং কোনো পরিস্থিতিতে তারা নিখোঁজ হন তার তদন্ত চলছে।
এর আগে শুক্রবার মণিপুর সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যে যাদের হাতে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে তাদের তা জমা দেওয়ার জন্য ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এই সময়সীমার পর রাজ্যজুড়ে অভিযান চালানো হবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।
মূলত সংরক্ষণ ইস্যুকে কেন্দ্র করেই ৩ মে অশান্তির সূত্রপাত মণিপুরে। রাজ্যটির মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতি সম্প্রদায়ের। তাদের বেশিরভাগই বসবাস ইম্ফল উপত্যকায়। অন্যদিকে রাজ্যটির মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ কুকি এবং নাগা সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের বসবাস বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায়।
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতিরা ‘তপসিলি উপজাতি’ (এসটি) দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সরব হয়ে আসছে। তাতে সরকারের পক্ষে সিলমোহরও পড়ে। হাইকোর্টের নির্দেশে মেইতি সম্প্রদায়কে ‘তফসিলি উপজাতি’ (এসটি) মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকারকে নির্দেশও দেয়। তারই প্রতিবাদে ৩ মে রাজ্যটির পার্বত্য জেলাগুলোতে ‘উপজাতি সংহতি মার্চ’ সংগঠিত হওয়ার পর ওইদিনই চূড়াচন্দ্রপুর টাউনে প্রথম জাতিগত সহিংসতা শুরু হয়। এরপর থেকেই গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সময় মণিপুরে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে নারীদের ওপর অত্যাচার, বিবস্ত্র করে ঘোরানো, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, বোমা ও গুলির ঘটনা ঘটছে। মণিপুরের সহিংসতায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আহত হয় প্রায় ৩ হাজার মানুষ। বাস্তুহারা প্রায় কয়েক হাজার মানুষ।