নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর এলাকায় বিএনপির পদযাত্রার প্রস্তুতির সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপির ১১৩ নেতা–কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০-৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আহসান উল্লাহ। মামলায় এজাহারনামীয় দুজন ও সন্দেহভাজন হিসেবে আরও সাতজনসহ মোট নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সোনারগাঁয়ের কাফুরদী এলাকার গাজী সুরুজ, পাকুন্ডা এলাকার মো. ইব্রাহিম, রূপগঞ্জের চনপাড়া এলাকার মো. সুমন, একই এলাকার মো. আয়নাল, রুহুল আমিন, সাজ্জাদ হোসেন, মো. মাহবুব, মো. মিন্টু ও মো. পারভেজ। তাঁদের মধ্যে সুরুজ ও ইব্রাহিমের নাম মামলার এজাহারে রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, সোনারগাঁ থানার মামলায় আসামিদের সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন করলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালত গাজী সুরুজ নামের এক আসামির এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল রোববার রাতে সোনারগাঁ থানার উপপরিদর্শক ফিরোজ আহমেদ বাদী হয়ে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে সোনারগাঁ থানায় মামলাটি করেন। মামলার এজাহারে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, আজহারুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে যুবদল নেতা খাইরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত, সোনারগাঁ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহসভাপতি সেলিম মাহমুদ, কাঞ্চন পৌরসভা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কোহিনুর আলম, সোনারগাঁ থানা যুবদলের আহ্বায়ক শহীদুর রহমানের নাম রয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, গত শনিবার সরকার পতন ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির নেতা–কর্মীরা আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে কাঁচপুর সেতুর পূর্ব পাশ অবরোধের উদ্যোগ নেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের মহাসড়কে উঠতে নিষেধ করলে বিএনপির নেতা–কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। বিএনপির নেতা–কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে চারজন পুলিশ সদস্য আহত হন। দুটি গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪৮টি শটগানের গুলি, ৪৫টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ২টি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নাশকতা সৃষ্টি করে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো, ককটেল বিস্ফোরণ, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘটনার আলামত হিসেবে ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরিত ককটেলের অংশ, রড, বাঁশ, ইটের টুকরা উদ্ধারের কথা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত শনিবার বিকেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর এলাকায় পদযাত্রা কর্মসূচির জন্য জড়ো হতে থাকেন বিএনপি নেতা–কর্মীরা। এ সময় পুলিশ বিএনপির নেতা–কর্মীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁরা মহাসড়ক ছাড়তে অসম্মতি জানান। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে পুলিশ নেতা–কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। বিএনপির নেতা–কর্মীরা ইট-পাটকেল ছুড়ে পুলিশের লাঠিচার্জের জবাব দেন। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে বিএনপির অন্তত ২০ নেতা–কর্মী ও ৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। সংঘর্ষে বিএনপির তিন কর্মী গুলিবিদ্ধ হন বলেও দাবি দলটির নেতাদের।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম বলেন, কোনো প্রকার উসকানি ছাড়াই পুলিশ নেতা–কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ ও গুলি করে। বিএনপির কেউ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাননি দাবি করে তিনি। তাঁর দাবি, বিএনপির নেতা–কর্মীদের হয়রানি করতেই পুলিশ মিথ্যা এজাহার লিখেছে।