নাটোরে প্রধান অতিথির বক্তব্য শুরুর আগেই শেষ হয়েছে বিএনপির সমাবেশ। আজ শনিবার সকালে শহরের আলাইপুরে জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শুরুর পর বাঁশ হাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে অবস্থান নেওয়ায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ‘নিরাপত্তার অভাবে’ তড়িঘড়ি সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা।
এদিকে সমাবেশ শুরুর আগে আজ সকাল সোয়া সাতটার দিকে পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে। একই সময় পুলিশ বিস্ফোরিত একটি ককটেলের অংশবিশেষও উদ্ধার করে। বিএনপি নেতাদের দাবি, প্রতিপক্ষরা সমাবেশ পণ্ড করতেই সকালে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটায় এবং দুটি ককটেল ফেলে রেখে যায়। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদ বলেন, দুটি দল একই স্থানে সমাবেশের ডাক দেওয়ায় পুলিশ বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে উভয়ের সমাবেশ শেষ হয়েছে। তবে বিএনপির প্রধান অতিথি কেন বক্তব্য দেননি তা জানা নেই।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে জেলা বিএনপির ডাকা সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল আটটায়। কিন্তু সাতটা বাজার আগেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতা-কর্মীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে আলাইপুরে বিএনপি কার্যালয়ে জড়ো হতে শুরু করেন। তবে কারও মুখেই স্লোগান ছিল না। ব্যাপক পুলিশ পাহারার মধ্যেই তাঁরা কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকেন। ভেতর থেকে মাঝে মধ্যে স্লোগানের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল।
নাটোরে আবারও আওয়ামী লীগ-বিএনপি পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকায় শহরে আতঙ্ক
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে বিএনপি কর্মীরা কার্যালয়ের সামনে একটা কাঠের চৌকি রেখে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করেন। এরপর সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য কাজী গোলাম মোর্শেদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম, সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাবুল চৌধুরী, যুবদল নেতা এ হাই তালুকদার প্রমুখ।
এর মধ্যে পৌনে আটটার দিকে শহরের দিক থেকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরহাদ বিন আজিজ ও সম্পাদক শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে বিএনপির সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। তবে পুলিশ সড়কে মানবঢাল তৈরি করে বিদ্যুৎ অফিসের মোড়ে তাদের আটকে দেয়। ছাত্রলীগের নেতারা সেখানে দাঁড়িয়েই অবিরাম স্লোগান দিতে থাকেন। সেখান থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরেই তখন বিএনপি নেতারা বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বারবার পুলিশের মানবঢাল ভাঙার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর ফলে তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। আটটার কিছু পর পরই ছাত্রলীগের নেতারা দুই বস্তা সবুজ রঙের বাঁশের লাঠি নিয়ে সেখানে হাজির হন। পুলিশের উপস্থিতিতেই তাঁরা প্রত্যেকে বাঁশ হাতে বিএনপির সমাবেশের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের বাধায় তাঁরা ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা পাথর ছুড়তে শুরু করে। এ সময় প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে পাথর ছোড়া বন্ধ হয়। তবে বৃষ্টির মধ্যেই উভয় দলের নেতারা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিচ্ছিলেন।
এদিকে সকাল সাড়ে আটটায় সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান লালু সেখানে উপস্থিত হলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। ছাত্রলীগ কর্মীরা পুলিশকে ঠেলে জোর করে বিএনপির সমাবেশের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে। ‘পুলিশের অনুরোধে’ বিএনপি তাৎক্ষণিক সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করে। পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে তাঁরা দলীয় কার্যালয়ের মধ্যে ঢুকে যায়। পুলিশ কার্যালয়ের প্রধান ফটক ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকে। সকাল পৌনে ৯টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা স্লোগান বন্ধ করে সেখান থেকে সরে যান।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, ‘আমাদের সমাবেশ পণ্ড করতে আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে কিছু ছাত্রলীগকর্মী মোটরসাইকেলে করে কার্যালয়ের সামনে আসে। তাঁরা একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় এবং দুটি ককটেল ফেলে রেখে যায়।’ তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তার অভাব দেখা দেওয়ায় তাঁরা প্রধান অতিথিকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিতে পারেননি।
তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমাদের কেউ সেখানে ককটেল রেখে আসেনি। বিএনপি কর্মীরাই সন্ত্রাস করার উদ্দেশ্যে ককটেল জমা করে রেখেছিল।’
অপরদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীদের নিয়ে মিছিলসহকারে বিএনপি কার্যালয়ের পাশে রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেছে। সেখানে তাঁরা শান্তি সমাবেশ করবে।