নভেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনার মামলায় রায়ের আশা দুদক চেয়ারম্যানের

0
16
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) মধ্যে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন (পেছনে মাঝে)
দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চলমান ছয়টি মামলায় অক্টোবর বা নভেম্বরের মধ্যে রায় হতে পারে বলে আশা করছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে লেবার পার্টির আইনপ্রণেতা টিউলিপ সিদ্দিকের ফ্ল্যাট দুর্নীতি মামলাও সচল হবে বলে জানান তিনি।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক চুক্তি সই অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান।
দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রমকে আরও বেগবান ও কার্যকর করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নতুন করে পাঁচ বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। দুদকের পক্ষে মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন আর টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এতে সই করেন। অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুদকের ছয় মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি, সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে অক্টোবর কিংবা নভেম্বরের শেষ দিকে আদালতের বিবেচনায় রায় এসে যাবে।’ তিনি বলেন, হাইকোর্টের আদেশের আটকে যাওয়া গুলশানে টিউলিপ সিদ্দিকের ফ্ল্যাট জালিয়াতির মামলাও সচল হবে।
চুক্তি সইয়ের বিষয়ে আবদুল মোমেন বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে শুধু আইন প্রয়োগ যথেষ্ট নয়, সামাজিক প্রতিরোধও গড়ে তোলা জরুরি। তাঁর মতে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের যৌথ উদ্যোগ দুর্নীতি প্রতিরোধে শক্ত ভিত তৈরি করবে। এ নতুন সমঝোতা সেই প্রচেষ্টাকে আরও বেগবান করবে।
এ সময় দুর্নীতি ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এবারই প্রথম সরকার প্রতিবাদ না করে সূচকের ফল মেনে নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি সত্যের কাছাকাছি, তাই আমরা গ্রহণ করেছি।’
অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুদক যদি দুর্নীতিমুক্ত না হয়, তবে অন্য প্রতিষ্ঠানকে বলার নৈতিক অধিকার থাকে না। তাই নিজেদের ঘরে দুর্নীতি রোধে আমরা কাজ করছি এবং এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’
সংস্কার বাস্তবায়নের তথ্য না থাকা উদ্বেগের
এ সময় সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে সুস্পষ্ট হালনাগাদ তথ্য না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন টিআইবি নির্বাহী পরিচালক এবং দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত সুপারিশগুলোর মধ্যে কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাইনি। বিষয়টি উদ্বেগজনক।’
এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দুদক ও টিআইবির সহযোগিতা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াবে না, জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করবে। তারা যৌথভাবে গবেষণা, প্রশিক্ষণ, গণসচেতনতা সৃষ্টি ও নৈতিকতার চর্চা জোরদারে কাজ করব।
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমরা দুদকের ওয়াচডগ (পর্যবেক্ষক), আবার সহযোগীও। ঘাটতি চিহ্নিত করে আমরা পরামর্শ দিই এবং দুদকের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করি।’
দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান জানান, ৪৭টি সুপারিশের প্রায় সব কটিই রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নিয়েছে। কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের হাতে রয়েছে। তাঁর প্রত্যাশা, সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে দুদক একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। তবে এটা নির্ভর করে রাজনৈতিক ও আমলাতন্ত্রের ইতিবাচক সংস্কৃতির ওপর।
দুদক ও টিআইবির এ সমঝোতার আওতায় দুর্নীতি প্রতিরোধে গণসচেতনতা বাড়ানো, পদ্ধতিগত উৎকর্ষ সাধন, যৌথ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ চালানো, অধিপরামর্শ কার্যক্রম ও প্রচারাভিযানের কথা বলা হয়েছে।
২০১৫ সালের মে মাসে প্রথমবারের মতো দুদক ও টিআইবির মধ্যে দুই বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। এরপর ২০১৭ সালের জুনে দ্বিতীয় দফায় ২ বছর ৪ মাস, ২০১৯ সালের অক্টোবরে তৃতীয় দফায় তিন বছর ও ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চতুর্থ দফায় তিন বছর মেয়াদি চুক্তি হয়েছিল। এবারের পঞ্চম দফায় নতুন চুক্তিটির মেয়াদ আগামী ১ অক্টোবর শুরু হবে। শেষ হবে ২০৩০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর।
অনুষ্ঠানে দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ, সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীমসহ দুদক ও টিআইবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.