নতুন যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় ক্ষোভ, জোট সরকার ভাঙার হুমকি ইসরায়েলের দুই মন্ত্রীর

0
66
ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় বিধ্বস্ত জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরের কয়েকটি ভবন। ২১ নভেম্বর, উত্তর গাজায়, ছবি: রয়টার্স

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে জো বাইডেনের ঘোষিত পরিকল্পনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রাজি হলে তাঁর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ ও ক্ষমতাসীন জোট সরকার ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন দেশটির কট্টর ডানপন্থী দুজন মন্ত্রী।

গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন তিন পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা ঘোষণা করেন এবং ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রতি তা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। হামাস এক বিবৃতিতে এ পরিকল্পনাকে ‘ইতিবাচকভাবে’ বিবেচনা করার কথা জানিয়েছে।

ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মটরিচ ও জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গিভির বলেছেন, হামাসকে নির্মূল করার আগে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের চুক্তি সইয়ের বিরোধী তাঁরা।

তবে যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনায় নেতানিয়াহু রাজি হলে তাঁর সরকারকে সমর্থন দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিড।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিজেও হামাসের সামরিক ও গাজা শাসনের সক্ষমতার অবসান না ঘটানো এবং সব জিম্মি মুক্ত না করা পর্যন্ত কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে না যাওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন।

ইসরায়েলের পার্লামেন্টে নেতানিয়াহুর জোট সরকারের সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ক্ষমতায় থাকতে তাঁর সরকারকে বেন-গিভিরের ওটজমা ইয়েহুদিত (জিউইশ পাওয়ার) পার্টি ও স্মটরিচের রিলিজিয়াস জায়োনিজম পার্টির মতো কয়েকটি দলের সঙ্গে জোট করতে হয়েছে। পার্লামেন্টে বেন-গিভিরের দলের আসন ছয়টি ও স্মটরিচের দলের সাতটি।

ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাইডেনের তিন স্তরের ওই পরিকল্পনা কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। পরিকল্পনার আওতায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সব সদস্যকে গাজার জনবহুল এলাকাগুলো থেকে প্রত্যাহার করার কথা। পরিকল্পনার চূড়ান্ত পর্যায়ে, হামাসের হাতে জিম্মি থাকা সবার মুক্তি, বৈরিতার স্থায়ী অবসান ও গাজায় বড় ধরনের পুনর্গঠন কাজ পরিচালনা করার কথা রয়েছে।

তবে গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে অর্থমন্ত্রী স্মটরিচ বলেন, ‘প্রস্তাবিত রূপরেখা মেনে নিলে এবং হামাসকে নির্মূল না করে ও সব জিম্মিকে ফিরিয়ে না এনে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি টানা হলে নেতানিয়াহু এ সরকারের অংশ থাকবেন না।’

স্মটরিচের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেন-গিভির বলেন, ‘এ চুক্তি করার অর্থ হলো, যুদ্ধের অবসান ঘটানো এবং হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্য ছেড়ে দেওয়া। এটি একটি বেপরোয়া চুক্তি; যেখানে সন্ত্রাসকে বিজয়ী ও ইসরায়েল রাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলা হয়েছে।’ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হওয়ার চেয়ে বরং ক্ষমতাসীন জোট সরকারকে ভেঙে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রস্তাবিত রূপরেখা মেনে নিলে এবং হামাসকে নির্মূল না করে ও সব জিম্মিকে ফিরিয়ে না এনে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি টানা হলে নেতানিয়াহু এ সরকারের অংশ থাকবেন না।

—বেজালেল স্মটরিচ, ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী

ইসরায়েলের পার্লামেন্টে নেতানিয়াহুর জোট সরকারের সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ক্ষমতায় থাকতে তাঁর সরকারকে বেন-গিভিরের ওটজমা ইয়েহুদিত (জিউইশ পাওয়ার) পার্টি ও স্মটরিচের রিলিজিয়াস জায়োনিজম পার্টির মতো কয়েকটি দলের সঙ্গে জোট করতে হয়েছে। পার্লামেন্টে বেন-গিভিরের দলের আসন ছয়টি ও স্মটরিচের দলের সাতটি।

অবশ্য ইসরায়েলের অন্যতম প্রভাবশালী বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদ ইয়ার লাপিড দুই মন্ত্রীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পর দ্রুতই নেতানিয়াহু সরকারকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। পার্লামেন্টে তাঁর দল ইয়েশ আটিডের (দেয়ার ইজ আ ফিউচার) আসনসংখ্যা ২৪।

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিজেও হামাসের সামরিক ও গাজা শাসনের সক্ষমতার অবসান না ঘটানো এবং সব জিম্মি মুক্ত না করা পর্যন্ত কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে না যাওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন।

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের রূপরেখা ঘোষণা করার পরদিন গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে এ উদ্যোগের মধ্যস্থতাকারী মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবটি ‘চূড়ান্ত’ করতে ইসরায়েল ও হামাস উভয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

গাজায় সাত মাসের বেশি সময় ধরে টানা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী
গাজায় সাত মাসের বেশি সময় ধরে টানা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনীফাইল ছবি: রয়টার্স

হামাসের প্রতি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়া ও গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে বাইডেনের আহ্বানের সঙ্গে ইতিমধ্যে সুর মিলিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও। আর গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে এমন অগ্রগতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘জোরালো আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছেন।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে আশাবাদ জানিয়েছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকও। তিনি বলেন, ইসরায়েলের প্রস্তাব যুদ্ধ বন্ধে আশার আলো ও একটি সম্ভাব্য পথ দেখাচ্ছে। এ ছাড়া গাজায় রক্তপাত বন্ধে এ ‘ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবভিত্তিক’ দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় অতি ঘনবসতিপূর্ণ রাফা শহরে অভিযান না চালাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর তুমুল লড়াই শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে শুক্রবার ওই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ঘোষণা করেন বাইডেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.