
নির্বাচন প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে চায় সংবিধানের অধীনে। সেই সংবিধানে কী আছে? সেখানে আছে দলীয় আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে কি এই দেশের মানুষ বিশ্বাস করে? তারা কি বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোনো দিন একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হতে পারবে? কারণ দুই-দুইটা নির্বাচন এ দেশের মানুষ দেখেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘অর্থনীতি এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে যে এটাকে টেনে তোলা কঠিন। শুধু নিজেদের স্বার্থে, দুর্নীতির স্বার্থে, চুরি করার স্বার্থে আজকে সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ফোকা (ধ্বংস) করে দিয়েছে। সরকার সব সময় বলে, তারা নাকি অনেক উন্নয়ন করেছে। এই উন্নয়ন কার জন্য? এই উন্নয়ন গুটিকয় মানুষের জন্য। ঢাকাতে তারা পাতালরেল করছে, মেট্রোরেল করছে। কত টাকা খরচ করেছে? যা খরচ হওয়ার কথা, তার তিন গুণ-চার গুণ খরচ করেছে। পদ্মা সেতু করে খুব বাহবা নেয়। সেই পদ্মা সেতুর ১০ হাজার কোটি টাকা ছিল বাজেট। এর প্রকল্প যেটা আমাদের সময়ে করা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার, সেটা আজকে ৩০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘প্রকাশ্যে দিনের বেলায় চড়থাপ্পড় মেরে ১১ কোটি টাকা নিয়ে চলে যায়। পরে আবার ওরাই খুঁজে পায়। তার মধ্যে ২ কোটি টাকা পাওয়া যায় না। এমন খারাপ হয়েছে, আমাদের মা-বোনদেরও নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাঁরা নিরাপদ বোধ করেন না এই দেশে।’

ভারতের আদানি গোষ্ঠীর থেকে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়ে সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা বিদ্যুৎ সেক্টরকে বেছে নিয়েছে টাকা আয় করার জন্য, চুরি করার জন্য। আদানির নাম শুনেছেন, ভারতের একটা বিশাল কোম্পানি। তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে, সেই চুক্তিতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা আমাদের লোকসান হবে। এখানে অন্যান্য দেশ থেকে যে দামে কয়লা পাওয়া যায়, এর থেকে দ্বিগুণ দামে আমাদের কয়লা কিনতে হচ্ছে। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম দাঁড়াবে ১৬ টাকার মতো, যেটা এখন ৮ টাকা দিতে হচ্ছে। এটাও আবার দুই মাসে তিনবার দাম বেড়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা জনগণের পকেট থেকে টাকা কেটে নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “বিদ্যুতের দাম এত বাড়ত না, যদি চুরি বন্ধ করা যেত”—এটা হচ্ছে বাস্তব কথা।’
চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ড ও ঢাকার দুটি স্থানে বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, ঢাকায় বিস্ফোরণ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২১ জন মারা গেছেন। কারণটা কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা গ্যাস থেকে হয়েছে। কোন গ্যাস? তিতাস গ্যাসের যে পরিত্যক্ত লাইন, সেই লাইনে গ্যাস জমতে জমতে বিস্ফোরণ হয়ে একেবারে ২১ জন লোক মারা গেল। তার কয়েক দিন আগে সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে এভাবে একটি ভবনে বিস্ফোরণে ৩ জন লোক মারা গেল। তার আগে চট্টগ্রামে অক্সিজেন ফ্যাক্টরিতে (কারখানায়) ৮ জন মারা গেল। এই প্রাণগুলোর কোনো মূল্য নেই? কাদের জন্য মানুষ মারা যাচ্ছে, তাঁদের বিচার করতে হবে। নতুবা এটা বন্ধ হবে না। ’
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকীর সভাপতিত্বে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, এনামুল হক ও তানসিনা রুশদীর লুনা, বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রমুখ। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।