চলতি বছর ভারতের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ‘কানতারা: আ লিজেন্ড চ্যাপ্টার ১’–এর নায়িকা তিনি। সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর ৯০০ কোটি রুপির বেশি আয় করেছে। সিনেমায় ঋষভ শেঠির সঙ্গে অভিনয় করে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন এক তরুণ অভিনেত্রী। তিনি রুক্মিণী বসন্ত। এবার আরও নতুন চমক নিয়ে আসছেন তিনি।
স্বপ্নের সময়
রুক্মিণী বসন্ত এখন কার্যত নিজের সেরা সময় পার করছেন। ঋষভ শেঠির ব্লকবাস্টার ‘কানতারা: আ লিজেন্ড চ্যাপ্টার ১’–এর সাফল্যের পর সামনে রয়েছে যশ অভিনীত ‘টক্সিক’ এবং এনটিআর জুনিয়রকে নিয়ে প্রশান্ত নীলের নাম ঠিক না হওয়া নতুন সিনেমা। এই অভিনেত্রীর কাজ বাছাইয়ের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট—নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, সক্রিয় ভূমিকার নারী চরিত্রই তাঁর পছন্দ।
রয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্ট (রাডা) থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া রুক্মিণী বসন্ত ২০২৩ সালে সমালোচকদের প্রশংসিত ‘সপ্ত সাগরদাচে এলো’ সিনেমায় রক্ষিত শেঠির বিপরীতে অভিনয়ের মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পান।
ভ্যারাইটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ঋষভ শেঠির পুরাণনির্ভর প্রিকুয়েলে কঙ্কাবতী চরিত্রে তাঁর অভিনয় শুরু থেকেই খুব পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছিল।

‘কানতারা’য় স্বপ্ন পূরণ
২০২২ সালের অপ্রত্যাশিত সাফল্য পাওয়া ‘কানতারা’ সিনেমার ঘটনার বহু শতাব্দী আগে সেট করা ‘কানতারা: আ লিজেন্ড চ্যাপ্টার ১’–এ পবিত্র বনভূমিকে ঘিরে দ্বন্দ্বের গল্প বলা হয়েছে। রুক্মিণীর চরিত্রের ভেতরে লুকিয়ে থাকে কিছু গোপন আকাঙ্ক্ষা, যা শেষ পর্যন্ত পুরো গল্পের গতিপথ নির্ধারণ করে। ঋষভ শেঠি ও তাঁর লেখকের দল অনিরুদ্ধ মহেশ ও শনিল গুরুর সঙ্গে প্রথম বৈঠক থেকেই তাঁর চরিত্রটি নিয়ে কথা বলেছেন অভিনেত্রী।
রুক্মিণী বলেন, ‘প্রথমবার স্যার (ঋষভ শেঠি) যখন আমাকে পুরো গল্প শোনান, তখনই তিনি পরিষ্কার করে বলেন, এই গল্পের মোড় ঘুরবে এই মেয়েটির আচমকা পরিবর্তন আর জমি দখলের গভীর আকাঙ্ক্ষার কারণে, যা সে একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রকাশ করে না। এটা শুরু থেকেই পরিকল্পিত ছিল। প্রথম মিটিং থেকেই আমি বিষয়টা জানতাম।’
প্রথম ‘কানতারা’ সিনেমার বিপুল সাফল্যের কারণে দায়িত্বটা যে ভয় ধরানোর মতো ছিল, তা স্বীকার করেন রুক্মিণী। তবে প্রিকুয়েলের আলাদা সময় ও ভিজ্যুয়ালের জগৎ দর্শকদের প্রত্যাশাকেও ভিন্নভাবে গড়ে তুলেছিল।

রুক্মিণী বলেন, ‘ছবির টিম যে উপকরণগুলো আগে প্রকাশ করেছিল, তাতে দর্শকেরা মোটামুটি প্রস্তুত ছিলেন যে আমরা একেবারে আলাদা এক জগতে যাচ্ছি। এটা আগের ছবির নব্বইয়ের দশকের কুন্দাপুরা নয়। একেবারে ভিন্ন এক সময় ও পরিবেশ। এ বিষয়টা আমাকে সাহায্য করেছে। কারণ, কেউ আমার কাছ থেকে নির্দিষ্ট কোনো চরিত্র প্রত্যাশা করছিল না।’
অনেক কিছু শিখেছেন
লন্ডনে অভিনয় শিক্ষার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রুক্মিণী বলেন, এত বড় ক্যানভাসের ছবিতে অভিনয়ের মাত্রা ঠিক রাখা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। ‘সপ্ত সাগরদাচে এলো’ সিনেমার সংযত ও নীরবতানির্ভর অভিনয়ের সঙ্গে এর পার্থক্য ছিল স্পষ্ট।
রুক্মিণী ব্যাখ্যা করেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা শিখেছি, তা হলো কোন ধরনের অভিনয় কোথায় মানানসই। “কানতারা”র জগতে খুব সংযত অভিনয় অনেক সময় এতটাই সূক্ষ্ম হয়ে যায় যে তা চোখে পড়ে না। কারণ, ক্যানভাস এত বড় যে সেই মাত্রায় পৌঁছাতে হয়।’
একটি উদাহরণ দিয়ে রুক্মিণী বিষয়টি বোঝান, ‘এটা অনেকটা কথা বলার মতো। শান্ত বসার ঘরে আপনি ফিসফিস করে কথা বলতে পারেন। কিন্তু যদি ট্রেনে থাকেন, তখন একটু জোরে বলতে হয়।’

পারিবারিক শৃঙ্খলা
শৃঙ্খলার বিষয়ে রুক্মিণী নিজের পারিবারিক পটভূমির কথাও উল্লেখ করেন। তাঁর বাবা সেনাবাহিনীতে ছিলেন, মা একজন নৃত্যশিল্পী। তবে অভিনয় বিদ্যালয়েই তিনি প্রস্তুতি ও নিয়মিত চর্চার গুরুত্ব সবচেয়ে ভালোভাবে বুঝেছেন বলে জানান।
‘শৃঙ্খলা ও প্রস্তুতি আপনাকে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের কাজটা ঠিকভাবে করার শক্তি দেয়। ভালো অভিনয়ের জন্য আলাদা পরিবেশ না পেলে কাজ করা যাবে না, এমন বিলাসিতা করা যায় না,’ বলেন রুক্মিণী।
তবে ‘কানতারা: আ লিজেন্ড চ্যাপ্টার ১’–এর শুটিং পরিস্থিতিও সহজ ছিল না। একটানা বৃষ্টি ও অল্প সময়ের শিডিউল—সব মিলিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
‘ক্রুদের পাহাড় বেয়ে বিশাল যন্ত্রপাতি বহন করতে দেখেছি। তখন আর বলা যায় না—আমার ভালো লাগছে না। যতটা সম্ভব ভালোভাবে কাজটা করে ফেলতেই হয়,’ বলেন রুক্মিণী।
চরিত্র বাছাই
নিজের চরিত্র বাছাই নিয়ে রুক্মিণী বলেন, তিনি বরাবরই এমন চরিত্রের দিকে ঝুঁকেছেন, যারা পরিস্থিতির চাপে থাকলেও সিদ্ধান্ত নেয়।
‘যে চরিত্র সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা ঠিক হোক বা ভুল, সেই সিদ্ধান্ত গল্পকে এগিয়ে নেয়। এ ধরনের মুহূর্তে আমি জানি কী করতে হবে। মূলত নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করা নারীদের গল্পই আমাকে টানে,’ বলেন রুক্মিণী।

আগামী দিনের চমক
আগামী দিনে রুক্মিণী বসন্তকে দেখা যাবে গীতু মোহনদাস পরিচালিত ‘টক্সিক’–এ, যেখানে তাঁর সহশিল্পী ‘কেজিএফ’ তারকা যশ। পাশাপাশি রয়েছে প্রশান্ত নীল পরিচালিত ও এনটিআর জুনিয়র অভিনীত নতুন ছবি।
‘টক্সিক’ নিয়ে রুক্মিণী বলেন, ‘এটা আমার জন্য একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা। কতটা নার্ভাস লাগছে, আবার রোমাঞ্চও আছে—দুটিই সমান। যশ স্যার ও গীতু যেভাবে কাজ করেন, স্ক্রিপ্ট নিয়ে ভাবেন ও শুটিং করেন—সব মিলিয়ে এটা আমার জন্য অনন্য অভিজ্ঞতা।’
প্রশান্ত নীল ও এনটিআর জুনিয়রের সঙ্গে কাজের প্রসঙ্গে রুক্মিণী বলেন, ‘যাঁদের কাজের ভান্ডার এত সমৃদ্ধ, তাঁদের সঙ্গে কাজ করেও যখন দেখেন, কাজের আনন্দ ও খেলার আনন্দ দুটিই আছে, সেটা সত্যিই দারুণ।’
প্রসঙ্গ প্যান–ইন্ডিয়া সিনেমা
প্যান–ইন্ডিয়া সিনেমার ধারণা নিয়েও নিজের মত দেন রুক্মিণী। তাঁর মতে, এটি মূলত ব্যবসায়িক একটি তকমা। ‘প্যান–ইন্ডিয়া সিনেমা নতুন কিছু নয়। বহু বছর ধরেই এমন চেষ্টা হয়েছে। অভিনেতারা বরাবরই একাধিক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন। এখন সেটা সফল ও লাভজনকও হচ্ছে, এটাই সৌভাগ্যের,’ বলেন রুক্মিণী।
কন্নড়, তামিল ও তেলেগু—একাধিক ভাষার ছবিতে কাজ করা রুক্মিণী বসন্ত দক্ষিণ ভারতের নতুন প্রজন্মের এমন এক অভিনেত্রী, তিনি ভাষার সীমানা পেরিয়ে সাবলীলভাবে কাজ করছেন। তবে মণি রত্নমের সঙ্গে কাজের সম্ভাবনা নিয়ে প্রকাশিত খবরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
ভ্যারাইটি অবলম্বনে


















