
ঢাকার ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নে পূর্বশত্রুতার জেরে দিনের বেলায় স্ত্রীর সামনে পিটিয়ে সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল হোসেনকে (৫০) হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বেশ কয়েকজনকে চিনতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন নিহতের স্ত্রী ইয়াসমীন।
আজ শুক্রবার দুপুরে কুল্লা ইউনিয়নের মাকুলিয়া গ্রামের আকসিরনগর আবাসিক প্রকল্পের একটি ফাঁকা অংশে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে একই প্রকল্পের ভেতরের একটি পুকুর থেকে বাবুলের বাবা ইদ্রিস আলীর মরদেহ উদ্ধার করেছিল ধামরাই থানা-পুলিশ।
নিহতের স্ত্রী ইয়াসমীন বলেন, ‘আমার চোখের সামনে ওরা আমার জামাইরে (বাবুল) মারছে। চকের ভেতর (বিস্তীর্ণ ফসলি জমি) আমার জামাই (বাবুল) হোন্ডা দিয়া সরিষার মলন (মাড়াই) দিছে। চকের ভেতরে ৫-৬ জন টেঁটা, হাতুড়ি, লোহার পাইপ নিয়া গেছে। সবাই আমাদের পাড়ার লোক। আমার জামাই (বাবুল) তাগো জিগায়, “ও মামু কী হইছে?” কিছু না বইলা তারা একটু দূর দিয়া গিয়া ঘেরাও কইরা দুইটা চোখ তুইলা ফালাইছে, হাত-পা ভাইঙ্গা মাইরা ফালাইছে।’
ইয়াসমীন আরও বলেন, ‘যারা মারছে তাদের একজনের নাম আপসান, মনির, আরশাদ, আরশাদের ছেলেসহ আরও দুইজন ছিল। গ্রামের আকসিরনগর হাউজিংয়ের সাথে এলাকাবাসীর ঝগড়া ছিল। ওই সময় সে (বাবুল) ওই ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছিল। এখন কোনো জায়গায় তারে যাইতে দেই না। কোনো ঝামেলাও সে যাইতো না।’
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, আজ জুমার নামাজের সময় আকসিরনগর আবাসিক প্রকল্পের ভেতর শর্ষে মাড়াইয়ের কাজ করছিলেন বাবুল হোসেন। পরে সেখানে স্থানীয় পাঁচ-ছয়জন টেঁটা, হাতুড়ি, লোহার পাইপসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে বাবুলকে মারধর করেন তাঁরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাবুলের স্ত্রী ইয়াসমীন মারধরকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। মারধর শেষে হামলাকারীরা সেখান থেকে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বাবুলকে সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, আকসিরনগর আবাসিক প্রকল্পের শুরুর দিকে জমি ক্রয়, মাটি ভরাটসহ নানা কাজে মালিকপক্ষের হয়ে কাজ করতেন কুল্লা ইউনিয়নে ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য বাবুল হোসেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে জমির মালিকানা নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে আবাসন প্রকল্পটির মালিকপক্ষ। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজনের পক্ষে কাজ করেন বাবুল। সম্প্রতি তিনি আবার আবাসন প্রকল্পের মালিকপক্ষের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। এতে স্থানীয় কয়েকজন বাবুলের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।
বাবুল হোসেনের ভাইয়ের স্ত্রী মুক্তা বলেন, ‘আজকে বাবুলকে মাইরা ফেলছে। এর আগে তার বাপেরেও মাইরা পুকুরে ফালাইয়া রাখছিলো। কী কারণে মারছে আমরা কিছুই বুঝতেছি না।’
এনাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক এজাজ বলেন, বেলা সোয়া তিনটার দিকে বাবুল হোসেনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম ছিল। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত অবস্থায় পেয়েছেন।
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আকসিরনগর আবাসিক প্রকল্পে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।