ধনকুবের ফায়েদের বিরুদ্ধে ১১১ নারীকে ধর্ষণ–যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

0
5
ডায়ানা ও দোদির ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকীর এক দিন আগেই মোহাম্মদ আল-ফায়েদ মারা যান, ছবি: রয়টার্স

মিসরীয় ধনকুবের আল ফায়েদ প্রায় চার দশকে ১১১ জনের বেশি নারীকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন করে থাকতে পারেন বলে ধারণা করছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী ভুক্তভোগীর বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর।

আল ফায়েদ গত বছর ৯৪ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের যত অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কুখ্যাত যৌন নির্যাতনকারীদের একজন হতে চলেছেন তিনি। বছরের পর বছর এত অপরাধ করেও কীভাবে তিনি ছাড়া পেয়ে গেলেন, উঠেছে সেই প্রশ্নও।

ওই ঘটনায় লন্ডনের অভিজাত ডিপার্টমেন্ট স্টোর হ্যারডসের সাবেক মালিক ফায়েদের দুষ্কর্মের সহযোগী হিসেবে পাঁচ সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। তাঁদের কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি।

হ্যারডসের সাবেক মালিক ফায়েদের দুষ্কর্মের সহযোগী হিসেবে পাঁচ সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। তাঁদের কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি।

গত মাসে দ্য গার্ডিয়ান এক খবরে বলেছিল, দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু পুলিশসদস্য ফায়েদকে তাঁর নারী কর্মীদের ধর্ষণ ও নিপীড়নে সহায়তা করেছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে কম বয়সী এক তরুণীও ছিলেন, যিনি হ্যারডসের ওই মালিকের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।

আল ফায়েদের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ১১১ নারীর মধ্যে ২১ জন পুলিশের কাছে নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা জানান ২০০৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। আর ৯০ জন নারী অভিযোগ জানাতে এগিয়ে আসেন গত সেপ্টেম্বর মাসে ফায়েদের ওপর বিবিসি একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করার পর।

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, ১৯৭৭ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নে আল ফায়েদের যুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে ৫০ হাজারের বেশি পৃষ্ঠার প্রমাণ পর্যালোচনা করেছে তারা। প্রমাণের মধ্যে ভুক্তভোগীদের বিবৃতিও রয়েছে।

এদিকে তদন্তের অংশ হিসেবে ‘ডাইরেক্টরেট অব প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ডস’–এর গোয়েন্দারা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক ও বর্তমান কোনো সদস্য ফায়েদের দুষ্কর্মে সহযোগিতা করেছেন কি না, তা-ও বের করার চেষ্টা করছেন।

বব লফটাস (৮৩) হ্যারডসের একজন সাবেক নিরাপত্তা পরিচালক। সাক্ষী হিসেবে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেছিলেন, লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক একজন কমান্ডার হ্যারোডসকে সহায়তা করার বিনিময়ে বিলাসবহুল উপহার গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর এ বক্তব্যও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।

লফটাস এর আগে দাবি করেন, একজন গোয়েন্দা কনস্টেবল ফায়েদের (অনৈতিক) চাওয়া-পাওয়া পূরণ করে দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ হিসেবে নিয়মিত অর্থ নিতেন। এমনকি হ্যারডস থেকে গোপনে একটি মুঠোফোন দেওয়া হয় তাঁকে।

হ্যারডসে ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা লফটাস অসুস্থ থাকায় দ্য গার্ডিয়ান তাঁর কোনো মন্তব্য নিতে পারেনি। তবে তাঁর সহকারী হিসেবে কাজ করা ইমন কোল বলেন, লফটাসের ওই বিবৃতি সঠিক হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ছেলে দোদি ও ডায়ানার মৃত্যুর পেছনে ব্রিটিশ রাজপরিবারের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন আল ফায়েদ। প্রিন্স ফিলিপের নির্দেশে তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল তাঁর।

মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় জন্ম আল ফায়েদের। শুরুতে তিনি ঠান্ডা পানীয় বিক্রি করতেন। পরে সেলাই মেশিনের বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। প্রথমে মধ্যপ্রাচ্য ও পরে ইউরোপে তিনি আবাসন, জাহাজ, নির্মাণকাজের ব্যবসা করেন। এভাবেই তিনি নিজের ও পরিবারের ভাগ্য গড়েন।

ফায়েদের যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটেছে যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ফ্রান্সের প্যারিস ও সেন্ট ত্রোপেজ এলাকা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে। ভুক্তভোগী কয়েকজন নারীর হয়ে কাজ করা আইনজীবী ব্রুস ড্রামমন্ডের ভাষ্য, হ্যারডসের ভেতরে দুর্নীতি ও নিপীড়নের যে জাল বোনা হয়েছিল, তা ছিল অবিশ্বাস্য ও খুবই অন্ধকারের।

ভুক্তভোগী এমনই একজন নারী হ্যারডসের অন্ধকারজগতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, লন্ডনের পার্ক লেনের একটি বাসায় তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন ফায়েদ। এতে তাঁর কোনো সম্মতি ছিল না। সেটা ফায়েদকেও জানিয়েছিলেন। তবে কোনো কাজ হয়নি।

লন্ডনের মেফেয়ার এলাকার আরেক নারীও ফায়েদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। ঘটনার সময় তিনি ছিলেন একজন কিশোরী। ওই নারী বলেন, ফায়েদ একজন রাক্ষসের মতো ছিলেন। তাঁর মধ্যে কোনো নৈতিকতা ছিল না। হ্যারডসের সব কর্মী তাঁর কাছে ছিলেন ‘খেলনার’ মতো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.