দ্রব্যমূল্য নিয়ে সংসদে তোপের মুখে বাণিজ্যমন্ত্রী

0
182
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি

দ্রব্যমূল্য ও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। কোনো কোনো সংসদ সদস্য প্রশ্ন তুলেছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী নিজে ব্যবসায়ী হওয়ার কারণেই কি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সবচেয়ে ব্যর্থ মন্ত্রণালয় আখ্যা দিয়ে মন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করা হয়েছে সংসদে।

আজ সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ব্যাপক ক্ষোভ ঝাড়েন।

বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বিরোধী দলের সংসদ সদস্য (মোকাব্বির খান) যদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে রাজি হন, তাহলে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে রাজি আছেন। সবাই তাঁকে ব্যবসায়ী বলেন, কিন্তু তিনি রাজনীতি করেন ৫৬ বছর ধরে। আর ব্যবসা করেন ৪০ বছর ধরে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বড় গ্রুপগুলোকে জেল-জরিমানা করা যায়। কিন্তু তাতে হঠাৎ যে সংকট তৈরি হবে, তা সইতে কষ্ট হবে। মন্ত্রণালয় আলোচনার মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাব দেন ১০ জন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে তিনজন অনুপস্থিত ছিলেন।

ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বর্তমান সরকারের সবচেয়ে ব্যর্থ মন্ত্রণালয় হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাজারে গেলে মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এতটাই ব্যর্থ। এটিকে মানুষ সিন্ডিকেটবান্ধব মন্ত্রণালয় বলে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট জড়িত অভিযোগ করে মোকাব্বির বলেন, অনেকে সংসদে বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী এর সঙ্গে জড়িত, কিন্তু তিনি এভাবে বলতে চান না।

বাণিজ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে মোকাব্বির খান বলেন, ‘এত কিছুর পরও কেন আপনি পদত্যাগ করেন না?’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হিসেবে কি বাণিজ্যমন্ত্রীকে সিন্ডিকেট মন্ত্রণালয়ে বসিয়েছে?

মোকাব্বির খান বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী যখন বলেন, কোনো পণ্যের দাম কমবে, তার পরদিনই ওই পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তিনি প্রশ্ন রাখেন, পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও কেন পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা থেকে ৯০ টাকা হলো? আমদানি করার পরও কেন পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা?

মোকাব্বির বলেন, তিনি জানেন বাণিজ্যমন্ত্রী এসবের কোনো জবাব দেবেন না। পাশ কাটিয়ে যাবেন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, পণ্যমূল্যে কিছু ব্যবসায়ী সুযোগ নিচ্ছেন। যাঁরা এই সুযোগ নিচ্ছেন, আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী তাঁদের ধরেন না কেন, যাঁরা সিন্ডিকেট করে মূল্যবৃদ্ধি করেন। তিনি নিজে একজন ব্যবসায়ী মানুষ। তিনি তো জানেন, কোন ব্যবসায়ীরা এটা করছেন। তাহলে এই ব্যবসায়ীরা কি তাঁর ঘনিষ্ঠজন? যে কারণে তিনি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের ধরতে পারছেন না? তাহলে সেটা তাঁর প্রকাশ্যে বলা উচিত, কেন তিনি সেটা করতে পারছেন না।’

পীর ফজলু বলেন, পেঁয়াজের বাজারে দেড় হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। চিনির বাজারে প্রতিদিন ১৭ কোটি টাকা লুটছে কয়েকটি কোম্পানি। বয়লার মুরগির বাজারে দেড় মাসে হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী কিছু করতে পারছেন না।

পীর ফজলু আরও বলেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাজারে গিয়ে মানুষ কাঁদছে, তার একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট।’ মানুষও এটি বোঝে। শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দায় চাপালে হবে না। ডিমের বাজারে হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে সিন্ডিকেট। হাঁস-মুরগির ডিম  ইউক্রেন থেকে আসে না।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘গত কয়েক মাসে সারা বিশ্বে পণ্যের দাম কমলেও আমাদের দেশে তার প্রভাব পড়ছে না। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ছিল, এখন এটা মনে হয় ১০ শতাংশ। এটা বেড়েই চলছে। মূল্যস্ফীতি মানুষের আয়টা খেয়ে ফেলছে। মূল্যস্ফীতির কারণে সাবান, রুটি, মদন, কটকটি সব ছোট হয়ে আসছে। সরকারের বাজেট বাড়ছে, মানুষের বাজেট ছোট হয়ে আসছে।’

বিরোধী দলের এই সংসদ সদস্য বলেন, সরকারের বাজেট কমছে, যার কারণে চাল, ডাল, তেল, মুরগির আকার ও মাংসের টুকরা ছোট হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির একটি দুষ্টচক্রে আবদ্ধ হয়ে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এর থেকে উত্তরণে সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে।

কয়েকটি পণ্যের ২০২০ সালের সঙ্গে বর্তমান বাজারমূল্যের চিত্র তুলে ধরে শামীম হায়দার বলেন, ‘কারও আয় কী এ সময়ে বেড়েছে? সিন্ডিকেট আছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সেই সিন্ডিকেট শক্তিশালী। কিন্তু তারা কী সরকারের চেয়ে শক্তিশালী?’

সিন্ডিকেট সরকারের চেয়ে শক্তিশালী হতে পারে না মন্তব্য করে শামীম হায়দার বলেন, ‘সরকারের ভেতরে যদি সিন্ডিকেট থাকে, সেটা চিহ্নিত করতে হবে। মন্ত্রীর সুবিশাল ব্যবসা আছে। তিনি সফল ব্যবসায়ী। বিশ্বাস করি, তাঁকে কাজ করার স্বাধীনতা দেওয়া হলে তাহলে তিনি অবশ্যই এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল কী কাজ করে? এত বড় একটি মন্ত্রণালয়। এর মন্ত্রীর যদি ডায়নামিজম না থাকে, তাহলে দাম তো বাড়বেই।’

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিভিন্ন দোহায় দেওয়া হয়। কিন্তু দেশি পণ্যের দাম বাড়লে কোনো দোহায় দেওয়া যায় না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.