দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে ফ্রান্স–সৌদির উদ্যোগে সম্মেলন আজ, ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন বাড়ছে

0
21
ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে কেন্দ্র করে উত্তর গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা দক্ষিণের দিকে সরে যাচ্ছেন। ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ছবি: রয়টার্স

দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য সমর্থন জোগাড় করতে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের উদ্যোগে আজ সোমবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা সম্মেলন করতে যাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারেন। আর এমন পদক্ষেপে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।

ইসরায়েলের জাতিসংঘবিষয়ক দূত ড্যানি ড্যানন বলেছেন, তাঁর দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সোমবারের সম্মেলন বর্জন করবে। তিনি এ সম্মেলনকে ‘সার্কাস’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটি কোনো সহায়ক উদ্যোগ নয়। আমরা মনে করি, এটা আসলে সন্ত্রাসকে উসকে দেবে।’

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলে দেশটির পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে। পশ্চিম তীরের কিছু অংশ দখল করার পাশাপাশি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে বলা হয়েছে, ফ্রান্সসহ যেসব দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে, তাদের পরিণাম ভোগ করতে হবে।

আগামীকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন সামনে রেখে আজ এ সম্মেলন হতে যাচ্ছে।

ইসরায়েল ইতিমধ্যে গাজায় হামলা আর জোরদার করেছে। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন অবস্থায় দুই রাষ্ট্র সমাধানের ধারণা চিরতরে যেন হারিয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ বাড়ছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এ মাসে সাত পৃষ্ঠার একটি ঘোষণা অনুমোদন করেছে, যেখানে বলা হয়েছে ‘দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য দৃশ্যমান, সময়সীমা-নির্ধারিত এবং অপরিবর্তনীয় পদক্ষেপ’ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে ঘোষণায় হামাসের নিন্দা জানিয়ে স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনের সদস্যদের আত্মসমর্পণ ও নিরস্ত্র হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ চলতি মাসে সাত পৃষ্ঠার একটি ঘোষণাপত্র অনুমোদন করেছে। ওই ঘোষণাপত্রে দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে ‘স্পষ্ট, সময়সীমাবদ্ধ ও অপরিবর্তনযোগ্য পদক্ষেপ’ উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই ঘোষণাপত্রে হামাসের নিন্দা জানানো হয়েছে এবং তাদের আত্মসমর্পণ ও অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র তাৎক্ষণিকভাবে এ উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছে। দুই দেশই এই সম্মেলনকে ক্ষতিকর এবং দৃষ্টি আকর্ষণের কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিউইয়র্ক ঘোষণাপত্র অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কোনো অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি নয়, বরং এটি একটি পথনকশা (রোডম্যাপ)। এর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের জায়গা হলো যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ নিশ্চিত করা।’

জ্যঁ–নোয়েল আরও বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির লক্ষ্য অর্জন হওয়ার পর পরবর্তী ধাপের পরিকল্পনা করতে হবে, যা আজ সোমবারের আলোচনায় উঠবে।’

গতকাল রোববার যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল সরকার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজ সোমবার ফ্রান্স এবং আরও পাঁচটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে।

কিছু দেশ বলেছে, তারা ফিলিস্তিনকে শর্তসাপেক্ষে স্বীকৃতি দেবে। আবার কেউ কেউ বলেছে, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে এগোবে এবং তা নির্ভর করবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কতটা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে তার ওপর।

কিছু দেশ বলেছে, তারা ফিলিস্তিনকে শর্তসাপেক্ষে স্বীকৃতি দেবে। আবার কেউ কেউ বলেছে, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে এগোবে এবং তা নির্ভর করবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কতটা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে তার ওপর।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নাবিল জাবেরের ধারণা, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও তাতে কোনো বাস্তব পরিবর্তন আসবে না। কারণ, দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে রাজি করানোর জন্য কোনো দেশই ইসরায়েলকে যথেষ্ট চাপ দেবে না।

নাবিল জাবের বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ফ্রান্সের মতো যেসব দেশ এখন ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে, তারা স্বীকৃতি দিলেও আমার মনে হয় ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিশ্চিত করার মতো যথেষ্ট চাপ ইসরায়েলের ওপর পড়বে না।’

নাবিল আশা প্রকাশ করেন, ‘বড় শক্তিধর দেশগুলোর এই স্বীকৃতি যেন কূটনৈতিকভাবে এমন এক চাপের হাতিয়ার হয়ে ওঠে, যা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি ও যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে।’

ইসরায়েলের দখলে থাকা পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের আরও বেশি আশাবাদী মনে হচ্ছিল।

মোহাম্মদ আবু আল–ফাহিম বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের ঐতিহাসিক অধিকার অর্জনের পথে এটি একটি বিজয়।’

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলা নিয়ে ইসরায়েলিদের অনেকে এখনো ক্ষুব্ধ। তারা বলছে, ফিলিস্তিনিরা অতীতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অনেক সুযোগই নাকচ করেছে।

তেমনই একজন ২৫ বছর বয়সী তামারা রাভেহ। চলচ্চিত্র বিষয়ে অধ্যয়নরত তামারা অভিযোগ করেন, ‘আমরা তাদের (ফিলিস্তিনদের) প্রায় পাঁচবার শান্তির প্রস্তাব দিয়েছি। তারা যেকোনো একটিতে সম্মত হতে পারত। কিন্তু তারা কখনোই শান্তির পথ বেছে নেয়নি। তাহলে আমরা কেন এমন মানুষের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করব, যারা আমাদের মানুষকে অপহরণ, হত্যা ও ধর্ষণ করতে চায়?’

ইসরায়েলের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দেশটিতে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছে এবং ২৫১ জনকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জবাবে সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত হামলায় ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক। এ ছাড়া গাজার মানুষ অনাহারে ভুগছে এবং অধিকাংশ মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ইসরায়েল বলেছে, তারা এই পদক্ষেপের বিরোধী এবং ৮৯ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ওপর তাদের আস্থা নেই। তারা মনে করে না, চলতি বছরের শুরুতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁকে লেখা চিঠিতে আব্বাস সংস্কার ও আধুনিকীকরণের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা তিনি রাখতে পারবেন।

আব্বাস ও অনেক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা সম্মেলনে সরাসরি উপস্থিত থাকবেন না। কারণ, ইসরায়েলের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র তাঁদের ভিসা দেয়নি। আব্বাস ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অধিবেশনে অংশ নেবেন।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এ সম্মেলনের সহ-আয়োজক হলেও তিনি সশরীর সেখানে উপস্থিত থাকছেন না। তিনি সোমবারের সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হতে পারবেন বলে গত শুক্রবার সর্বসম্মতিক্রমে মত দিয়েছে সাধারণ পরিষদ।

রয়টার্স

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.