দেশে বানানো মালা, মুকুটসহ গরুর সাজের জিনিস পৌঁছেছে কলকাতায়

0
163
কোরবানির জন্য হাট থেকে পশু কেনার পর অনেক ক্রেতাই এগুলোকে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে থাকেন

পেটানো কাজের গলার বেল্ট বা মালা, পালক দিয়ে তৈরি মুকুট, ভেলভেট কাপড়ে ডলার বসিয়ে বানানো হয়েছে শাহজাদা চাদর। সাজসজ্জার এসব উপকরণ মানুষের জন্য নয়, এগুলো তৈরি হয়েছে কোরবানির পশুর সাজগোজের জন্য।

সিম্মী ইরাম খান ও ও তাঁর ছেলে সামিন জাওহার আম্বারের উদ্যোগে দেশে এসব উপকরণ বানানো হচ্ছে। এসব উপকরণ এখন প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায়ও পৌঁছে গেছে।

পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য হাট থেকে পশু কেনার পর অনেক ক্রেতাই এগুলোকে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে থাকেন। সে কথা মাথায় রেখে ২০১৬ সালে সিম্মী ইরাম খান ও তাঁর ছেলে সামিন জাওহার আম্বার মিলে পশুর সাজসজ্জার উপকরণ তৈরির উদ্যোগ নেন। এবারই প্রথম তাঁরা দেশের বাইরে কলকাতায় পণ্য পাঠিয়েছেন। তবে দেশে গরুর পায়ের চুড় এখনো সেভাবে বানানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই ব্যবসার প্রয়োজনে প্রথমবার পাকিস্তান থেকে এনে দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে তা বিক্রি করছেন।

সিম্মী ইরাম খান এবং সামিন জাওহার আম্বার বিভিন্ন জায়গার কারখানা থেকে এসব সাজসজ্জার উপকরণ বানিয়ে আনেন
সিম্মী ইরাম খান এবং সামিন জাওহার আম্বার বিভিন্ন জায়গার কারখানা থেকে এসব সাজসজ্জার উপকরণ বানিয়ে আনেন

সিম্মী ইরাম খান বলেন, দুই বছর ধরে তাঁর ছেলেই পুরো ব্যবসার দেখভাল করছেন। ছেলে কোনো কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে তিনি সহযোগিতা করেন। গত দুই বছর ঈদুল আজহার সময় পশুর সাজসজ্জার এসব উপকরণ বিক্রি করে আট থেকে নয় লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয়েছে। এবার বিক্রির পরিমাণ আর একটু বাড়বে বলে আশা করছেন তাঁরা।

শুধু মালা-মুকুট-চাদরই নয়, পেট-পিঠে জড়ানোর জন্য তৈরি হয়েছে ঝুল এবং মুখের শোভা বর্ধনের জন্য আছে মুহুরি। এসব সাজসজ্জার উপকরণে কৃত্রিম লেদার, মেটাল, ঘণ্টা, ঘুঙুর, ভেলভেট কাপড় এবং এমব্রয়ডারির পেটানো কাজ করা থাকে। এবার ১৬ ইঞ্চির ঝুল তৈরি করা হয়েছে, যার একেকটার ওজন এক কেজির বেশি।

দেশে গরুর পায়ের চুড় এখনো সেভাবে বানানো সম্ভব হচ্ছে না, তাই ব্যবসার প্রয়োজনে পাকিস্তান থেকে এনে দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে তা বিক্রি করা হচ্ছে
দেশে গরুর পায়ের চুড় এখনো সেভাবে বানানো সম্ভব হচ্ছে না, তাই ব্যবসার প্রয়োজনে পাকিস্তান থেকে এনে দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে তা বিক্রি করা হচ্ছে

সিম্মী ইরাম খান বলেন, ফেসবুকে ‘গরুর মালা’ নামের একটি পেজে তাঁরা এসব পণ্য বিক্রি করেন। এবার ঈদকে ঘিরে বিক্রি ভালো হয়েছে। কলকাতায় আলাদা করে ঝুল ৪০০ পিস, সাজসজ্জার পুরো সেট ২৭০ পিস এবং হল্টার ৩০ পিস পাঠানো হয়েছে। কলকাতার এক ব্যবসায়ী মান্ডিতে (বাংলাদেশের হাটের মতো) বিক্রির জন্য বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনেছেন। সামনের ঈদে আরও বেশি পরিমাণে পণ্য নেবেন বলে জানিয়ে রেখেছেন।

ইংরেজি মাধ্যম থেকে এ লেভেল শেষ করেছেন সামিন জাওহার আম্বার। ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনিও বলেন, এবার ঈদে অনলাইনভিত্তিক এই ব্যবসায় বেশ ভালো সাড়া পেয়েছেন।

গরুর ভিন্নধর্মী সাজসজ্জা নিয়ে কাজ করা উদ্যোক্তা এই মা ও ছেলে বললেন, কলকাতার ব্যবসায়ীদের চাহিদা আরও বেশি। কিন্তু সময়ের অভাবে তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। সব মিলে ভারতে পাঁচ লাখ রুপি মূল্যের পণ্যের অর্ডার ছিল। দেশেও গরুর সাজসজ্জার এসব উপকরণের ভালোই বাজার সৃষ্টি হয়েছে। আরও কয়েকজন উদ্যোক্তা মিলে এ নিয়ে কাজ করা শুরু করেছেন।

সিম্মী ইরাম খান এবং সামিন জাওহার আম্বার পুরান ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব সাজসজ্জার উপকরণ বানিয়ে আনেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরেও কারিগরেরা কাজ করেন। এক লাখ টাকার বেশি দামের গরুগুলোর জন্যই মূলত সাজসজ্জার উপকরণ কেনেন ক্রেতারা। তবে দেশি ছোট গরুর জন্যও কিছু উপকরণ বানান তাঁরা।

গরুর মালা পেজে গিয়ে দেখা গেল সাজসাজ রব। সাজসজ্জার উপকরণের বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি সাজগোজ করা গরুর লাইভও হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.