ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় তুচ্ছ ঘটনার জেরে হওয়া সংঘর্ষ এড়াতে স্থানীয় কামারদের দেশি অস্ত্র না বানাতে বলেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল্লাহ সরকার। একইভাবে বাঁশের অস্ত্র তৈরির জন্য কারও কাছে যাতে বাঁশ বিক্রি না করা হয়, সে ব্যাপারে বাঁশ ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দেশি অস্ত্র তৈরি বন্ধে গতকাল শনিবার স্থানীয় কামার ও বাঁশ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে এসব পরামর্শ ও নির্দেশনা দেয় নাসিরনগর থানা-পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তুচ্ছ ঘটনার জেরে দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান স্থানীয় লোকজন। গত ১৩ মার্চ নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক দরবার শরিফের মাহফিলে বসার জায়গা নিয়ে দুই যুবকের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। মাহফিল থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যায় ফান্দাউকের আতুকুড়া গ্রামে দুই পক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ালে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়। এরপর ২২ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের দিন নাসিরনগরের ভলাকুট ইউনিয়নের খাগালিয়া গ্রামের নতুন বাজার এলাকায় খাসজমির দখল নিয়ে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে জামাল মিয়া (৪৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। এরপর পুলিশ সুপারের নির্দেশে দেশি অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানে নামে থানা-পুলিশ
নাসিরনগরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু
পুলিশ জানায়, গত ১০ থেকে ১২ দিন উপজেলার ২৫টি গ্রামে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩ হাজার দেশি অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে তিনটি। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে আছে কাতরা, সড়কি, বল্লম, এককাট্টা, পল, রামদা, চাইনিজ কুড়াল, ডেকার, চাকু, লাঠি, টেঁটা, ফলা ও চল। নূরপুর, হরিপুর, নরহা, চিতনা, ধরমণ্ডল, শংকরাদহ, গোকর্ণ, কুণ্ডা, কুণ্ডা জেলেপাড়া, শ্রীঘর, চাপরতলা, ভোলাউক, উরিয়াইন, আতুকুড়া, মুকবুলপুর ও পূর্বভাগ গ্রাম থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল বেলা ১১টায় দেশি অস্ত্র তৈরি বন্ধে স্থানীয় কামার ও বাঁশ ব্যবসায়ীদের নিয়ে থানায় বৈঠক করেন ওসি হাবিবুল্লাহ সরকার। সভায় উপজেলার ৩৮ থেকে ৪০ জন কামার ও ১৬ জন বাঁশ ব্যবসায়ী উপস্থিত হন। ওসি বৈঠকে কামারদের কৃষিকাজ ও নিত্যপ্রয়োজনে ব্যবহৃত জিনিসপত্র ছাড়া রামদা, বল্লম, টেঁটাসহ সংঘর্ষে ব্যবহৃত অস্ত্র না বানানোর নির্দেশনা দেন। একইভাবে বাঁশের তৈরি অস্ত্র বানাতে কেউ বাঁশ চাইলে তাঁর কাছে বাঁশ বিক্রি করতেও নিষেধ করা হয়েছে। এ ছাড়া কেউ অস্ত্র বানানোর ফরমাশ দিলে পুলিশকে সেই তথ্য জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে বৈঠকে।
নাসিরনগরে মামা–ভাগনের সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক
নাসিরনগর থানার ওসি হাবিবুল্লাহ সরকার বলেন, ১০ থেকে ১২ দিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দেশি অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৫টি গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৩ হাজারের বেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, কামার ও বাঁশ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গতকাল সভা করেছেন। তাঁদের দেশি অস্ত্র তৈরি করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেউ দেশি অস্ত্র তৈরির ফরমাশ দিলে পুলিশকে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। যাঁদের বাড়িতে অপ্রয়োজনীয় দেশি অস্ত্র মিলবে, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নিয়মিত অভিযান চালাবে পুলিশ।