দেশজুড়ে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত

0
73
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রংপুর শহরের সুপার মার্কেট এলাকা।
বৈষম্যবিরোধ ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। আন্দোলনকারী, সরকারদলীয় সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী এবং পুলিশের সংঘর্ষে ৮ জেলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

রোববার (৪ আগস্ট) সকাল ১১টা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ শুরু করে আন্দোলনকারীরা। একই সময় প্রতিবাদ মিছিল করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সরকারদলীয় সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। মোতায়েন করা হয় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল পরিমাণ সদস্য।

বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সংঘর্ষের মাত্রা বাড়তে থাকে। এতে পাবনা, বগুড়া, বরিশাল, রংপুরসহ ৮টি জেলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক শত।

 
রংপুরে রোববার (৪ আগস্ট) সকালে শহরের সুপার মার্কেটের সামনে এ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুই যুবক নিহত হন। এ সময় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সকালে আন্দোলনকারীরা শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হন। পরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতের অনেককে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
 
বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় বেলা ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুজন মারা গেছেন। নিহত একজনের নাম মুনিরুল ইসলাম (৩৪)। তার বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার এলাকায়। মুনিরুল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অন্যজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের দুপচাঁচিয়া উপজেলার সামনে সকাল ১০টার দিকে অবস্থান নেন।সেখানে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। সেখানেই আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা নেতাকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে হামলা করে। পরে সেখানে থাকা একটি পুলিশবক্স ভাঙচুর করা হয়। উপজেলা ভূমি অফিসসহ একাধিক সরকারি স্থাপনায় হামলা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ থানার মধ্যে অবস্থান নেয়। তখন আন্দোলনকারীরা থানার গেট ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। পরে থানার মধ্যে থেকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। বাকিরা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
 
মাগুরার ঢাকা রোড এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। বেলা ১১টার দিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা আন্দোলনে অংশ নেন।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টার পর ঢাকা রোড এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বি ‍গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এছাড়া ৩ পুলিশসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মাগুরা সদর হাসপাতালসহ অন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
 
এদিকে সকালে মুন্সিগঞ্জ শহরের মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য চত্বরে বঙ্গবন্ধু সড়কে সুপার মার্কেট এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে দুজন নিহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নামপরিচয় জানা যায়নি।
 
এদিকে বরিশালে ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান টুটুল চৌধুরীকে মৃত অবস্থায় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তার কাঁধে ও মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আওয়ামী লীগের দাবি, নগরীর আমতলা-চৌমাথা এলাকায় আন্দোলনকারীরা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে তিনি মারা যান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.